শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীতে ডাকাতির ঘটনায় আরো একজন আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট আটজন ডাকাতকে আটক করা হলো। আটককৃতদের মধ্যে দুইজন গণপিটুনিতে মারা যায়। আহত পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
শনিবার (১ মার্চ) সকালে নিহত ডাকাতদের মরদেহ ও আলামত শনাক্ত করতে ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করছে ঢাকার সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট (সিএসইউ)।
এদিকে আটককৃতদের মধ্যে চার জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মুন্সিগঞ্জ জেলার বানিয়াল মহেষপুর এলাকার সানাউল্লাহ গাজির ছেলে রাকিব গাজি (৩৮), কালীর চর এলাকার বাচ্চুর ছেলে রিপন (৪০), মাদারীপুর জেলার কুতুবপুর এলাকার হারুন তালুকদারের ছেলে সজিব তালুকদার (৩০), শরীয়তপুরের জাজিরার কুন্ডেরচর এলাকার মোহাম্মদ দেওয়ানের ছেলে আনোয়ার দেওয়ান (৫০)। এর মধ্যে রিপন ও সজিব নামের দুই ডাকাতের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মাদারীপুর-শরীয়তপুর দুই জেলার সীমানায় খোয়াজপুর-টেকেরহাট বন্দরে স্পিডবোট নিয়ে ডাকাতি করার সময় স্থানীয়দের সঙ্গে ডাকাত দলের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ডাকাতদের ছোড়া গুলিতে দুই জেলায় অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে পালানোর সময় ৭ জন ডাকাতকে আটকের পর গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে মাদারীপুরের রাজারচর এলাকায় বাল্কহেডে ডাকাত দল ডাকাতির চেষ্টা করে। পরে তাদের ধাওয়া দেন স্থানীয়রা। ডাকাতরা স্পিডবোট নিয়ে পালিয়ে শরীয়তপুরের ডোমসার ইউনিয়নের তেতুলিয়া এলাকায় গেলে স্থানীয়রা তাদের গতিপথ রোধ করে বাল্কহেড দিয়ে। এ সময় ডাকাতরা হাতবোমা ও এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে আহত হয় বেশ কয়েকজন স্থানীয় লোকজন। পরে ডাকাতরা স্পিডবোট ফেলে পালানোর সময় ৭ জনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
মারধরের পর গুরুতর আহত ডাকাতদের সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে দুইজন ডাকাতকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ছাড়াও ডাকাতদের ছোরা গুলিতে চারজন আহত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
অন্যদিকে মাদারীপুর জেলায় একই ডাকাতদের গুলিতে পাঁচজন আহত হয়। তাদের মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনার পর আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের আড়িগাঁও এলাকা থেকে আরো এক ডাকাতকে আটক করা হয়। পরে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।
এ ছাড়া নিহত ডাকাতদের মরদেহ ও আলামত শনাক্ত করতে আজ সকালে ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করছে ঢাকার সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট (সিএসইউ)।
কীর্তিনাশায় গণপিটুনিতে আহত ৫ ডাকাত ঢামেকেকীর্তিনাশায় গণপিটুনিতে আহত ৫ ডাকাত ঢামেকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মুনতাসির খান বলেন, ডাকাতদের গুলিতে চারজন সাধারণ মানুষ আহত হয়ে প্রথমে হাসপাতালে আসে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে একে একে আহত অবস্থায় ৮ ডাকাতকে হাসপাতালে নিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের মধ্যে দুই ডাকাতকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় লোকজন ৮ ডাকাতকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পরে আমরা ডাকাতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ সদস্যরা। ডাকাতদের ব্যবহৃত একটি কাটা রাইফেল ও একটি শর্টগান জব্দ করা হয়েছে। শুনেছি নিহত ডাকাতদের মরদেহ ও আলামত শনাক্ত করতে ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শনে এসেছে ঢাকার সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।
এসপি বলেন, ডাকাতরা আন্ত:জেলা ডাকাত দলের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি ও হত্যা মামলা রয়েছে। আর ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
কেকে/এএম