প্রশাসনিক শত চাপেও থামানো যাচ্ছে না মানবপাচারকারিদের অপ তৎপরতা। উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বল্প খরচে বিনা ভিসায় মালয়েশিয়া বা অন্য দেশে যাওয়ার প্রলোভনে সমুদ্র উপকূলে জড়ো করা হচ্ছে এই মৌসুমে। চক্রের ফাঁদে পড়ে ট্রলারে ওঠা মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুকদের সাগরে উধভাস্তের মতো ঘুরিয়ে সমুদ্রের টেকনাফ-কক্সবাজারের কোনো উপকূলে নামিয়ে পালাচ্ছেন পাচারকারীরা।
কোনো ট্রলার বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার বা থাইল্যান্ড পৌঁছাতে পারলে সেখানকার পাচার চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ উপকূল থেকে তুলে নেওয়া রোহিঙ্গা কিংবা বাংলাদেশিদের। সেখানে আটকে তাদের মাধ্যমে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপণের লাখ লাখ টাকা। এভাবে নিঃস্ব হচ্ছে হত দরিদ্র পরিবারগুলো। গত দুই মাসে পাচারের শিকার অন্তত দুইশ জনকে উদ্ধার করেছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টেকনাফ-উখিয়ায় কর্মরত সদস্যরা। সবশেষ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ লম্বরীর এক বসতবাড়ি থেকে মালয়েশিয়া যেতে জড়ো করা ৩০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ, তিনজন নারী, সাতজন ছেলে শিশু আর পাঁচজন মেয়ে শিশু ছিল। তাদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যেতে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পাচার চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যান বলে জানান টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তার আগে ১৭ নভেম্বর ভোরের দিকে টেকনাফের বাহারছড়া কচ্চপিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য আটকে রাখা রোহিঙ্গাসহ ৩১ জনকে উদ্ধার করে র্যাব। এর মধ্যে ২৭ জন রোহিঙ্গা ও চারজন বাঙালি। এ ঘটনায় টেকনাফের হ্নীলার পানখালী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত অছিউর রহমানের ছেলে মো. আনোয়ার (৪৪) ও সদর ইউনিয়ন উত্তর লম্বরী ২ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত রফিকের ছেলে আতিকুর রহমানকে (৩২) আটক করা হয়।
৪ নভেম্বর ভোরে টেকনাফের সদর ইউনিয়নের লম্বরী এলাকার পর্যটন বাজার থেকে মালয়েশিয়া পাচার কালে ১২ রোহিঙ্গা উদ্ধার ও চার দালালকে আটক করা হয়। সাগর পথে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে লোকজড়ো করা হয়েছে এমন খবরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এ চার দালালকে আটক ও ১২ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে। এর আগে ১৪ অক্টোবর সকালে উখিয়ার ইনানী সৈকত থেকে ২৬ রোহিঙ্গাকে আটক করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। টেকনাফ উপকূল থেকে ট্রলারে তুলে গভীর সমুদ্রে ১০ দিন ঘুরিয়ে ‘মালয়েশিয়া বলে’ ট্রলারে থাকা শতাধিক রোহিঙ্গাকে ইনানী সৈকত উপকূলে নামিয়ে পালিয়ে যায় দালাল চক্র। এদের মধ্যে বেশিরভাগই তীরে উঠে সরে গেলেও ২৬ জন আটক হন। পরে তাদের কুতুপালং ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান উখিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ আরিফ হোসেন।
ওই সময় একজন রোহিঙ্গা জানিয়েছিলেন, টেকনাফ থেকে রাতের আঁধারে ট্রলারে যাত্রা করে মিয়ানমারের জলসীমা অতিক্রমকালে সে দেশের নৌবাহিনী বাধা দেয়। পরে মাঝি ট্রলার ঘুরিয়ে নেয় এবং সাগরে ১০ দিন এদিক সেদিক চালিয়ে ১৪ অক্টোবর ভোরে ‘মালয়েশিয়া তীরে এসেছি’ বলে সবাইকে ইনানী নামিয়ে দেন।
