সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫,
২৪ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: গাজায় ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ চলছে, নিহত অর্ধশতাধিক      চমকের অপেক্ষায় বাংলাদেশ       গত ১৫ বছরে অনেক চেষ্টা হয়েছে, আমি বিএনপিকে ভাঙতে দেইনি      বাধ্যতামূলক ছুটিতে ইসলামী ব্যাংকের এমডি      বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা       সন্ধ্যায় জরুরি সভা ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা      শরীয়তপুরে আ. লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ      
মুক্তমত
রোজায় সিন্ডিকেট বন্ধ করুন
সামিন ইয়াসার
প্রকাশ: রোববার, ২ মার্চ, ২০২৫, ৯:৫০ পিএম  (ভিজিটর : ১৭১)
সামিন ইয়াসার

সামিন ইয়াসার

মুসলিম জাতি পুরো একটা বছর অপেক্ষা করে রোজার মাসের জন্য। মুসলিমরা জানে এই মাস হলো সংযমের মাস, এই মাস নিজেকে শুদ্ধ করার মাস। সহিহ বুখারী (হাদিস নং ১৮৯৯) এবং সহিহ মুসলিম (হাদিস নং ১০৭৯) উভয় হাদিসেই আছে এই মাসে রমজান মাসে শয়তানকে মহান আল্লাহতায়ালা বন্দি করে ফেলেন। বছরের এগারো মাস পৃথিবীতে শয়তান মানুষকে বিপথে অগ্রসর করতে সফল হলেও রোজার একমাস শয়তান কিছুই করতে পারে না। অর্থাৎ শয়তানের কোনো হাত নেই যদি পৃথিবীর মানুষ মন্দ কাজে লিপ্ত হয়ে যায় এই মহান পবিত্র মাসে।

শয়তান বন্দি থাকলেও আমাদের অন্তরের লুকায়িত ইবলিস কি আমরা বন্দি রাখতে পেরেছি? হয়তো পারিনি। যদি সত্যিই আমরা অভ্যন্তরীণ পশু লালন না করতাম তাহলে কেনো প্রতিবছর রমজান মাস এলেই বাজার চওড়া হয়ে যায়। এসবের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এটাই অত্যন্ত হতাশার বিষয়। প্রথম জানা দরকার রোজা এলেই কেন বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয় এবং বাজারের সিন্ডিকেটের শিকড় কোথায়। অন্যদিকে, পুরো দেশের বাজার সিন্ডিকেটের কলকাঠি কারা নাড়ছে তা যদি অনুসন্ধান করে বের করা যায় তাহলে দেশের মানুষেরা এই মহান পবিত্র রমজান মাসে হয়তো একটু স্বস্তিতে নিশ্বাস ফেলতে পারবে। কারণ, বাংলাদেশ হলো মুসলিম প্রধান দেশ। আমাদের দেশে নব্বই শতাংশের বেশি মুসলমানের বসবাস। প্রায় সব শ্রেণির মানুষেরাই এই মহান মাসে রোজা পালন করতে চায়। কিন্তু যারা দিন আনে দিন খায়; অর্থাৎ যারা জীবনের তাগিদে সারাদিন ঘরের বাইরে তাদের সময় কাটিয়ে দেয়। মাথার ঘাম পায় ফেলে খুব সামান্য পরিমাণ টাকা নিয়ে তারা তাদের সংসার টানে। সুতরাং যদি সুবিধাবাদী অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে বাজার চওড়া হয়ে যায় তাহলে বেশ বেগ পেত হয় মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর।

আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার ১৯.২ শতাংশ (মানব জমিন)। অর্থাৎ প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ মানুষই দরিদ্র। অতএব, আমাদের দেশের অবস্থা যে খুব ভালো তা খুব জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। একদিকে যেমন আমাদের দেশের টাকার মান ভালো না; অন্যদিকে, রমজান এলেই দেশে শুরু হয়ে যায় সিন্ডিকেট গেম। যেই গেমে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশের নিরীহ মানুষের সঙ্গে যেমন খেলে, এই অসহায় এবং দরিদ্র মানুষেরাও নিরুপায় হয়ে চোখের জল মাটিতে ফেলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ খুঁজে পায় না।
 
