আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা সমীকরণ শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বরে ভোটের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখন সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ জানানো হয়নি। ভোটের মাঠে কে কার প্রতিপক্ষ হচ্ছে এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগ কি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে এ নিয়ে আছে নানা আলোচনা।
ভোটের আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিও জোরালো হচ্ছে। তবে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। তবে আওয়ামী লীগের অপরাধীদের বিচার দাবিতে সোচ্চার বিএনপি।
তবে দলের অভ্যন্তরে আলোচনায় ‘বিশুদ্ধ’ আওয়ামী লীগকে ভোটের মাঠে চায় দলটি। আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে বিএনপিকে বাইরে রেখে যে ‘ভুল’ করেছে, বিএনপি সে পথে যেতে চায় না। ফলে ভোটের নানা সমীকরণে বিরোধী দলে কারা যাচ্ছে, এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপি পক্ষ থেকে করা হচ্ছে গোপন জরিপ। জরিপের ফল দেখে নেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দলীয় সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
জাতীয় নির্বাচনের দাবি বিএনপির পক্ষ থেকে জোরালো থাকলেও এখনই আসন বণ্টন নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বিষয়টি নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করা হবে। এ সময়ের মধ্যে ৩১ দফা নিয়ে জনগণের কাছে যেতে চান দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। এ ছাড়া ৩১ দফা তৃণমূলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশনাও রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপির ক্ষমতায় গেলে এ ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবে। প্রয়োজনে আরো যদি কোনো গ্রহণযোগ্য প্রস্তাবনা থাকে তা সংযুক্ত করা হবে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ভোটের মাঠে এখনো আওয়ামী লীগই বিএনপির বড় প্রতিপক্ষ। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে কোনো বড় দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে তা অংশগ্রহণমূলক হবে না। আওয়ামী লীগ যে ভুলটা করেছে, বিএনপি সে ভুল করবে না। আওয়ামী লীগকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ভোটের মাঠেই রাজনৈতিক শিক্ষা দিতে চায়।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেন, কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে বিএনপি নয়। এ সিদ্ধান্ত দেশের জনগণ নেবে। তারা ভোট দিয়ে প্রমাণ করে দেবে তারা কোনো দলকে চায় আর কোনো দলকে চায় না। ফলে বিএনপির কোনো ষড়যন্ত্রে পা দিতে চাচ্ছে না।
সম্প্রতি বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের এক বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গ উঠে আসে। বৈঠকে অংশ নেওয়া অধিকাংশ নেতাদের মত ভোটের মাঠে জামায়াতে ইসলামীকে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। সুযোগ পেলে বিএনপির ক্ষতি করবে জামায়াত। এখন বিএনপি ‘বড় শক্র’ হচ্ছে জামায়াত। ফলে এ দলকে নির্বাচনে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নে। তবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোক ভোটে মাঠে সুযোগ দিয়ে চায় বিএনপি। বেশ কয়েকটি দলকে এ বিষয়ে গ্রিন ‘সিগনাল’ দেওয়া হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। এ ছাড়া নতুন দলকেও পর্যেবেক্ষণে রেখেছে দেশের বৃহত্তম এ দলটি। প্রয়োজনে ভোটের মাঠে তাদের ছাড় দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে।
এ বিষয়ে বিএনপির দুজন ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনি কোনো জোট নেই। জাতীয় ঐক্যের আহ্বান ছিল সরকারবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। ফলে এখানে সবাই স্বাধীনভাবে নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছে। তবে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদলগুলোর নিয়ে বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত আছ। তাদে ভোটের মাঠে ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
জানতে চাইলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক সদস্য বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে এখনই কথা বলার সময় আসেনি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে যারা কর্মসূচি পালন করেছে অবশ্যই তারা ছাড় পাবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ১৬ বছর দেশ শাসন করার পর ছাত্র ও গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়। বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারত অবস্থান করছেন। দলটির বহু নেতাকর্মী কারাবাস করছেন। এ ছাড়া পদধারী নেতারা যারা বাইরে আছেন, তারাও প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। শত শত মামলার আসামি হয়ে নেতাকর্মীরা এখন ফেরারি জীবনযাপন করছেন।
কেকে/এআর