সঠিক চিকিৎসার অভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমবিবিএস পাস ছাড়াই গ্রামের সহজ-সরল রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন এক ব্যক্তি, যিনি এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত ‘স্যালাইন ডাক্তার’ নামে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নে পল্লী চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম সরকার দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদনহীনভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রোগী যেকোনো সমস্যার জন্য চেম্বারে গেলে তিনটি খাটে শুইয়ে দিয়ে শক্তিশালী স্যালাইন পুশ করেন, আদায় করেন মোটা অঙ্কের টাকা। শুধু স্যালাইনই নয়, তিনি ছোট-বড় অস্ত্রোপচারও করেন।
অনুমোদনহীনভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। বিএনপি আমলে জিয়ার সৈনিক, আর আওয়ামী লীগ আমলে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক চেয়েছিলেন। না পেয়ে আর চেয়ারম্যান হয়ে ওঠার আশা পূর্ণ হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জহিরুল ইসলাম পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক হলেও তিনি এমবিবিএস ডাক্তারের অনুমতি ছাড়াই প্রায় সকল রোগীরদের হাই অ্যান্টিবায়োটিক স্যালাইন পুশ করেন। করেন ছোটো-বড় অস্ত্রোপচারও।
রূপসদী গ্রামের এক ভুক্তভোগীর অভিভাবক সফিকুল ইসলাম বলেন, বেশি বিপদে না পড়লে তার চেম্বারে যাওয়ার সাহস করি না। সাংবাদিক এলেই তিনি পালিয়ে যান।
সমাজসেবক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, তাদের ভুল চিকিৎসা, মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের প্রেসক্রিপশনের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। অধিকাংশ বাজারে চটকদার সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে নিজেদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ উপাধি আর ‘ডিপ্লোমা, প্যারামেডিক, এলএমএএফ, ডিএইসএস, যৌন মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের মতো নাম লাগিয়ে অপচিকিৎসা বাণিজ্য চালাচ্ছেন। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জহিরুল ইসলাম বলেন, বড় ডাক্তারদের নিয়ে লিখুন, তারা বেশি ভিজিট নেয়।
তিনি দাবি করেন, আমি শুধু স্যালাইন দিই ও ছোটখাটো অপারেশন করি। আমার লাইসেন্স করা পল্লী চিকিৎসকের সার্টিফিকেটেই এগুলো অনুমোদিত আছে। আমি এমবিবিএস ডাক্তারদের চেয়ে কম নই। শুধু বড় সার্টিফিকেটটা নেই।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.রঞ্জন বর্মণ বলেন, পল্লী চিকিৎসকের কাজ হচ্ছে সর্দিকাশি, জ্বর, মাথাব্যথা বা ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা করা। জহিরুল ইসলাম রেজিস্টার্ড এমবিবিএস ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া স্যালাইন বা অপারেশন করতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে আমি শিগগির ব্যবস্থা নেবো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১২৮টি গ্রামে চিকিৎসক সংকট থাকায় এসব চিকিৎসকের ওষুধ খেয়ে রোগমুক্তি তো দূরের কথা, নানান জটিলতায় ভুগছেন হাজারো রোগীরা। তাদের ভুল চিকিৎসার কারণে রোগী মারা যাওয়া মতো ঘটনাও ঘটছে। আবার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যাচ্ছে তাই ব্যবহারের কারণে সাধারণ রোগকে আরো জটিল থেকে জটিলতর পর্যায়ে নিয়ে নিরাময়-অসম্ভব করে ফেলছেন। চেম্বার খোলার পাশাপাশি এসব পল্লী চিকিৎসক ওষুধও বিক্রি করছেন।
একাধিক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, পল্লী চিকিৎসকদের নানা গিফট ও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়, যার ফলে তারা অধিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লিখে দেন।
কেকে/এএম