শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। ৩২০ একরের বিশাল এ ক্যাম্পাসটি যেন সারাদিন মুখরিত থাকে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। এতে নতুন করে যোগ হল বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববার (৩ নভেম্বর) দুইধাপে বরণ করে নেওয়া হয় নবীন শিক্ষার্থীদের। এদিন সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে বিজ্ঞান অনুষদগুলোর অধীন শিক্ষার্থীদের এবং দুপুর আড়াইটায় সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়।
দুই ধাপের নবীনবরণ অনুষ্ঠানের প্রথমেই কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এরপর জুলাই বিপ্লবে শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নিরাবতা পালন শেষে উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীত গায়। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য নিয়ে আসেন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আবু সাঈদ আরেফিন খান। স্বাগত বক্তব্য শেষে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি। এরপর উপস্থিত নবীন শিক্ষার্থীদের সামনে কবিতা ও সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানের দুই পর্বেই সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তহমিনা ইসলামের সঞ্চালনায় ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজা সেলিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক এএম সরওয়ার উদ্দীন চৌধুরী।
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘সকল নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছি। নিজের ও মা-বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে কাজে লাগাবে। একটি প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে শাবিতে ভর্তি হয়েছ, প্রতিযোগিতার এই ইচ্ছাকে বাঁচিয়ে রাখবে।’
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু আবাসিক ও একাডেমিক ভবনের সংকট রয়েছে। এ সংকট মোকাবিলায় আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি ক্যাম্পাস গঠন করতে চাই যে প্রতিষ্ঠানটি হবে শিক্ষা ও গবেষণা নির্ভর।
অনুষ্ঠানে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন। ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক ড. মো. এছহাক মিয়া, প্রক্টর অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি নিরোধ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাবিনা ইসলাম।
নিজের অনূভুতি ব্যক্ত করে সদ্য ভর্তি হওয়া কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রেদওয়ানুল হক মারুফ বলেন, ‘মা বাবার দোয়া আর নিজের প্রচেষ্টায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হই। পছন্দের শীর্ষে আর দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছি। এখন শাবির অগ্রগতির অংশীদার হতে চাই।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শেখ নাজিয়া রহমান বলেন, ‘সিলেটের স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় ছোট থেকেই শাবি আমার কাছে একটি আবেগী নাম। নিজের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে আমি গর্বিত। এ সফলতার পেছনে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি আমার শিক্ষক ও মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন দক্ষতার পাশাপাশি বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে সেই প্রত্যাশা করছি।’
এদিকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের আগমনে ক্যাম্পাস সেজেছে নতুন আঙ্গিকে। গোলচত্তর থেকে কেন্দ্রীয় মিলনায়তন পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে শোভা পাচ্ছে নানা রঙের পতাকা। এদিন সকাল থেকেই নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের কেউ সাথে করে নিয়ে আসে তাদের মা-বাবাকে। আয়োজক কমিটির সদস্যরাও সুযোগ করে দেয় তাদের সন্তানদের সাথে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হন অভিভাবকরা।
কেকে/এজে