চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সকল ইউনিয়েনের রানী খ্যাত ভাটিয়ারীতেই প্রথম শুরু হয় পুদিনা চাষ। এই পুদিনা পাতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রপ্তানি হচ্ছে। এর প্রধান বাজার হলো মধ্যপ্রাচ্য।
সীতাকুণ্ডের সকল ইউনিয়নের রানী খ্যাত ভাটিয়ারীতেই প্রথম পুদিনা চাষ শুরু করে কৃষকরা। সীতাকুণ্ডের ৯টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার মধ্যে স্বর্ণে মোড়ানো ইউনিয়নটি হচ্ছে ভাটিয়ারী। একদিকে সাগর অপরদিকে পাহাড়। উপজেলার অর্থনৈতিক চাকা সবচাইতে বেশি সচল রাখে এই ভাটিয়ারী। কৃষি, শিল্প, ক্ষুদ্র উদ্যোগ যা কিছুই প্রথম উদ্ভাব হয় এই ভাটিয়ারী থেকে। যেমনটা হয়েছে দেশের একমাত্র ভ্রাম্যমাণ লৌহ খনিজ সম্পদ হিসেবে পরিচিত শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড তেমনি পুদিনা পাতা চাষে সফলতা আসে ভাটিয়ারীর কৃষকের হাত ধরে। এবার ভাটিয়ারীতে চাষ করা হয়েছে অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ইফতারের অন্যতম মুখরোচক সুগন্ধি পুদিনা পাতা। রোজার আগে কৃষকদের সবাই জমিতে পুদিনা চাষ করে থাকেন। রোজার প্রথম দিনে এই পুদিনা চলে যায় দেশের বিভিন্ন বাজারে।
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর কৃষকরা এখন পুদিনা পাতা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে ব্যস্ত। রমজানে রোজার ইফতারিতে তৃপ্তি মেটাতে এবার ভাটিয়ারী থেকে অর্ধকোটি টাকা মুল্যের পুদিনা বাজারে বিক্রি করা হবে বলে কৃষকদের প্রত্যাশা। বেলে-দোআঁশ মাটি পুদিনা চাষে বেশ উপযুক্ত হওয়ায় পাহাড়ের কোল ঘেষে প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে দেড়শ কৃষক পুঁদিনা পাতা চাষ করছে।
সরেজমিনে পুদিনা ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারও রমজান উপলক্ষে রোজাতে পুদিনা বাজারে বিক্রির জন্য কৃষকরা প্রচণ্ড রোদ্রের তাপ উপেক্ষা করে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরকে ক্ষেতে কাজ করতে দেখা যায়। দ্রুত বৃদ্ধি এবং উচ্চ ফলন পাওয়ার জন্য এখন আগাছা পরিষ্কার করা হচ্ছে। পাহাড় ঘেষে পতিত জমির বেলে-দোয়াশ মাটিতে মুখরোচক সুগন্ধি পুঁদিনায় ভরে গেছে ক্ষেতের পর ক্ষেত। তবে চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় পুদিনা চাহিদা পূরণ করা হয় শুধুমাত্র ভাটিয়ারীর পুদিনা দিয়ে। বেশী দামে বিক্রির আশায় এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও। রমজান মাসে রোজাদারদের ইফতারীর সামগ্রীর তৃপ্তি বাড়াতে পুদিনার বিশেষ চাহিদা রয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের নিকট।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী উপজেলার ১০ হেক্টর জমিতে দেড়শ কৃষক পুঁদিনা চাষ করে। কৃষকরা আশাতীত সাফল্য পাবে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও ভাটিয়ারীতে বাম্পার ফলন হয়েছে পুদিনার।
উপজেলার ভাটিয়ারী, কুমিরা, ছলিমপুর ও সোনাইছড়ি এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে এবং পাহাড়ের ঢালু জায়গায় এই পুঁদিনার চাষ হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিসার জানিয়েছেন। ভাটিয়ারীতে পাহাড় সংলগ্ন বেলে-দোঁআশ মাটির জমি গুলোতে ব্যাপক হারে এই সুগন্ধি পাতার চাষ হয়েছে। রমজানের পূর্ব মুহূর্তে এ এলাকার জায়গাগুলো পুদিনা পাতার কান্ড (ডাল) রোপন করা হয়েছিলো। মাটিগুলোকে হাল্কা উর্বর করে তাতে তিন আঙ্গুলের সাহায্যে পুদিনার কাণ্ড রোপন করতে হয়। প্রথম দিকে এর খরচ কম লাগে কিন্তু পরবর্তিতে এর পরিচর্যার জন্য ব্যয়টা একটু বেশি পরে। একমাসের মধ্যেই কচি পাতা ধরে এবং শাখা-প্রশাখায় বৃদ্ধি পেয়ে রোজার প্রথম দিন থেকেই এ পুদিনা পাতা খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
ভাটিয়ারীর পুদিনা চাষি আলাউদ্দিন জানান, পাঁচ গন্ডা পরিমাণ একটি জমিতে লাগানো পুঁদিনা এক লক্ষ টাকার চেয়েও বেশি বিক্রি করতে পারবেন বলে তার প্রত্যাশা। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে এর চেয়েও বেশি মূল্য পাবেন বলে তিনি জানান।
ভাটিয়ারী পূর্ব হাসনাবাদ এলাকার নাসির জানান, তাদের প্রচুর কষ্ট করে এই পুদিনা চাষ করেছেন। বাজারে বিক্রির উপযুক্ত করতে সুস্থ্য কচি পাতার জন্য ৩/৪দিন পর পর ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে হচ্ছে। প্রথম রোজাতেই তিনি প্রায় ২০ হাজার টাকার পুদিনা পাতা বিক্রি করেছে।
লেদু নামে অপর এক কৃষক জানান, পুদিনা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে বাজারে আসেনা। প্রথমে কৃষক স্থানীয় কোন খরিদ্দারের কাছে পুরো ক্ষেত বিক্রি করে দেয় পরে ঐ খরিদ্দার আরো বেশী দামে পাইকারী ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে। পরে তা ছোট ছোট মুষ্টি আকারে বাজারে বিক্রি করার জন্য বাজারে নিয়ে যায়। এক মুষ্টি ১-৫ টি পাতা পূর্ণ কান্ড থাকে। বাজারে ১০ টাকা করে এই মুষ্টি বিক্রি করা হচ্ছে। রমজানে মাসে সারা দিন রোজা রাখার পর রোজাদারদের ইফতারীতে মুখরোচক ও লোভনীয় করতে সুগন্ধী এই পুঁদিনা পাতা খাওয়া প্রচলন বাংলাদেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশী চট্টগ্রাম জেলায়। এছাড়া এই পুঁদিনা এখন মধ্যপ্রাচ্যেও রপ্তানি হচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিব উল্যাহ জানান, সরকারী ভাবে পুঁদিনা চাষের কোন প্রশিক্ষন দেয়া হয় না। তবে এ চাষে আগ্রহীদের পরামর্শ দেয়া হয়। সীতাকুণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় দেড়শ চাষী এ চাষ করে। তবে এ উপজেলায় পুদিনার চাষ রমজানে আগে শুরু করে রমজান মাসে তা বিক্রি করার উপযোগী করে তোলা হয়।
কেকে/এআর