মাগুরার শালিখায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শ্বেতশুভ্র সবুজাভ সজনে ফুল। সাথে দুই একটি সজিনা ঝুলে থাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে যোগ হয়েছে এক ভূতপূর্ব শুভ্রের বাগান। শিমুল-পলাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রকৃতি সেজে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যে। পাশেই কোকিলের কুহু কুহু ডাকে জানান দিচ্ছে প্রকৃতির বিশুদ্ধতা। শ্বেতশুভ্র পাপড়ির মাঝে গ্রামীণ নববধূর মূল্যবান অলংকার নাক ফুলের মতোই স্বর্ণালী মহামূল্যবান এক শোভা। যে সৌরভ সন্ধ্যার পর গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগের মনবৃত্তি না থাকলে সচরাচর ধরা দেয় না। আর এ কারণেই হয়তো দেশের কৃষিতে অপ্রচলিত সবজির তালিকায় নাম ওঠা ‘সজিনাথ ফুলের সৌরভ হয়তো কবি-সাহিত্যিকদের মনেও খুব একটা জাগরণ তৈরি করতে পারেনি।
তবে বর্তমান সময়ের সজনে ফুলের সৌন্দর্য দেখলে হয়তো প্রকৃতির কবি হিসেবে খ্যাত জীবনানন্দ দাশ বসন্তে কবিতার মালা গাঁথতেন সজনে ফুলের মুগ্ধতা ছড়ানো সৌরভ দিয়েই।
কারণ বসন্ত এলেই কদর বাড়ে সজনের ডাঁটা, পাতা, ফুলের। খাদ্যরসিক বাঙালি সজনের বেলায় বাদ দেয় না কিছুই। তবে শুধু স্বাদ নয়, বরং শীতের পর ঋতু পরিবর্তনের সময় এই সব্জি নানা অসুখ প্রতিরোধ করে। বসন্তের সময় তাই এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে।
পুষ্টিবিদদের মতে, সজনেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন, ক্যলসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টেও ভরপুর এই সব্জি। তাই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সজনে ফুল গবেষকদের কাছে মহামূল্যবান। এটা নিয়ে দেশীয় পর্যায়ে গবেষণাও চলমান। গবেষকরা সজনে পাতাকে ‘নিউট্রিশন্স সুপার ফুডথ এবং সজনে গাছকে অলৌকিক গাছ বা ‘মিরাকেল ট্রিথ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
সজনে ফুল দেশের গ্রামীণ সৌন্দর্য ও পুষ্টির অন্যতম অনুসঙ্গ হলেও কবি-সাহিত্যিকরা খুব বেশি এ ফুল কিংবা গাছ নিয়ে কথা বলেননি। তবে বিস্তর আবেদন না পাওয়া গেলেও বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বাতাসে ধানের শব্দ শুনিয়াছি’ কবিতায় সজনে ফুলের কথা পাওয়া যায়।
যেখানে তিনি বলেছেন, আনারস বন; ঘাস আমি দেখিয়াছি; দেখেছি সজনে ফুল চুপে চুপে পড়িতেছে ঝরেথ। তার এ কবিতায় সকলকে মনে করিয়ে দেয় প্রিয় শ্যামল বাংলার প্রকৃতিতে ফাল্গুনে গাছে গাছে দুলছে নান্দনিক সজনে ফুল।
বসন্তের শুরুতেই শালিখা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সজনের গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। থোকায়-থোকায় ঝুলছে কোটি কোটি ফুল। গাছে গাছে ফুলের পরিমাণ এতোটাই বেশি যে গাছের পাতা পর্যন্ত দেখার উপায় নেয়। অনেক গাছ ফুলের ভারে নুয়ে পড়েছে। কোনো কোনো গাছের ডাল ফুলের ভারে ভেঙেও পড়েছে। আর এ অতিভারে বিপর্যস্ত গাছের ফুলে ফুলে যেন আর্শীবাদ হয়ে ঘটছে ভ্রমরের আগমন। সঙ্গে উপকারী অন্য পোকারাও রয়েছে। ভ্রমর ও মৌমাছি সংগ্রহ করছে মধু। তাদের যখন মধু সংগ্রহে ব্যস্ততা, তখন পরাগায়ণ করে ফুল থেকে পরিপূর্ণ সজনে ডাটায় পরিণত হওয়ার সংগ্রাম চলছে ফুলের মাঝে। প্রতি মুহূর্তেই ঝরে পড়ছে ফুল মূল্যহীন গন্তব্যে।
অপরদিকে টিকে থাকা ফুলগুলো আনছে ফল; দিনশেষে যা চাষির মনের তুষ্টি। কারণ ফুল নিয়ে সৌন্দর্য পিপাসু, বিশেষজ্ঞ ও কবির আগ্রহ থাকলেও চাষির আগ্রহ ফল ও পাতা। কারণ ফুলের গুণ এখনো অজানা চাষিদের।
শালিখা উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার পাশে সজনের সাদা ফুল পথচারীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করছে। রাস্তার পাশের সারি সারি বেশকিছু সজনে গাছের সৌন্দর্য যাত্রী ও পথচারীদের চোখ এড়াতে পারছে না।
এমনি একজন সৌন্দর্য পিপাসু নান্নু মিয়া । এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আড়পাড়া থেকে বরইচারাগামী রাস্তার দুপাশ দিয়ে অসংখ্য সজনে গাছে ফুটে আছে সাদা ফুল যার সৌন্দর্যে মুগ্ধ আমি তবে নির্বিচারে গাছ কাটা ও নগরায়নের প্রভাবে কমে যাচ্ছে গাছগুলো। গত বছরও প্রচুর ফুল ছিল।
শালিখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর হোসেন বলেন, সজিনা এমন একটি উদ্ভিদ যার পাতা, ফুল, ফল এমনকি বাকলও (ছাল) উপকারী। প্রচুর পুষ্টি ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন এই সজিনাকে পুষ্টির ডিনামাইট বলা হয়। সাধারণত ফাল্গুন মাস এলেই সজিনা পাওয়া যায়। তবে এখন বারমাসি সজিনাও পাওয়া যায়। সজিনা ফুলের যেমন সৌন্দর্য রয়েছে তেমনি সজিনাডাঁটা ও পাতায় রয়েছে নানাবিধ ঔষধিগুণ। আমরা কৃষকদেরকে সজিনার ডাল ও গাছ রোপন করতে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি বলেও জানান তিনি।
কেকে/এএম