সূত্র গুলো বলছে, শুধু বাংলাদেশ থেকে লোকজন জড়ো করছে এমন নয়, মিয়ানমারে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদেরও দালালচক্র টাকার বিনিময়ে এদেশে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। গত ৯ অক্টোবর টেকনাফে সাগর পথে এসে মেরিন ড্রাইভ পেরিয়ে অনুপ্রবেশ কালে নারী-শিশুসহ ৩৭ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয় বলে জানান ওসি গিয়াস উদ্দিন।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডু শহরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে তারা তীরে জড়ো হয়ে ট্রলারে বাংলাদেশে চলে আসেন। এখান থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলেন দালালরা। বাংলাদেশে আনতে দালালরা তাদের কাছ থেকে জন প্রতি ১৫ হাজার টাকা নেন বলে জানান উদ্ধার রোহিঙ্গাদের কয়েকজন। এভাবে বঙ্গোপসাগর তীরের বাংলাদেশ অংশের উখিয়া-টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী, ঈদগাঁওয়ের ইসলামপুর, পোকখালী দিয়ে সুযোগ বুঝে পাচার করা হচ্ছে মানুষ।
এদিকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে সাগর পথে অবৈধভাবে মালেশিয়া যাওয়ার সময় মায়ানমার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে বেশ কিছু যুবক । এই মাসের শুরুর দিকে মায়ানমার জেল থেকে ফেরত আসা মরিচ্যাচর এলাকার যুবকরা জানান, মায়ানমার জেলে যে মানবেতর জীবন গেছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমাদের মতো ভুল যেন কেউ না করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে টেকনাফে ছয়টি শক্তিশালী সিণ্ডিকেটের ২ শতাধিক মানব পাচার কারী এ অবৈধ কাজে জড়িত। এদিকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়াতে থিমছড়ি, পূর্ব বোমাংখিল, পূর্ব জুমছড়িসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে মানবপাচারকারির কবলে পড়ে উধাও হয়েছে ১১যুবক। তারা সবাই ১৮ থেকে ২৫ বছরের। তাদেরকে বুঝানো হয়েছে মায়ানমার-থাইলেন্ড হয়ে খুব সহজেই মালেশিয়া যাওয়া যায় এবং কম খরচে মালশিয়া পৌঁছানোর আশা দিয়ে কোন রকম তাদের ফাঁদে ফেলে আয়ত্বে নিতে পারলে জিম্মি করে পরিবার থেকে হাতিয়ে নেয় জন প্রতি ৫ থেকে ৬লাখ টাকা করে । এমনই হয়েছে গ্রামের ছেলেদের সাথে । গত ২৯ (সেপ্টম্বর)মায়ানমার জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রামু উপজেলা থেকে গর্জনিয়ার ৭নং ওয়ার্ড়ের পূর্ব বোমাংখিল এলাকার মৃত আব্দু ছালামের ছেলে লোকমান হোসেন,একই এলাকার জহির আহমদের ছেলে আরমানুল ইসলামসহ ১৮জন ফেরত আসলেও আরো অনেকেই জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে জানা গেছে ।
গর্জনিয়া ২নং ওয়ার্ড়ের মরিচ্যাচর গ্রামের জাফর আলমের ছেলে রফিকুল ইসলাম, মইন্ন্যাকাটা এলাকার নজির আহমদের ছেলে রবিউল আলম, ফরিদুল আলমের ছেলে শহিদুল ইসলাম, ৪নং ওয়ার্ড়ের থিমছড়ি এলাকার আলী হোসাইন এর ছেলে তারেক মনোয়ার , মোঃ হোসন এর ছেলে মনসুর আলম, নুর আহমদের ছেলে আজগর হোসন,আমির হামজার ছেলে আজিজুর রহমান, গর্জনিয়া ২ নং ওয়ার্ড়ের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার সিরাজুল হক এর ছেলে নাজিম উদ্দিন,আমির হোসন এর ছেলে রফিকুল ইসলাম , ৩নং ওয়ার্ড়ের ঘোনাপাড়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মোঃ খোকন,৪নং ওয়ার্ড়ের আব্দু শুক্কুর এর ছেলে নজরুল ইসলাম, তারা সবাই মায়ানমারের মলয়বাং ট্যালিটং জেলখানায় আছে বলে জানা গেছে।
গর্জনিয়া ২ নং ওয়ার্ড়ের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার নাজিম উদ্দিনের বাবা সিরাজুল হক জানান, দালালের খপ্পরে পড়ে গত বছর আমার ছেলে নাজিম সাগর পথে মালেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু সাগরে মায়ানমার সেনার হাতে ধরা পড়েছে বলে জানতে পেরেছি। সরকারের কাছে অনুরোধ আমার ছেলে ভুল করলেও তাকে আইনের মাধ্যমে দেশে ফিরে আনা হউক । জানতে পেরেছি তারা অনেক কষ্টে আছে ।
