ম্যাচের শুরুতেই জীবন পেলেন ট্রাভিস হেড। সময়ের সঙ্গে বিধ্বংসীও হয়ে উঠলেন। কিন্তু দারুণ ইনিংসটার অপমৃত্যু অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে বরুণ চক্রবর্তীকে মারতে গিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার গোটা ইনিংসটার গল্পই এমন সম্ভাবনা ও সম্ভাবনার অপমৃত্যুর। স্টিভ স্মিথ, অ্যালেক্স ক্যারিরা বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি। তাই বড় স্কোর গড়ার সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ অস্ট্রেলিয়া।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম সেমিফাইনালে ভারতকে ২৬৫ রানের লক্ষ্য দেয় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ৪৮.১ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় রোহিতরা। ৪ উইকেটের ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে যায় তারা।
এদিন টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়া ৪৯.৩ ওভারে ২৬৪ রানে অলআউট হয়ে গেছে। ম্যাথু শর্ট ইনজুরিতে পড়ায় সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া কুপার কনোলির মতো তরুণকে মানিয়ে দিয়ে জুয়া খেলেছে। কিন্তু সেই জুয়া কাজে লাগেনি। মোহাম্মদ শামির বলের সামনে খাবি খেয়ে ৯ বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিয়েছেন তিনি। প্রথম ওভারে শামিকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ট্রাভিস হেডি। শুরুতে কিছুটা খাবি খেলেও সময়ের সঙ্গে খোলস ছেড়ে বের হতে থাকেন। স্ট্রোকের ফুলঝুরিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু বরুণ চক্রবর্তী আক্রমণে এসেই ফেরান হেডকে। উড়িয়ে মারতে গিয়ে শুভমান গিলের হাতে ধরা পড়েন হেড। আউট হওয়ার আগে ৩৩ বলে ৫ চার ও ২ ছয়ে ৩৯ রান করেন এই ওপেনার।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ এবং মার্নাস লাবুশেন ভালো একটা জুটি গড়েন। ৫৬ রানের এই জুটি ভাঙে লাবুশেনের বিদায়ে। জাদেজার বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন ৩৬ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২৯ রান করা লাবুশেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড রান তাড়া করে অস্ট্রেলিয়াকে জেতানো জশ ইংলিশ ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ভালো খেলতে খেলতে ভুল শট খেলে জাদেজার বলে কোহলির হাতে ক্যাচ দেন। ১২ বলে ১১ রান করেন তিনি। স্মিথ অবশ্য টিকে ছিলেন। যদিও শামি তার ক্যাচ ফেলেছেন। একবার স্টাম্পে বল লাগলেও বেল না পড়ায় বেঁচে গেছেন। দুইশর কাছাকাছি গিয়ে স্মিথও আউট হয়ে যান। শামির বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৯৬ বলে ৪ চারও ১ ছয়ে ৭৩ রান করেন অজি অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়া বড় ধাক্কা খায় এর পরেই। অক্ষর প্যাটেলের বলে বোল্ড হয়ে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মাত্র ৭ রান করেন তিনি।
অ্যালেক্স ক্যারি অজিদের ইনিংস টানতে থাকেন। বেন দারউইশের সঙ্গে ৩৪ রানের জুটি গড়েন। দারউইশ বরুণের বলে আউট হওয়ার আগে ২৯ বলে ১৯ রান করেন। অর্ধশতক তুলে নেন ক্যারি। কিন্তু তিনি কাটা পড়েন শ্রেয়াস আইয়ারের দুর্দান্ত থ্রোয়ে রানআউট হয়ে। ৫৭ বলে ৮ চার ও ১ ছয়ে ৬১ রান করেন ক্যারি। অ্যাডাম জাম্পা ৭ ও শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে নাথান এলিস ১০ রান করেন। তানভীর সঙ্ঘ ১ রানে অপরাজিত থাকেন। মোহাম্মদ শামি ১০ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন। বরুণ ও জাদেজা ২টি করে উইকেট শিকার করেন। অক্ষর ও হার্দিক ১টি করে উইকেট পান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হলেও ৫ম ওভারের শেষ বলে বেন ডোয়ারশিসের বলে বোল্ড হয়ে ৮ রান করে সাঝঘরে ফিরে যান শুবমান গিল। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রোহিত শর্মাও। ২৯ বলে ২৮ রান করে কুপারের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে কাটা পড়েন ভারতীয় এ অধিনায়ক। এরপর ভারতকে জয়ের বন্দরে এগিয়ে নিতে থাকেন শ্রেয়াস আইয়ার এবং ভিরাট কোহলি। ২৭তম ওভারে এডাম জাম্পার বলে আইয়ার (৬২ বলে ৪৫ রান) ফিরে গেলে ভাঙে তাদের ৯১ রানের জুটি।
পরে ডানহতি-বামহাতি সমন্বয় করতে ৫ নাম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে পিচে নামেন অক্ষর প্যাটেল। ভিরাট কোহলিকে ভালোই সঙ্গ দিয়েছিলেন এ বোলিং অলরাউন্ডার। দুইজনে মিলে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। ২৭ বলে ৩০ রান করে অক্ষর এবং ৯৮ রানে ৮৪ রান করে কোহলি আউট হলে জয়ের জন্য ভারতে প্রয়োজন ছিল ৪৪ বলে ৪০ রান। সেখান থেকে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ভারতকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান হার্দিক পান্ডিয়া এবং লোকেশ রাহুল। ৪৮ তম ওভারে হার্দিক (২৪ বলে ২৮ রান) আউট হলেও ভারতের জয় থামাতে পারেনি অজিরা। ফলে ৪ উইকেটের জয় নিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় রোহিত শর্মারা।
আজ অপর সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড।
কেকে/ এমএস