জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অতি দ্রুত দিতে হবে দাবি করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন,‘অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনের জন্য গ্রহনযোগ্য সংস্কার হতে হবে। কারণ ওর মাধ্যমে সরকার গঠন হবে। এরাই দেশ চালাবে, দেশের নীতি পলিসি তৈরী করবে।’
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নীলফামারীর ডোমার উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদগুলো আওয়ামী লীগের ছিল। জোর করে ভাই-ভাতিজা, শালা-সমন্ধী মিলে তারা দখল করেছে। এরা এখন পালিয়ে গেছে। মেম্বাররা পালিয়ে গেছে, চেয়ারম্যান নাই মেম্বার নাই মানুষ যাবে কেন। প্রশাসক, এতগুলো মানুষের দায়িত্ব প্রশাসক নিবে? যাদেরকে জনগণ নিজেদের প্রতিনিধি মনে করে না। পৌরসভা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে সেখানে কোন জনপ্রতিনিধি নেই। সিটি কপ্যোরেশন ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে সেখানে কোন জনপ্রতিনিধি নেই। জেলা পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, উপজেলা পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে সেখানে কোন জনপ্রতিনিধি নেই। প্রতিদিন মানুষের জনদূর্ভোগ হচ্ছে। আমাদের রাজনীতি জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানোর জন্য নয়, আমাদের রাজনীতি দুর্ভোগ কমানোর জন্য’।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতিসম্প্রতি পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে অবনতি ঘটানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় যদি বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হয়, আমাকে সাংবাদিক বন্ধুরা বলেছিলেন আপনি কি মনে করেন? আমি বলেছিলাম ইট উইয়িল বি দ্যা জেনসাইড অব ইলেকশন। একটা ইলেকশনকে একদম খতম করে দিবে। চড়ম বিশৃঙ্খলা হবে, রক্তের বন্যায় বাংলাদেশ ভেসে যাবে। আমরা এইটা চাই না, আমরা চাই সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে, দেশে আইনশৃ্খংলা ফিরিয়ে এনে জনগণকে স্বস্তির সাথে তার ভোট প্রয়োগের সুয্গে তৈরী করে দিতে হবে। গত সাড়ে ১৫ বছরে যারা নতুন ভোটার হয়েছে তাদেকে প্রত্যেককে ভোটার লিস্টে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগ যে পৌনে দুইকোটি ফল্স ভোটার তৈরী করে গেছিল এদেরকে কেটে সাফ করতে হবে। যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে, তাদেরকে বাদ দিতে হবে। এবারকার এই আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সারা দুনিয়ায় আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে তাদের প্রত্যেকের ভোট নিশ্চিৎ করতে হবে। এ কাজগুলো করেই একটা সুষ্ঠ নির্বাচনে ফিরে যেতে হবে। তবে দৈনন্দিন জীবনে মানুষকে কিছু আইনগত কিছু প্রশাসনিক সহায়তা দিতে হবে।
নির্বাচনে পেশিশক্তি ও কালো টাকার কথায় তিনি বলেন,‘বিভিন্ন আসনে যখন মনোনয়ন দেওয়া হয় তখন পেশি শক্তি আর কালো টাকার বলে ভোটকে প্রভাবিত করে অযোগ্য সন্ত্রাসীরা অনেক টাকায় তারা নির্বাচিত হয়ে আসে। সংসদের ভিতরে গিয়েছেন মহিলা, মাদেরকে আমি সন্মান করি, কারণ মায়েরা আমাদেরকে তাদের ভোটটা দান করেছেন। কিন্তু একজন মহিলা গিয়েছেন তিনি কিছুই পড়তে পারেন না, বলতে পারেন না। তার মেয়ে এক পৃষ্ঠা কাগজ লিখে দিয়ে বলেছে আম্মা তুমি এইটা বলিও- এইটা বলিও, এইটা বললে হবে। তিনি দাঁড়িয়ে কাপতেছে, ১৭ মিনিটে এক পৃষ্ঠা পড়েছেন, এক পৃষ্ঠার মধ্যে ২৮টা ভুল পড়েছেন’। একজন সংসদ সদস্যের কাজ হচ্ছে তিনি দেশের আইন রচনা করবেন। এখন বলেন এইরকম লোকেরা যদি সংসদ সদস্য হন, তারা কি দেশের ভালো আইন তৈরী করার যোগ্যতা রাখে। রাখে না বলেই তো আমরা কালো আইনের কবলে পড়ে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি’।
