চলছে বসন্ত কাল। পলাশ- শিমুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠেঘাটে, বনেবাদাড়ে, সড়কের ধারে যত্রতত্র বেড়ে ওঠা যে ফুলগুলো সহজেই মানুষের দৃষ্টি কাড়ছে তার মধ্যে একটি হলো বনজুঁই বা ভাট ফুল। এলাকা ভেদে এটি ‘ভাটি ফুলথ নামেই বেশি পরিচিত। এই ফুলকে অনেকে ঘেটু ফুল নামেও চেনে। শালিখা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ঝোপ-ঝাড়ে, জঙ্গলে, রাস্তার পাশে, এখানে-সেখানে নিজের সুন্দর রূপ ও সুবাস ছড়িয়ে মানুষকে মুগ্ধ করছে ভাটি ফুল। দেখে মনে হচ্ছে ছোট্ট সবুজ গাছে সদ্য ধানে ভাজা খৈ ফুটে আছে।
স্থানভেদে এটির নাম ভাটি ফুল, ভাটফুল, ঘেটু ফুল, ভাত ফুল, ঘণ্টাকর্ণ থাকলেও শালিখার প্রত্যন্ত এটি অঞ্চলে ‘ভাটিফুলথ নামেই পরিচিত। বনজ ভাটি ফুলের অপার সৌন্দর্য আর রুপ লাবণ্যের কারণে বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিতে ভাটি ফুল স্থান করে নিয়েছে। তাইতো প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশও পড়েছিলেন ভাটি ফুলের প্রেমে। কবি তার ‘বাংলার মুখথ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়/ বাংলার নদী মাঠ ভাঁট ফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বসন্তের আগমনে পলাশ-শিমুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ ফুল ফোঁটে। এ ফুল ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ফুটতে দেখা যায়। বিশেষ করে পরিত্যক্ত জায়গা, মাঠঘাট, বনবাদাড়, সড়ক বা রাস্তা কিংবা জলাশয়ের পাশে ভাঁটি ফুলের ঝোঁপ চোখে পড়ে। ভাটি গাছের প্রধান কান্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান। সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয় এ ফুলের গাছ। এ গাছের পাতা দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদন্ডে ফুল ফোঁটে। পাপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশ্রণ আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি ফুল ফোঁটে। এ ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। রাতে বেশ সুঘ্রাণ ছড়ায় এ ফুল। ফুল ফোঁটার পর মৌমাছিরা ভাটি ফুলের মধু সংগ্রহ করে থাকে।
ভাটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী এক প্রকার উদ্ভিদ। ভাট মিয়ানমার ও ভারতীয় প্রজাতি। ভাটি ফুল একটি ওষুধি উদ্ভিদ। এর পাতা কবিরাজরা অ্যাজমা, টিউমার, সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করেন। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা জ্বর, চর্মরোগ ও বিছার হুল ফোটানোতে এর পাতা ব্যবহার করে। এছাড়াও ফল, ফুল ও মূল কৃমি নাশক ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ফাল্গুন মাসের শুরু থেকেই দেখা মিলে এই ভাটি ফুলের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং দ্রুত নগরায়নের ফলে রাস্তাঘাটে, বনবাদাড়ে কিংবা পরিত্যক্ত জমিতে আগের মতো আর ভাটি ফুলের দেখা মেলে না।
উপজেলা সদর আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের মধু বিশ্বাস বলেন, ‘আড়পাড়া টু বুনাগাতী আন্তঃসড়কের দুপাশ দিয়ে অসংখ্য ভাটি ফুলের গাছ রয়েছে যা পথচারীর নজর কাড়ছে। অযত্ন আর অবহেলায় প্রাকৃতিকভাবে ভাটি ফুল বেড়ে উঠলেও সৌন্দর্যে কোনো কমতি নেই।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ভাটি ফুল সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষের মনের খোরাক জোগায়। ভাট ফুল তার সম্মোহনী শক্তি দিয়ে সৌন্দর্য প্রেমীদের মুগ্ধ করে। রাস্তার দুপাশে থোকায় থোকায় ফুটে থাকা ফুলের সৌন্দর্য আসা-যাওয়ার পথে পথচারীদের মুগ্ধতা ছড়ায়। প্রকৃতিতে ফাল্গুন মাস এলেই এ গাছে ফুল ফোটে। এতে পরিবেশে নতুন এক মাত্রা যোগ হয়।
কেকে/ এমএস