নিজের তৈরি বিমান আকাশে উড়িয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন মানিকগঞ্জের তরুণ উদ্ভাবক জুলহাস মোল্লা। তার এই সাফল্য দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমানটি উড়ান জুলহাস।
জুলহাস মোল্লার বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায়। তবে নদীভাঙনের কারণে তার পরিবার বর্তমানে শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা এলাকায় বসবাস করছে। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম। ২০১৪ সালে জিয়নপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করলেও অর্থাভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। বর্তমানে ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ ঢাকায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করছেন। গতকয়েকদিন আগে যমুনার চরে তার তৈরি বিমানটি প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট ওপরে উঠতে সক্ষম হয়।
জুলহাস মোল্লা বলেন, ‘আমি পেশায় একজন ইলেক্টিশিয়ান। আমার “আরসি প্লেন” বানানোর শখ ছিল। গত চার বছর ধরে এই বিমান তৈরির চেষ্টা করেছি, কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছি। অবশেষে নিখুতভাবে উড্ডয়নের মাধ্যমে আমি বিমান উড়াতে সফল হয়েছি। এটাকে আমি অ্যালমেনিয়াম, এস এস পাইপ ও লোহার মিশ্রন নিখুতভাবে যেখানে যা লাগে দিয়েছি এবং ইঞ্জিন হিসেবে ১৩ হাজার টাকার সাতঘোড়া ইঞ্জিন ব্যবহার করেছি।
তিনি আরো বলেন, চেষ্টা করলে এই প্লেনকে মেঘের উপরে থেকে ঘুরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু ট্রেইনার বিমান হিসাবে তা ঝুঁকিপুর্ন, তাই আমি ৫০ ফুট উচ্চতার উপরে উঠাইনি। ভবিষতেও হবে না। একে তো আমি কখনো প্লেনে উঠিনি,অদক্ষ হয়েও আমি সফলভাবে এর উড্ডয়ন করেছি। আমি আশা করি, এই বিমানকে সরকারি পর্যায়ে বানিজ্যিকভাবে সফল করতে সরকার থেকে আমাকে যেন সহায়তা করে এবং কোন প্রকার বাধা না দেয়।
জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লা জানান, ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্লাস্টিকের জিনিস কেটে কিছু না কিছু বানানোর চেষ্টা করতেন জুলহাস। তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করলে সে বলতো, একদিন দেখবে কী বানিয়েছি। আজ সে করে দেখিয়েছে।
যমুনার চরে বিমান উড্ডয়ন দেখতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, একজন অদক্ষ লোক হয়েও প্লেন তৈরী করে জুলহাস ইতিহাস রচনা করেছে। মানিকগঞ্জের গর্ব জুলহাস। সরকারের উচিত তাকে সঠিক মূল্যায়ন করা। জুলহার্সে আবিস্কার সরকার পর্যায়ে বানিজ্যিকভাবে বিমান তৈরী করা যেতে পারে। তাহলে জুলহাসকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিমানখাতকে উন্নতির শিখরে পৌছে দিতে পারে।
এ সময় জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, জুলহাসের গবেষণা কাজে সরকার সহযোগিতা করবে। প্রাথমিকভাবে কিছু আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
জুলহাস মোল্লার এই উদ্ভাবন স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। যথাযথ সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় কিছু করতে পারেন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
কেকে/ এমএস