এই প্রথম রমজানের খাদ্যপণ্যের দাম কম রাখার নজির তৈরি হয়েছে। পেঁয়াজ, আলু, ছোলা, চিনি ডাল, খেজুরসহ বেশিরভাগ খাদ্যের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে আছে। পেঁয়াজ ও আলুর উৎপাদন মৌসুমের সুফল পাচ্ছেন ক্রেতারা আর অন্যান্য পণ্য ব্যাপক আমদানি হওয়ায় দাম কম রয়েছে।
কয়েকটি সবজির দাম কিছুটা বাড়লেও তাতে অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি ক্রেতাদের। সয়াবিন তেলের সংকট তা সহসাই কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। নিত্যপণ্যের বাজার স্বস্তিতে রাখতে সরকারের নানা উদ্যোগ কাজে লেগেছে। ভ্যাট প্রত্যাহার, সুলভমূল্যের বাজার চালু এবং বাজারে অভিযানের কারণেও অনেক পণ্য কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।
কমেছে মুরগি-লেবুসহ বেশকিছু পণ্যের দাম
বাজারে দুদিনের ব্যবধানে কমেছে ব্রয়লার মুরগি-লেবুসহ বেশকিছু পণ্যের দাম রমজানে বাড়তি চাহিদা বেশি থাকায় বেড়েছিল মুরগি, মাছ, মাংস, লেবু, শসা ও বেগুনের দাম। তবে রোজার পণ্য হিসেবে পরিচিত খেজুর, ছোলা, চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের দাম ছিল স্থিতিশীল। কিন্তু দুদিনের ব্যবধানে কমেছে ব্রয়লার মুরগি-লেবুসহ বেশকিছু পণ্যের দাম।
গতকাল সোমবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা রোজা শুরুর আগে শুক্রবার বেড়ে ২২০-২২৫ টাকায় উঠেছিল। অর্থাৎ তিনদিন বাদে আবারও ৩০-৩৫ টাকা কমে আগের দামে এসেছে।
অন্যদিকে, ইফতারে অনেকেই লেবুর শরবতে চুমুক দিয়ে গলা ভেজাতে চান। তবে, এবার চাহিদা থাকায় রোজার শুরুতেই লেবুর দাম ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু গতকাল আগের তুলনায় লেবুর দামও কিছুটা কম।
শনি ও রোববার (১ ও ২ মার্চ) ঢাকার চারটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হালিপ্রতি লেবু বিক্রি হয়েছে ৫০-৮০ টাকা দরে। সোমবার সেই লেবু ৪০-৬০ টাকা হালি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
লেবু বিক্রেতা বাহাউদ্দিন বলেন, রোজার সময় যে পরিমাণে সরবরাহ থাকে তার চেয়ে চাহিদা কয়েকগুণ বেশি থাকে। তাই দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এখন গত দুদিনে অনেকে লেবু কিনে ফেলেছে, চাহিদা কমছে, সেইসঙ্গে দামও। আরও কয়েকদিন গেলে হালি ২০-২৫ টাকায় নেমে আসবে।
লেবুর মতো দাম বেড়েছিল শসা-বেগুনের। সোমবার শসা কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আগে দাম ৫০-৬০ টাকা হলেও এখন ৪০-৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, গোলবেগুন ৮০-১০০ টাকার পরিবর্তে ৬০-৯০ টাকা ও লম্বা বেগুন ৬০-৮০ টাকার পরিবর্তে ৫০-৬০ টাকা দরে এসেছে।
বিক্রেতারা বলেন, দিন যত যাবে দাম তত নাগালের মধ্যে আসবে। বাজারে আহাদুজ্জামান নামের এক ক্রেতা বলেন, আসলে রোজার আগমুহূর্তে ও প্রথম দু-একদিন মানুষ হুমড়ি খেয়ে পণ্য কেনেন। এ কারণে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দেন। এখন আস্তে আস্তে কিনবে, দামও কমবে। আমাদের সবার উচিত যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু কেনা। তাহলে দাম বাড়বে না।
এদিকে মোটাদাগে বলতে গেলে এবছর রমজানে পণ্যের দাম অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশ স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে রয়েছে। রোজা শুরুর আগেই বাজারে যে অরাজকতা অন্যান্য বছর দেখা যেত, সেটা নেই। তবে চারমাস ধরে চলা ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট কাটেনি। সেটাই একমাত্র বড় অস্বস্তির কারণ ভোক্তার জন্য। এছাড়া চালের দাম বাড়তি। এবছর এখন পর্যন্ত চিনি, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ ও আলুর দাম কম রয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, বেশকিছু পণ্যের ভরা মৌসুম, নতুন সরকারের শুল্ক-ছাড়, পর্যাপ্ত আমদানির কারণে বেশিরভাগ পণ্যে স্থিতিশীলতা আছে। যদিও প্রতি বছরের ন্যায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় বেগুন, লেবু, ধনেপাতার মতো পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, সেটা প্রতি বছর হয়।
সেগুনবাগিচা বাজারে আল্লার দান স্টোরের (মুদি দোকান) মালিক ইছাহাক আলী বলেন, শুধু তেলের সমস্যা না হলে এ বছরের বাজার একদম স্থিতিশীল বলা যেত। বরং গত কয়েক মাসের তুলনায় এখন জিনিসপত্রের দাম কম। কিছু পণ্যের সরবরাহ কমার কারণে ২-১ টাকা কমবেশি হচ্ছে, যেহেতু এখন মানুষ কিনছে বেশি। এটা দু-চারদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
কমেছে আলু-পেঁয়াজের দাম
বাজারে মান ও আকারভেদে প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। এরমধ্যে ছোট আকারের পেঁয়াজ ৪০ টাকা এবং বড় আকারের পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি নতুন সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা, নতুন লাল আলু ২০-২৫ টাকায়। নতুন বগুড়ার আলু ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নতুন দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২০০-২২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১৪০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক্ষেত্রে গত এক মাসের সঙ্গে তুলনায় করলে দেখা যায়, আজ মানভেদে প্রতি কেজিতে নতুন দেশি সাদা আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা, নতুন দেশি লাল আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা করে। আর প্রতি কেজিতে নতুন বগুড়ার আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা। আর পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। এ সময় আলু পেঁয়াজের বিক্রেতারা জানান, রোজায় আলু-পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
মুদি দোকানের পণ্যের দাম কমেছে
অন্যান্য সময় রমজান মাস শুরুর আগেই বেসন, ডাল, ছোলা, চিনির মতো মুদি পণ্যের দাম বাড়তে থাকলেও এবার কিন্তু এখনো তেমন কিছু ঘটেনি। এখনও এসব পণ্যসহ অন্যান্য মুদি পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে দাম অপরিবর্তিত থাকলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সয়াবিন তেল। সয়াবিন তেলের সংকটে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বাজারে প্রতি কেজি বুটের বেসন ১৪০ টাকা, অ্যাংকর বেসন ৮০-৯০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১২০ টাকা, মাশকলাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১২০ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে বুটের ডালের দাম কমেছে ১৫ টাকা, ডাবলির দাম কমেছে ১০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চালের (মান ভেদে) দাম কমেছে ১০ টাকা, খোলা চিনির দাম কমেছে ৫ টাকা। এছাড়া অন্য কোনও পণ্যের দাম বাড়েনি, রয়েছে আগের দামেই।
কেকে/এআর