হঠাৎ জানালার ফাঁক দিয়ে একঝলক রোদ এসে নিপার কচি চোখের ওপর পড়ল। চোখদুটো কচলাতে কচলাতে কান্না শুরু করে দিল নিপা। নিপা এখনো বয়সে অনেক ছোট। বাবা-মায়ের আদরের সন্তান। সে এবার তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেছে মাত্র। রাতে মায়ের সাথে ঘুমিয়েছিল। মা এখন সকালের নাস্তা তৈরির কাজে ব্যস্ত।
দিকে নিপা কান্না করতে করতে ঘুম থেকে উঠে বসে পড়ল। হঠাৎ চেয়ে দেখল, টেবিলের ওপর ফুলদানিতে রাখা গোলাপ ফুলের ওপর একটি নীল প্রজাপতি বসে আছে। এমন সুন্দর প্রজাপতি দেখে নিপার কান্না থেমে গেল। সে অনেক খুশি হয়ে উঠল। কী সুন্দর ডানা দুটো ঝিকমিক করছে। গায়ের রং কী সুন্দর। নিপা নীল প্রজাপতিটির মায়ায় পড়ে গেল। তার ইচ্ছে- প্রজাপতিটিকে সে আর যেতে দেবে না। আজ থেকে তার কাছেই রেখে দেবে আর প্রাণভরে ভালোবাসবে।
এসব ভাবতে ভাবতে নিপা এবার হাসিমুখে নীল প্রজাপতিকে জিজ্ঞেস করল, ও প্রজাপতি ভাইয়া, তোমার বাসা কোথায়? তুমি কি তোমার আম্মুর সাথে রাগ করেছ? তোমার আম্মু কি তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে? নয়তো এত সকাল সকাল তুমি আমাদের বাসায় এলে কেন? তোমার আম্মু অনেক পচা। তুমি আর কোনোদিনও তোমাদের বাসায় ফিরে যেয়ো না। তুমি আজ থেকে আমাদের বাসায় আমার সাথে থাকবে। আমার আম্মুকে তুমিও আম্মু বলবে ডাকবে। আমার আম্মু তোমাকে আমার থেকেও বেশি আদর করবে। নিপা আবারও দরদমাখা কণ্ঠে বলতে লাগল, ও প্রজাপতি ভাইয়া! আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসব। আমি আমাদের বাসার সামনে তোমার জন্য সুন্দর একটি ফুলের বাগান করে দেবো। ওখানে তুমি থাকবে আর বিকেলবেলায় আমার সাথে খেলা করবে। আমি তোমাকে অনেক অনেক আদর করব। প্রতিদিন আমি তোমাকে মধু খাওয়াব। আমাদের ঘরে বোতলে রাখা অনেক ভালো মধু আছে। আমি আর তুমি খুব মজা করে খাব। নিপা একা একাই তার প্রজাপতি বন্ধুর সাথে কথা বলতে লাগল।
এদিকে নীল প্রজাপতিটি নিপার আরো কাছে এসে তার বিছানার চাদরের বড়ো বড়ো ফুলগুলোতে বসল। যেন সে নিপার কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল। এবার নীল প্রজাপতিকে কাছে পেয়ে নিপা আরো বেশি খুশি হলো। নিপা প্রজাপতিকে বলল, আচ্ছা নীল প্রজাপতি, তুমি কি আমার বন্ধু হবে? এই বলে নিপা বিছানা থেকে নেমে মধুর বোতলটা হাতে নিয়ে প্রজাপতিকে ধরতে গেল। ঠিক তখনই প্রজাপতিটি নিপাকে ফাঁকি দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে উড়ে গেল। নিপাও জলদি করে তার প্রজাপতি বন্ধুর পেছন পেছন ছুটল আর বলতে লাগল, বন্ধু, দাঁড়াও, দাঁড়াও। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না, আমি শুধু তোমার বন্ধু হতে চাই। নীল প্রজাপতিটি উড়ে গিয়ে নিপাদের ডালিম গাছের ছোট্ট ডালে বসল। নিপা তখন হাত দিয়ে প্রজাপতিটিকে ধরে চুমু খেয়ে বুকের সাথে আলতো করে জড়িয়ে ধরল।
বাবা-মা প্রজাপতির প্রতি নিপার এমন ভালোবাসা দেখে নীল প্রজাপতির জন্য বাড়ির সামনেই অনেক বড়ো একটি ফুলবাগান করে দিয়েছেন। সেখানে এখন শত শত প্রজাপতি থাকে। নিপা সকাল-সন্ধ্যায় প্রজাপতির সাথে খেলা করে। নিপার স্কুলের বন্ধুরা এখন তাকে প্রজাপতির বন্ধু বলে ডাকে।
কেকে/এজে