মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এখনও সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট রয়েছে। ক্রেতারা সায়াবিন তেল নাে পেয়ে পামওয়েলসহ অস্বাস্থ্যকর তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
সোমবার (৩ মার্চ) সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল শহরের নতুন বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বোতলজাত সয়াবিন তেলের তীব্র সংকট রয়েছে। রোজার বাজার একসঙ্গে কিনতে গিয়ে অনেক ক্রেতাই তেল না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকেই এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছোটাছুটি করছেন, তবুও তেল সংগ্রহ করতে পারছেন না।
সয়াবিন তেল না পেয়ে বাধ্য হয়ে কিছু ক্রেতা পামওয়েলসহ অস্বাস্থ্যকর তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার নামমাত্র কয়েকটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও তা নির্ধারিত দামের চেয়ে ২৫-৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে না মেমো। ১ রমজান রবিবারেও বিভিন্ন দোকানে সয়াবিন তেল মিলেনি। বাজারে সয়াবিন তেলের সংকটের কারণে ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আশিকুর রহমান নামে এক ক্রেতা জানান, রমজানের শুরুর আগ থেকে এখন পর্যন্ত বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। শহরের নতুন বাজারের পারভীন স্টোর, জসিম স্টোরসহ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা দোকান খুঁজেও সয়াবিন তেল কিনতে পারিনি। পরে বাধ্য হয়ে কালিঘাট রোডের তারেক স্টোর থেকে তীর কোম্পানির ৫ লিটার তেল কিনি। কিন্তু বোতলে ৮৫২ টাকা মূল্য লেখা থাকলেও আমার কাছে থেকে ৮৮০ টাকা নেওয়া হয়েছে।
ক্রেতা এনামুল হক জানান, বাজারে সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে না। ৭টা দোকান ঘুরে একটি দোকানে ১ লিটার তেল পেয়েছি। তাও আবার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০ টাকা বেশি দিয়ে। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেলও লিটার প্রতি ২০-৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। ক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাজারে আমি গতকাল শহরের নতুন বাজারের জসিম স্টোর, ঈসমাঈল ট্রেডার্স, জ্যোতিকা এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন পাইকারি দোকানে গিয়ে তেল পাইনি। তেলের এতো সংকট এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এছাড়া পামওয়েলের দাম লিটার প্রতি ১০-১৫ টাকা বেশি।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল শহরের কিছু ব্যবসায়ী জানান, সয়াবিন তেলের সংকটের কারণে তারা তেল বিক্রি করতে পারছেন না। জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, সয়াবিন তেল কিনতে তিনি একাধিকবার ডিলার কদর আলী বাণিজ্যালয়ে গিয়েও তেল পাননি। আর তেলের সংকট তীব্র থাকায় ভোক্তাদের কাছে তিনি তেল বিক্রি করতে পারছেন না। শহরেরর আরেক ব্যবসায়ী আশরাফুজ্জামান বলেন, ডিলারদের কাছে পর্যাপ্ত তেলা না থাকায় আমরা বারবার ঘুরেও তেল কিনতে পারছি না।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তেলের ডিলার কদর আলীর বাণিজ্যালয়সহ আরও কয়েকজন ডিলারদের গেডাউনে তেল মজুদ রয়েছে। তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পাকা মেমো ছাড়া অতিরিক্তি দামে তেল বিক্রি করছেন।
এবিষয়ে কদর আলী বাণিজ্যালয়ের সত্ত্বাধিকারী মো. কদর আলী তেল মজুদের বিষয়টি অস্বীকার করে দৈনিক খোলা কাগজকে জানান, গতকাল সয়াবিন তেল ছিল, তিনি বিক্রিও করেছেন। আজ নেই, তাই বিক্রি করতে পারছেন না। তবে এখন দুই চার কার্টুন তেল আছে, এগুলো শিরনির জন্য রেখেছেন। শিরনির আয়োজনে কেউ তেল কিনতে চাইলে তিনি তাদের কাছে বিক্রি করবেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল আমিন দৈনিক খোলা কাগজকে জানান, কোনো দোকানে সয়াবিন তেল মজুদ থাকার পরও ক্রেতাদের কাছে বিক্রি না করলে অথবা নির্ধিারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযান ও জরিমানা করা হবে।
এদিকে রমজানের শুরুতেই লেবু, কলা, শশা, মাংসসহ ফলের বাজার বেশ চড়া। গত এক সপ্তাহের আগের তুলনায় কলা, লেবু, শশা তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। রোববার দুপুর সরেজমিন বাজার ঘুরে এসব চিত্র মিলে।
নিত্যপণ্যসহ বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের বিশেষ অভিযান, ভোক্তা অধিদফতর এবং উপজেলা প্রশাসনের কঠোর অভিযান অব্যাহত রাখার জোরালো দাবি তুলেছেন ভোক্তারা।
কেকে/এজে