রমজান মাস মহান আল্লাহর রহমত, মাগফেরাত এবং নাজাতের মাস। এটি এমন একটি মাস, যেখানে বান্দারা তাদের পূর্বের গুনাহ থেকে মুক্তির এক অনন্য সুযোগ লাভ করে। এ মাস আত্মশুদ্ধির মাস, সংযমের মাস এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। কিন্তু যে ব্যক্তি এই পবিত্র মাসেও নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারে না, সে নিঃসন্দেহে এক দুর্ভাগা ব্যক্তি! কেন না, এমন সুযোগ আর কোনো মাসে পাওয়া সম্ভব নয়।
মহান আল্লাহর ঘোষণা করেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমার দিকে ছুটে যাও এবং সে জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর সমান, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।
—(সূরা আলে ইমরান: ১৩৩)
এ মাসে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য তিনটি বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন, যার মাধ্যমে তারা গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে। একটির পর একটি সুযোগ এসেছে, যাতে যদি প্রথমটি হাতছাড়া হয়, তবে দ্বিতীয়টি কাজে লাগানো যায়। যদি দ্বিতীয়টিও হারিয়ে যায়, তবে তৃতীয়টি দিয়ে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু যে ব্যক্তি এই তিনটিই হারায়, সে নিঃসন্দেহে হতভাগ্য এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অভিশাপপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
প্রথম সুযোগ: রোজার মাধ্যমে গুনাহ মাফ
রমজান মাসের প্রধান ইবাদত হলো রোজা পালন। যে ব্যক্তি ইমানসহ এবং সওয়াবের আশায় এই মাসের রোজা রাখে, মহান আল্লাহ তার অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। তবে শর্ত হলো, রোজাটি লোকদেখানো হওয়া যাবে না এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানসহ এবং সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’
—(সহিহ বোখারি: ৩৮)
এই মাসের রোজার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে গুনাহ থেকে মুক্তির অসাধারণ সুযোগ দিয়েছেন। তাই আমাদের উচিত যথাযথভাবে রোজা পালন করা, মুখ, কান, চোখ এবং সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহ থেকে হেফাজত করা এবং আল্লাহর দরবারে বিনীত হওয়া।
দ্বিতীয় সুযোগ: তারাবিহ ও রাতে ইবাদতের মাধ্যমে গুনাহ মাফ
অনেক সময় কোনো ওজরের কারণে কেউ কেউ রোজা রাখতে পারে না। যেমন- অসুস্থতা, হায়েজ-নেফাস, ভ্রমণ বা অন্য কোনো কারণ। তবে চিন্তার কিছু নেই! রমজানের রাতে ইবাদত করার মাধ্যমে গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়া যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানসহ এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে নামাজ (তারাবিহ) আদায় করে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’
—(সহিহ বোখারি: ৩৭)
রমজানের রাতগুলো অত্যন্ত বরকতময়। এ মাসে তারাবিহ নামাজ পড়া, তাহাজ্জুদে মগ্ন হওয়া, কোরআন তিলাওয়াত করা, আল্লাহকে স্মরণ করা—এসবই গোনাহ মোচনের অন্যতম বড় উপায়।
তৃতীয় সুযোগ: লাইলাতুল কদরের মাধ্যমে গুনাহ মাফ
রমজানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো লাইলাতুল কদর। এটি এমন একটি রাত, যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি ইমানসহ ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরের রাত জেগে ইবাদত করে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ ও সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে নামাজ আদায় করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’
—(সহিহ বোখারি: ২০১৪)
লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ রাতের বিজোড় রাতগুলোতে পাওয়া যায়। এই রাতের বিশেষ ইবাদত হলো—নফল নামাজ, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির এবং আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চাওয়া।
যারা এই তিনটিও হাতছাড়া করবে, তারা হতভাগা!
যদি কেউ রোজা না রাখে, রাতের ইবাদতেও অলসতা করে এবং লাইলাতুল কদরের বরকত থেকেও বঞ্চিত হয়, তাহলে সে নিঃসন্দেহে চরম দুর্ভাগা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষ আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো—যে ব্যক্তি রমজান পেল, কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না।’
—(মুসনাদে আহমাদ: ৭৪৫১)
কেকে/এএম