ডিজেএফবি টক-এ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম | ছবি: খোলা কাগজ
পতিত সরকার জ্বালানি খাতকে চুরির কারখানা বানিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে ডাকাতির বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমানতকারীদের টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। তবে আগের সরকার এখন ক্ষমতায় থাকলে কেউ এক টাকাও ব্যাংকে রাখতেন না।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত ডিজেএফবি টক-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শফিকুল আলম।
ব্যয় বহুল টানেল নির্মাণ প্রসঙ্গ প্রেস সচিব বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। সেখানে তেমন কিছু নেই। নিজের এলাকায় যাওয়ার জন্য উনি কর্ণফুলি টানেল প্রকল্প নিয়েছেন। আপনারা (সাংবাদিকরা) খোঁজ নিয়ে দেখেন। ৪৫০ কোটি টাকার হোটেল করেছেন মন্ত্রী। তিনি ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন ধরে নিয়ে এই আয়োজন করেছেন। তার বাড়ি আনোয়ারায় এই জন্য টানেল নির্মাণ করেছেন। আরও দশ বছর পরে এই টানেল হলে ভালো হতো। তখন হয়তো কর্ণফুলির ওই পাড়ে অনেক কিছু হবে। টানেল এলাকায় সাড়ে চারশ কোটি টাকায় সাত তারকা মানের হোটেল করা হয়েছে। যা অপচয়।
সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, বর্তমান সরকার যক্ষা আক্রান্ত একটি অর্থনীতি পেয়েছে। গত ছয় মাসে অর্থনীতির অনেক উন্নতি হয়েছে, যা অকল্পনীয় (মিরাকল)। বিগত সরকার সামষ্টিক অর্থনীতির সব ধরনের স্ট্যাবিলিটি ধ্বংস করে গেছেন। বিগত সরকার জ্বালানি খাতকে চুরির কারখানা বানিয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে ডাকাতির বন্দোবস্ত করেছে। রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় এই ডাকাতি হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অপ্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্প করেছে। টাকা নাই, কিন্তু ৫৬০ টি মসজিদ বানিয়েছে। প্রতি মসজিদে ১৬-১৭ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু পাড়ার মানুষ এসব মসজিদ বানালে ৩ কোটি টাকার মধ্যে নির্মাণ করতে পারতো।
“এমন রেলপথ বানিয়েছে, যেখানে দিনে একটি ট্রেন চলে। প্রকল্প খরচ ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। পছন্দের লোককে সুবিধা দেওয়ার জন্য এমন করা হয়েছে। বাংলাদেশের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার হয়েছে। দেশে থাকলে অন্তত কর্মসংস্থান হতো। কানাডায় বেগম পাড়া হয়েছে, লন্ডনে ব্লকের পর ব্লক কেন হয়েছে।”
ব্যাংক খাত নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, আমানতকারীরা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, এই বার্তা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বার বার দিচ্ছেন। আগের সরকার এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলে এখন কেউ এক টাকাও ব্যাংক রাখত না। তার মতে, গত দুই মাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমেছে। জুন মাসের মধ্যে সাত শতাংশে নেমে আসবে।এখন প্রয়োজন জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে পতিত সরকারের দুর্নীতির কারণে ট্যাক্স বাড়াতে হচ্ছে।
ডিজেএফবি টক-এ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম | ছবি: খোলা কাগজ
সরকারের নানান উদ্যোগের বিষয়ে তিনি জানান, গ্যাস সঙ্কট মেটাতে কূপ খননে জোর দিচ্ছে সরকার। এছাড়া বূমি সেবা এখন হাতের মুঠোয় পাওয়া যাবে। বিদেশে বসে নিজের জমির দলির পাবেন। এমনকি সব ধরনের জমির কাজ করতে পারবে প্রবাসীরা। আগের সরকারের সময় নাম সর্বস্ব ডিজিটাল ছিলো। সেটি রিয়েল ডিজিটালে রুপান্তর হবে বাংলাদেশে। এছাড়া বাংলাদেশ-ভুটান-নেপাল-ভারত যৌথ বিদ্যুৎ গ্রিড লাইন এর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ সামনে বাড়বে এমন আত্মবিশ্বাস আমাদের রয়েছে বলে জানান তিনি।
বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই পোর্টের দক্ষতা না বাড়লে ইনভেস্টমেন্ট বাড়বে না। রি-এক্সপোর্ট করতে গেলে চট্টগ্রামের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। এজন্য বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমরা চাই চট্টগ্রামের প্রতিটি পোর্ট উন্নয়ন করতে, তাহলে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে। এনার্জি সিস্টেমে দক্ষ না হলে কেউ বিনিয়োগ করবে না। তাই সেখানে সঠিকভাবে কর্মজজ্ঞ পরিচালনা করা হচ্ছে।
সামনের দিনে বাণিজ্য যুদ্ধে বাংলাদেশ বড় সুবিধাভোগী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ডিজেএফবির সভাপতি হামিদ-উজ- জামান এর সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মুহিব। বক্তব্য রাখেন ডিজেএফবির সহ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মফিজুল সাদিক, অর্থ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, দপ্তর সম্পাদক আলতাফ হোসেন, সদস্য জাগরন চাকমা, মোহাম্মদ জাকারিয়া কাঞ্চন প্রমুখ।