গর্জনিয়া ৪নং ওয়ার্ড়ের থিমছড়ি এলাকার আলী হোসাইন জানান, তারা এখন মায়ানমার জেল খানায় আছে বলে আমাদের টেলিফোনে জানিয়েছে সরকারের কাছে অনুরোধ আমার ছেলেকে যেন আমি সুস্থ ও সুন্দর ভাবে ফেরত পেতে পারি তার ব্যবস্থা করার।
এদিকে গত ৯ জুন মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেছেন ৪৫ জন বাংলাদেশি। অন্যদিকে, সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ১৩৪ বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের শূন্য রেখার জলসীমায় আসা মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর জাহাজ ইউএমএস চিন ডুইন থেকে ৪৫ বাংলাদেশিকে নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি টাগবোট বা ছোট্ট জাহাজ। রোববার সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিটিএ এর জেটি ঘাট এসে পৌঁছে।
এর আগে ২৫ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে কারা ভোগ শেষে দেশে ফিরে ছিলেন ১৭৩ জন বাংলাদেশি সুত্র বলছে, টেকনাফের রোহিঙ্গা রবিউল আলম নামের একজন স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ব্যবস্থা করে টেকনাফ হয়ে নৌপথে মালেশিয়া যাত্রা করেছিল। এরা বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু, নারী ও পুরুষ পাচারের জন্য জোগাড় করছে। এদের মধ্যে যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা ভালো তাদের নিলামে তোলা হয়। তাদের নিলামে কিনে নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। এমন অবস্থা এখন নিত্যদিনের।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকা কক্সবাজার থেকে মানবপাচারের শিকার হয়ে ইন্দোনেশিয়াতে আছে প্রায় ১হাজার রোহিঙ্গা। এরা সকলেই ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে বলে জানা গেছে। বারবার স্থানীয়রা তাদের পাড়ে ভিড়তে বাধা দিলেও শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এর তত্ত্বাবধানে শেষ পর্যন্ত আপাতত থাকার সুযোগ মেলে এই রোহিঙ্গাদের।
মানবপাচারের শিকার হওয়ার এসব রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, কক্সবাজার থেকে দালালরা তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে নৌকায় উঠালেও পাঠিয়ে দেয়। প্রায় ২০ থেকে ২৪ দিন সাগরে ভাসে তারা। মালয়েশিয়ায় পাঠানো কথা বলে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ বাংলাদেশি টাকা নেয়া হয়েছে এই রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে।
সরেজমিন জানা যায়, মানব পাচারের জন্য ব্যবহার করা হয় টেকনাফ ও উখিয়ার ছয়টি নৌঘাট। নৌঘাট ছয়টি দিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় লোক পাচার করা হচ্ছে। মানব পাচারকারী ছয় সিন্ডিকেটের সদস্যরা হলেন- মো. হোছন প্রকাশ মাছন মাঝি (৪৫) (তার ভাই হাসেমের বাড়ি থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করেছিল), পিতা-শফিকুর রহমান, সদর ইউনিয়ন, নোয়াখালী পাড়া-কোনার পাড়া, বাহারছড়া ইউনিয়ন, টেকনাফ। তার ভাই মো. হাছন প্রকাশ আতুরী (৩৫), হাবিরছড়া, সদর ইউনিয়ন। সুলতান মাহমুদউল্লাহ (৩২), পিতা-আবদুল হামিদ, গ্রাম-হাবিরছড়া, সদর ইউনিয়ন। রশিদ মিয়া (৩২) (বর্তমান মেম্বার, মাদক ও মানব পাচারকারী), পিতা-কবির আহমদ, গ্রাম-হাবিরছড়া, সদর ইউনিয়ন।
আবদুল আমিন (৪২), পিতা-শহর মলক, গ্রাম-হাবিরছড়া, সদর ইউনিয়ন। (পাহাড়ের ভিতর অবস্থান নিয়ে মানব পাচার ও অপহরণ বাণিজ্য করে) এবং হুমায়ূন। এই ছয় সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে মানব পাচার। এরাই মানুষ নিলামে তুলছে। বিদেশে যাওয়া লোকজনকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ। শাহপরীর দ্বীপ, নম্বরী, মহেশখালিয়াপাড়া এবং বাহারছড়াসহ সাগরতীরবর্তী ছয়টি ঘাট এখন আলোচনার কেন্দ্রে। কারণ এসব ঘাট দিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাচ্ছে অনেকে। গত ৪ নভেম্বর মহেশখালীয়াপাড়ায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ মানব পাচারকারীকে আটক করে পুলিশ। তাদের জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করা হয় একজনকে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এসব ঘাটে সক্রিয় রয়েছে অন্তত ২ শতাধিক মানব পাচারকারী। টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, যারা মানব পাচার করছে তারা এখন অনেক সোচ্চার।