চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছনখোলা এলাকায় ডাকাত সন্দেহে মসজিদের মাইকে ঘোষণায় এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে নেজাম উদ্দিন (৪৫) ও আবু ছালেক (৩৫) নামের দুইজন ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ চারজনকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৩ মার্চ) দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ছনখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গণপিটুনিতে নিহত নেজাম উদ্দিনের বাড়ি উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা লতাপীর বাজার জহির চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার মৃত মাহমুদুল হকের ছেলে। আবু ছালেক একই উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে।
ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন- উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ইকবাল হোসেন ও ওয়াহেদ। এওচিয়া ইউনিয়নের আব্বাস উদ্দিন, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন।
স্থানীয়রা জানান, নেজাম উদ্দিন ও সঙ্গীরা ৭টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল যোগে বিচারিক কাজে এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় গেলে তারাবি নামাজ পড়ে বের হওয়া মুসল্লিরা নেজাম গ্রুপকে ঘিরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয় এলাকায় ডাকাত পড়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নেজাম একালাবাসীর ওপর গুলি চালায়। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হলে ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী নেজাম ও তার সাথে থাকাদের গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলে নেজাম ও ছালেক নামে দুজন মারা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর নেজাম বিদেশ থেকে এলাকায় ফিরে আসেন। বশর ‘হত্যা’র প্রতিশোধ নিতে এরপর থেকে তিনি ও তার সহযোগীরা এওচিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের ঘরবাড়ি-খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় লুটপাট চালান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পর পলাতক থাকা মানিক চেয়ারম্যানের একটি অফিসে গত শুক্রবারও হামলা চালানো হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর নজরুল ইসলাম মানিকের স্ত্রী রুনা আকতারের দেওয়া এক অভিযোগ থেকে জানা যায়, নেজাম ও তার সহযোগী ইকবাল ও ফারুকের নেতৃত্বে জামায়াত ক্যাডার হিসেবে পরিচিত অন্তত ৫০ জন সন্ত্রাসী গত বছরের ডিসেম্বরের শুরু থেকে টানা ১৫ দিন ধরে নজরুল ইসলাম মানিকের খামার থেকে ৫০-৬০ ট্রাক ভর্তি করে মাছ তুলে নিয়ে যায়। ১৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ৩০-৩৫টি ট্রাক নিয়ে এসে মানিকের মালিকানাধীন কেবিএম ব্রিকফিল্ড থেকেও ২ কোটি টাকার ইট নিয়ে যায়।
সোমবার (৩ মার্চ) মানিক চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের খোঁজে নেজাম উদ্দিন কাঞ্চনা ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
সাতকানিয়া জামায়াতের আমীর মাওলানা কামাল উদ্দিন ও সেক্রেটারী মুহাম্মদ তারেক হোছাইন বলেন, গতকাল রাতের হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রাম এটি বহু আগে থেকেই সন্ত্রাস কবল এলাকা। এওচিয়া ইউনিয়ন এর সাবেক চেয়ারম্যান ও সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম প্রকাশ মানিক চেয়ারম্যান ছনখোলা গ্রামের পাহাড়, পাহাড়ি গাছ ও ইটভাটা সমুহ নিয়ন্ত্রণে নিতে একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। গ্রামের অনেক মানুষ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অসংখ্য মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষের পাহাড়, ভূমি জবর দখল করেছিল।
এলাকার মানুষ তার অত্যাচার নিপীড়নে অতিস্ট হয়ে তাকে বয়কট করে।তৎকালীন আওয়ামী সরকার ও প্রসাশনের সহযোগিতা কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের পর সে এলাকা ছেড়ে আত্নগোপন করলেও তার বাহিনী ধরাছোঁয়ার বাইরে ।
মানিকের ভাই হারুন ও মমতাজ প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই সন্ত্রাসীরা এখনো নানা অপকর্মে জড়িত। গতরাতে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী দুঃশাসনে নির্যাতিত ও ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে বিচারের কথা বলে ডেকে এনে মাইকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডাকাত আখ্যা দিয়ে মূলত গনপিটুনির নামে চেয়ারম্যান মানিকের নির্দেশে তার ভাই মমতাজ, হারুনের পরিকল্পনায় কুপিয়ে দুজনকে জঘন্যতম কায়দায় হত্যা করেছে, যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
একইভাবে বিগত ২০১৬ সালে মানিক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জামায়াতের কর্মী কান্চনা বশরকে নির্মমভাবে ছনখোলাতে হত্যা করা হয়েছিল।
অবিলম্বে চিহ্নিত খুনীদের গ্রেফতার, ঘটনার গডফাদারদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচারের মাধ্যমে দৃস্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত না করে আসল হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানান।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা ও একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল (সোমবার) রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
কেকে/এজে