জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর গুজিমারী এলাকার কৃষাণি নাছিমা খাতুনের একমাত্র আয়ের উৎস ১ বিঘা ফসলি জমি। দীর্ঘদিন ধরে একই জমিতে এক ফসল চাষের কারণে তার আর্থিক সংকট কাটেনি। এর অন্যতম কারণ চরাঞ্চলের মাটি বেলে বা বেলে-দোঁআশ প্রকৃতির হওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা ও জৈব পদার্থের পরিমাণ কম। এ ছাড়া সেচের সমস্যা, বন্যা, খরা ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবও রয়েছে।
চরাঞ্চলের মাটি, জলবায়ু ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে মাথায় রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের একদল গবেষক তিন ফসলের নতুন শস্য বিন্যাস পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন ।
এই শস্য বিন্যাস পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হলে আগাছার পরিমাণ কমে এবং মাটিতে জৈব পদার্থ ও পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে। ফলে উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে এ গবেষণার প্রতি আধা শতাংশ জমিতে ৭৬ কেজি পর্যন্ত আলু উৎপাদন হয়েছে। মালচিং ও ভার্মি কম্পোস্ট সমন্বিত ব্যবহার করা হলে বীজের অঙ্কুরোদগমের হার বেড়ে যায়। এই শস্যবিন্যাসে প্রধান ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, গাজর, কালোজিরা, মেথি, ধনিয়া ও মটরশুঁটি চাষ করা যায়। যা একক ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক। এই গবেষণাটি এখনো জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর গুজিমারী এলাকায় চলমান রয়েছে।
‘ফসলের উৎপাদনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরীক্ষণ এবং জলবায়ু সহনশীল ফসল ব্যবস্থার অভিযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চরাঞ্চলের ফসলের উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রকল্পটির প্রধান গবেষক বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ খায়রুল হাসান। সহযোগী গবেষক হিসাবে রয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও বাকৃবির পিএইচডি গবেষক পরেশ চন্দ্র দাস এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইকরামুল হক।
গবেষক পরেশ চন্দ্র দাস জানান, চরাঞ্চলের কৃষকরা সুনির্দিষ্ট শস্যবিন্যাস অনুসরণ না করে বিচ্ছিন্নভাবে ভুট্টা, মরিচ, ধনিয়া, পাট, আলু, রসুন, ও রোপা আমনসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেন। ফলে ফসলের উৎপাদন কম হয় এবং আকস্মিক বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। গবেষণার আওতায় তিন ধরনের লাভজনক শস্যবিন্যাস নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো ভুট্টা-পাট-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি। অন্যটি আলু-পাট-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি এবং আরেকটি মরিচ-চিনাবাদাম-রোপা আমন শস্যবিন্যাস পদ্ধতি।
বছর জুড়ে এক ফসলের পর অন্য ফসল চাষের মাধ্যমে এই পদ্ধতিগুলো বাস্তবায়ন করা হয়। উন্নত জাত, প্রযুক্তি ও কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবচেয়ে লাভজনক শস্যবিন্যাস চিহ্নিত করতে গবেষণা চলমান রয়েছে।
ড. আহমেদ খায়রুল হাসান জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো চরাঞ্চলে বিদ্যমান ফসল ও চাষপদ্ধতি বিশ্লেষণ করে জলবায়ু সহনশীল ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক শস্য ব্যবস্থার বিকাশ ঘটানো। পাশাপাশি খরার প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন এবং জলবায়ু-স্মার্ট উৎপাদন পদ্ধতি নির্ধারণ করা।
কেকে/এএম