কুমিল্লায় গোমতী নদীর দুই পাড়ে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। শীত আসার পরপরই দুই পাড়ের প্রায় ৬৪ কিলোমিটার বাঁধজুড়ে রাত-দিন ট্রাক ওঠানামা করছে। নদীর ভেতরে মাটি কাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধ, সড়ক ও সেতু, তবে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
স্থানীয় লোকজন জানান, নদীর ডান পাশের ৩২ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং বাঁ পাশের ৩১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে শত শত ট্রাক্টর ওঠানামা করছে। ট্রাক্টরে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটের ভাটা ও বসতবাড়িতে নেওয়া হচ্ছে। নদীর উৎসমুখ কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কটকবাজার থেকে বুড়িচং উপজেলার কংশনগর পর্যন্ত উভয় তীরে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি আনা-নেওয়ার কারণে গোমতীর বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাঁধের পাকা সড়কের পিচ উঠে গেছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর বাঁধের দক্ষিণ পাড়ে দুর্গাপুর, ভাটপাড়া, চানপুর মাস্টার বাড়ির সামনের এলাকায় ২০টি ট্রাক মাটি কেটে নিচ্ছে। সড়ক কেটে নদীর বাঁধের ভেতর দিয়ে এসব ট্রাক ওঠানামা করছে। নদীর উত্তর পাড়ে ছত্রখিল এলাকায় রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। পুলিশের চোখের সামনেই মাটি কাটা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছের গোড়া থেকেও মাটি কাটা হচ্ছে। চানপুর বেইলি সেতুর পশ্চিম অংশ ও বদরপুর রেলসেতুর পূর্ব অংশের মাটি কেটে নেওয়ায় দুটি সেতুই হুমকির মুখে পড়েছে।
কয়েকজন ট্রাক্চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতি ট্রাক মাটি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নদীর দুই পাড়ের ৭টি ঘাট থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে গোমতী নদীর গতিপথ। ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে গোমতী নদীর চর। যেন দেখার কেউ নেই। চোখে পড়ার মতো প্রশাসনের কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
সরেজমিন গোমতীর চর এলাকায় ঘুরে নদী তীরের অনেকের কাছে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বুড়িচংয়ের কামারখাড়া এলাকার জসিম, আমতলী এলাকার আলমগীর, দুর্গাপুরের হোসেন মেম্বার, লিটন, মিজান, জুয়েল, দিঘীরপাড়ে ইয়াকুব প্রমুখের নাম বলেন তারা। এ ছাড়া পালপাড়া, বানাসুয়া, ভাটপাড়া, কাপ্তানবাজার এলাকার মাটি খেকোদের নাম ভয়ে স্থানীয়রা বলেননি। এবং একটি মহল পাঁচথুবী ইউনিয়নের উত্তর রাছিয়া ও নিশ্চন্তপুর ফসলি জমি থেকে মাটি কাটছে ২৪ ঘণ্টা, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, রাস্তাঘাট কৃষিজমি।
একজন স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী বলেন, ‘৪০ শতক জমির মাটির বিক্রয়মূল্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা। ট্রাক্টরে করে ওই মাটি ইটভাটা ও কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় লোককে ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জনগণকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে মাটি কাটার অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। এসিল্যান্ডদের বলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে মাটি কাটা হয়, সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
কেকে/এএস