তিনি উল্লেখ করে বলেন,‘এদেশ আমাদের দেশ, দল মত ধর্ম নির্বিশেষে সকলের দেশ। আমরা একটা অহিংস বাংলাদেশ চাই। একটা মানবিক বাংলাদেশ চাই। একটা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই। একটা দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ চাই। আমরা বার বার বলে আসছি আমাদের এই দেশে কোন মেজরিটি মাইনোরিটি একেবারেই মানি না। এই দেশে যারাই জন্মগ্রহন করেছে তারা সবাই এই দেশের মর্যাদাবান নাগরিক। একজন মুসলমান সংবিধানের ভিত্তিতে যে অধিকার পাবে, আবার একজন হিন্দু ভাই, একজন বৌদ্ধ ভাই, একজন খ্রিস্টান ভাইকি মা বোন তারা সমান অধিকার পাবে। এই মাইনোরেটি মেজরিটি মানে দেশকে পক্ষে বিপক্ষে টুকরা টুকরা করা। এগুলা করে ৫৪ বছর যারা ফ্যাসিবাদকে পাকাপোক্ত করেছিল ওই ফ্যাসিবাদী আর কোন কর্মকান্ড বাংলাদেশে দেখতে চাই না’। তিনি উল্লেখ করে বলেন,‘নাইদার মাইনোরিটি, নর মাইরোরিটি, উই নিড ইউনিটি। আমাদের ঐক্যের বাংলাদেশ প্রয়োজন। যেই জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে, সেই জাতির মাথার ওপর কেউ কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়ার সাহস পায় না। কেউ প্রভু হয়ে সামনে আসার সাহন করে না। আমরা এমনে একটি সন্মানের বাংলাদেশ স্বাধীন বাংলাদেশ চাই’।
সমাজের ৪০ ভাগ হচ্ছে যুবক এবং যুবকদের ৬০ ভাগ বেকার উল্লেখ করে বলেন, ‘কেন তারা বেকার থাকে, তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা কারণ হলো সুশিক্ষার পরিবর্তে কুশিক্ষা। এ শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানায় না, এই শিক্ষা যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে না। এ জন্যে সার্টিফিকেটের বস্তা নিয়ে এক অফিস থেকে আরেক অফিসে দৌঁড়াতে হয়। আমরা যুব সমাজকে কথা দিচ্ছি, আল্লাহ যদি এই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব আমাদেরকে দেয়, ইনশাল্লাহ নৈতিক শিক্ষার পাশপাশি পেশাগত দক্ষ শিক্ষা তোমাদের হাতে এমভাবে তুলে দেওয়া হবে, যেদিন তোমাদের শিক্ষার পাঠ শেষ হবে সেইদিন তোমাদের হাতে যেমন সার্টিফিকেট আসবে, ঠিক তেমনিভাবে চাকরির অফার লেটারও তোমাদের হাতে চলে আসবে। আমরা একটা বেকারের হাত থাকতে দিব না’।
তিনি আরো বলেন,‘আমরা ১৮ কোটি মানুষের মাথা সোজা করে দারাবার একটা স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেই বাংলাদেশ গড়ার একটু ভালোবাসা আমরা আপনাদের কাছ থেকে চাই। একটু ভালোবাসা আপনারা দিলে, আপনাদের সাহায্য চাইবো, সমর্থন চাইবো, দোওয়া চাইবো, সাথে চাইবো, পাশে চাইবো। আমাদের লড়াই আপনাদের জন্য, নিজের জন্য, ১৮ কোটি মানুষের জন্য। ৫ তারিখের (আগস্ট) পরে আমাদের কর্মীরা বেপড়োয়া হয়ে সমাজে কোন বিশৃঙখলা সৃষ্টি করেনি। অথচ সবচাইতে মজলুম, বড় মজলুম দল হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আমরা এখানে ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েঠি, ইনশাল্লাহ দেশ গড়ার ক্ষেত্রেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবো’।
জুলাই আন্দোলনের কথায় বলেন,‘আপনারা গর্বিত উত্তরবঙ্গের মানুষ। এখন সন্তানেরা যে শ্লোগান দেয় প্রথম নামটি আপনাদের আসে আবু সাঈদ। আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। আবু সাঈদের নামটাই আগে আসে। অনেকে আবার শহিদদেরকে নিজের দলের দাবি করেন। ভাই আমরা এই কাজ করবো না। শহিদেরা জাতীয় সম্পদ, আমরা দলের ভিত্তিতে তাদেরকে ভাগ করতে চাই না। এদেরকে আমরা মাথার উপর উঠায় রাখতে চাই। আমরাই একমাত্র দল, আল্লাহর শুকরিয়া, প্রত্যেকটি শহিদ পরিবারে আমরা গিয়ে পৌঁচেছি এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমরা শহিদদেরকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। শহিদদেরকে আমরা মাথার তাজ বানিয়ে রাখতে চাই। আল্লাহ তালহা আপনাদেরকে ভালো রাখুক সুস্থ রাখুক। লড়াইয়ের ময়দানে আবারো দেখা হবে ইনশাল্লাহ। সেইসব লড়াই হবে মানুষের মুক্তির লড়াই, মানবিক বায়লাদেশ গড়ার লড়াই।
বিকাল পাঁচটার দিকে শুরু হওয়া ওই পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও অঞ্চল পরিচালক (রংপুর-দিনাজপুর) মাওলানা আব্দুল হালিম, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর খন্দকার মো. আহমাদুল হক মানিক।
কেকে/ এমএস