দেশের সব ব্যবসায়ী, সব মানুষ যে অসৎ অথবা মন্দ তা নয়। এমন সব মানুষও আছে- যারা পবিত্র এই মাস এলেই তারা পণ্যের দাম খানিকটা কমিয়ে দেয়। যাতে করে সবাই কিনতে পারে এবং দেশের স্বল্প আয়ের মানুষেরা যেন কোনোরকম বাধার সম্মুখীন না হয়। কেউ কেউ আছেন যারা ফেসবুক-ইউটিউব সেলিব্রেটি অথবা চলচ্চিত্র জগতের মানুষ, যারা খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে এসে বটবৃক্ষের মতো পাশে এসে দাঁড়ান, যা টেলিভিশন, পত্রিকা অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যায়। কেউ হয়তো গোপনে নিভৃতে গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান আমরা হয়তো তা টেরও পাই না। কিন্তু সবার তো এমনই হওয়া উচিত। আমাদের মাথায় একটা কথা গেঁথে রাখতে হবে- আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু আমরা যদি অসৎ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে মানুষের হৃদয়ে কষ্ট দিই, যদি গরিবের পেটে লাথি দিই তাহলে আমাদের এটার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে যে, সেই লাথি একদিন আমাদের গায়ে এসেই পড়বে। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে ‘হোয়াট গোজ অ্যারাউন্ড কামস অ্যারাউন্ড’। এর মানে হচ্ছে, ‘যা আপনি অন্যদের সঙ্গে করবেন, তা একদিন আপনাকেও ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’

বহু বছর ধরে হেঁটে আসা এই দুর্নীতির পথ ধরে। এই বাজার সিন্ডিকেট পুরো দেশে এরকম স্বাধীনভাবে প্রচলিত হওয়ার জন্য শুধুমাত্র আমরা এমন অসাধু ব্যবসায়ীদের দোষ দিতে পারব না। দোষ কিছুটা আমাদেরও আছে। আমরাই চলতে দিয়েছি সিন্ডিকেট, আমরাই ছিলাম চুপ। হয়তো অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি আমরা; তবে, কিছুই বলতে পারিনি, কিছুই পারিনি করতে। কারণ জানা আছে, প্রতিবাদ করলেই হতে হবে হুমকির মুখোমুখি। সাধারণ জনগণ চায় শান্তি, কোনোরকম বিবাদে জড়াতে রাজি নয় তারা। কিন্তু আর মুখে কাপড় বেঁধে রাখলে মোটেও চলবে না। কারণ ইতিহাস সাক্ষী আছে- চুপ করে কখনো হয়নি কোনো যুদ্ধ কিংবা বিজয়।

আমি বিশ্বাস করি, যতদিন এই পৃথিবী বেঁচে আছে ততোদিন এই ধরণীতে যতই অপকর্ম হোক, যতোই মন্দ কাজ হোক, যতোই গরিবের উপর শাসন কিংবা নির্যাতন হোক, এই বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা সৎ মানুষদের নিরাশ করবেন না। আমরা এদেশের সাধারণ জনগণ। আমাদের হাতে কিছু নেই, আমরা জানি না কীভাবে এই বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব কিংবা কাকে প্রশ্নবিদ্ধ করব। তাই আমি সসম্মানে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের নিকট অনুরোধ করব যেন, এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং বাজার সিন্ডিকেটের মূল সম্রাটকে খুঁজে বের করে যথাযথ শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। এর ফলশ্রুতিতে, কেউ আর রাষ্ট্রের মানুষের সঙ্গে এমন মন্দ কাজ করার কথা চিন্তাও করতে চাইবে না।
খুব দ্রুতই যেন এই বাজার সিন্ডিকেটের তামাশা বন্ধ হয় এবং গরিবের সাথে অবিচার যেন আর না হয় সেই কামনা করি। আমরা চাইলে সব কিছুই সম্ভব। শুধু লাগবে সৎসাহস এবং ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ। তাহলে হয়তো দেশের মানুষ ভাত পাবে কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়ে। তাই সবার ঐক্য কামনা করছি। সকলে মিলে রুখে দাঁড়ালে সামনের পথ অনেকাংশেই সহজ হবে। এবারের রমজান কাটুক সবার জন্য সুখকর হোক, স্বস্তিতে থাকুক দেশের মানুষ- এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

কেকে/এএম



মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

গাজায় ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ চলছে, নিহত অর্ধশতাধিক
গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে হাবিপ্রবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক পরিষদের ক্ষোভ ও নিন্দা
চমকের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
গত ১৫ বছরে অনেক চেষ্টা হয়েছে, আমি বিএনপিকে ভাঙতে দেইনি
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে চবির ফ্রিল্যান্সারদের ফাইভার বয়কট

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমাম গ্রেফতার
বিয়ে বাড়িতে অবরুদ্ধ বরপক্ষকে উদ্ধারে গিয়ে ওসিও অবরুদ্ধ, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে উদ্ধার
মৌলভীবাজারে ছেলে-মেয়ের হাতে বাবা খুন
মোবাইল বনাম টেলিভিশন সাংবাদিকতা
বাঞ্ছারামপু‌রে মিথ‌্যা সংবাদ প্রচা‌র করার প্রতিবা‌দে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

মুক্তমত- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close