‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’-এই ছিল জুলাই বিপ্লবের অন্যতম স্লোগান। যাকে ঘিরে দানা বেঁধেছিল জুলাই আন্দোলন। এরপর বয়ে গেছে অনেক পানি। এক সময় এ কোটা আন্দোলন রূপ নিয়েছে একদফা সরকার পতনের আন্দোলনে। অবসান হয়েছে হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের। কিন্তু দেশ থেকে কি কোটা ব্যবস্থার নিপাত হয়েছে? -এমন প্রশ্নের জবাব আসবে, না; হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার মতো ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবারের সন্তানদের সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ২০ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ গতকাল রোববার জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। আদেশ বাস্তবায়নে স্কুল ও কলেজ অধ্যক্ষদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এ অফিস আদেশে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা বা শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহত বা শহিদ পরিবারের সদস্যদের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা বা শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহত বা শহিদ পরিবারের সদস্যদের আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র বা গেজেটের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে এবং ভর্তির সময় মূল কপি প্রদর্শন করতে হবে।
আদেশে আরো বলা হয়, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা মুক্তিযোদ্ধা সনদ বা জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এ শহিদদের গেজেট যথাযথভাবে যাচাই করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা ওই আদেশে স্বাক্ষর করেছেন সরকারি মাধ্যমিক শাখার উপসচিব মোসামৎ রহিমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘সরকারি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে এতদিন বীর ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেমেয়েরা ৫ শতাংশ কোটা সুবিধা পেতেন। তবে এখন থেকে তাদের পাশাপাশি অভ্যুত্থানে আহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যরাও কোটা সুবিধা পাবেন। এ দুই ক্যাটাগরির জন্য স্কুলের মোট আসনের ৫ শতাংশ সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছিল আদেশে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাত্র কিছুদিন আগে কোটা নাকি মেধা এ নিয়ে জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হলো কিন্তু কোটা, কোটার জায়গাই রয়ে গেল। জুলাই বিপ্লবের মূল মন্ত্র ছিল বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা। বিপ্লবের মাধ্যমে যার কবর রচিত হয় এবং বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের দ্বার উন্মোচিত হয়। জুলাই বিপ্লবের পর চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার নিরসন হলেও এখনো অনেক ক্ষেত্রে তা স্বরূপে বহাল রয়েছে। প্রতিবছর পোষ্য কোটায় অসংখ্য অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ন্যূনতম যে পাশমার্ক ৪০ পাওয়ার কথা সেই পাশ মার্ক না পেয়েও ভর্তি হচ্ছে।
দেশের সরকারি-বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ এবং মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল গতকাল রোববার প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ফলাফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ২৭ জন। তবে তাদের ভর্তি আপাত স্থগিত থাকবে বলে জানা গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপকত ডা. রুবীনা ইয়াসমিন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা এবং ট্রাইবাল কোটায় উত্তীর্ণদের সনদ যাচাই হবে। আপাতত তাদের ভর্তি স্থগিত থাকবে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদেরা ‘জুলাই শহিদ’ এবং আহত ব্যক্তিরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন। ‘জুলাই শহিদ’ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা এবং মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। এ ছাড়া শহিদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। আর আহত ব্যক্তিরা তিন শ্রেণিতে আর্থিক, চিকিৎসা, পুনর্বাসনসহ অন্যান্য সুবিধা পাবেন। ৮৩৪ জন জুলাই শহিদের তালিকা গেজেটে প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের প্রতিটি পরিবার এককালীন টাকা হিসেবে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং আসন্ন অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বাকি ২০ লাখ টাকা পাবেন।
কেকে/এজে