টানা ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটটি উৎপাদনে ফিরেছে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৮মিনিটে তৃতীয় ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু করা হয়।
শীতের জীর্ণতা কাটিয়ে গরমের আভাস শুরু হতেই চাহিদা বেড়েছে বিদ্যুতের। প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। তবে বন্ধ থাকা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হওয়ায় আসন্ন রমজান ঘিরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে সৃষ্ট উৎকন্ঠা অনেকটা কমে গেছে।
এর আগে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকা ১ নম্বর ইউনিট চার দিন পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। চালু হওয়া ৩ নং ইউনিটটি ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও এখন ১৮০-২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। একই সাথে ১নং ইউনিটটি ১২৫ মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সম্পন্ন হলেও তা থেকে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। শনিবার (১ মার্চ) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুবক্কর সিদ্দিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উত্তোলনকৃত কয়লা ব্যবহার করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদুৎ উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে কয়লা মজুদ রয়েছে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিকটন। কয়লা ভিত্তিক এই কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটে মোট বিদুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১ নং ও ২ নং ইউনিট মিলে মোট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ২৫০ মেগাওয়াট এবং ৩ নম্বর ইউনিটটি ২৭৫ মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সম্পন্ন। সচল ১ নং ও ৩ নং ইউনিট থেকে প্রায় ২৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রীডে যোগ হচ্ছে। চালু থাকা এ দুটি ইউনিট থেকে বিদুৎ উৎপাদন করতে প্রতিদিন ২ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন কয়লার প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে, ২ নং ইউনিটটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ৫১ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।
এর আগে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বয়লারে লিকেজ হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে ১ নম্বর ইউনিটটিও ১৭ ফেব্রুয়ারি বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের উৎপাদন কার্যক্রম। গরমের তাপমাত্রা বাড়তেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। তার সাথে যোগ হয়েছে পবিত্র রমজান মাসের মুসল্লিদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের বাড়তি চাহিদা। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় লোডশেডিংয়ের শঙ্কায় পড়েন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
বিদুৎ কেন্দ্রটি চারদিন পুরোপুরি বন্ধ থাকার পর মেরামত শেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারী ১নং ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৮মিনিটে তৃতীয় ইউনিট থেকেও উৎপাদন শুরু করা হয়। পুরোপুরি উৎপাদনে ফেরায় রমজান ঘিরে সৃষ্ট বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আশঙ্কা কমে গেছে। স্বস্তি ফিরেছে জনমনে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুবকর সিদ্দিক নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চলমান ১২৫ মেগাওয়াটের ১ নম্বর ইউনিটে বয়লারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা ২২ ফেব্রুয়ারি চালু করা হয়েছে। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সচল ৩নং ইউনিটিও একই কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মেরামত শেষে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৮মিনিটে থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩ নং ইউনিটটি চালু করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে এই দুটি ইউনিট থেকে গড়ে ২৫০ মেগোওয়াট বিদুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রীডে যোগ হচ্ছে, এতে করে লোডশেডিং কমবে। রমজান মাসে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও শঙ্কার কিছু নেই।
কেকে/ এমএস