পুলিশের তোয়াক্কা করছে না তারা।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয়রা বলেন, লম্বরী ঘাটের সাইফুল, নতুন পল¬ানপাড়ার সিরাজ মেম্বারের ছেলে আরিফ, ইয়াসিন, মাস্টার মাহবুব আলম, এনামসহ কয়েকজন মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। মানব পাচারের জন্য আলোচিত শাহপরীর দ্বীপে যে কজন সক্রিয় বলে অভিযোগ, তাদের অন্যতম আবুল কালাম ভুলু ও শাহপরীর দ্বীপ মাঝরপাড়ার জাইর হোসেনের ছেলে ছৈয়দ উল্লাহ (৪২)। টেকনাফ উপকূলের নোয়াখালীপাড়ার কাটাবনিয়া-কচুবনিয়া, শাহপরীর দ্বীপ ঘাট ‘মালয়েশিয়া এয়ারপোর্ট’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। টেকনাফের সাগর তীরবর্তী কয়েকটি এলাকার পাশাপাশি কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বেশকিছু পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা। এর মধ্যে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা, ফিশারিঘাট, নাজিরাটেক, সমিতিপাড়া; মহেশখালীর সোনাদিয়া, গোরকঘাটা, কুতুবজোম, ধলঘাটা; উখিয়ার সোনারপাড়া, রেজুরখাল, ইনানী, ছেপটখালী, মনখালী; টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, নোয়াখালীপাড়া, মহেশখালীয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, কাটাবনিয়া, খুরেরমুখ, হাদুরছড়া, জাহাজপুরা, কচ্ছপিয়া, শামলাপুর, সদরের ঈদগাঁও, খুরুশকুল, চৌফলন্ডী, পিএমখালী, চকরিয়া, পেকুয়া; চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা ও পটিয়া উলে¬খযোগ্য। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাচারকারীরা সক্রিয়।
ক্যাম্পের মো. ওসমান, আবদুল গফুর ও সাইফুল মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত বরে জানা গেছে। তারা উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা। এ ছাড়া উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা মানব পাচারকারী সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তরা হলেন- হাফেজ ছলিম, আতাত উদ্দিন, মোহাম্মদ আলম, আবদুর করিম, হাফেজ মোহাম্মদ আইয়ুব, আবদুল করিম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ কবির, আমির হোসেন, মোহাম্মদ ফয়েজ, নূর হোছন, মোহাম্মদ নাগু, নুরুল কবির, আবুল কালাম, লাল বেলাল, দিল মোহাম্মদ, মোহাম্মদ ফারুক, জোবাইর হোসেন, লালু মাঝি, আলী আকবর, ইমাম হোসেন ও শুক্কুর। মোহাম্মদ ছলিম, লম্বা কবির, মোহাম্মদ শাহর বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও এলাকায় তারা পাচারে তৎপর রয়েছে। তবে মানব পাচার ঠেকাতে নজরদারির পাশাপাশি পুরনো পাচারকারীদের সহায়তায় নতুন কোনো চক্র তৈরি হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখার কথা জানায় পুলিশ।
এলাকার সচেতন মহল জানিয়েছে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নজর এড়িয়ে বহু রোহিঙ্গা দালালের মাধ্যমে পাচার হয়ে বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। এবং তাদের পরিবারের অনেকেই এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে আছেন। এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ওখান থেকে সিগন্যাল এলে তারা এখান থেকে দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তারা।
কেকে/এআর