বাংলাদেশে শিশুদের সার্বিক অপুষ্টির হার কমলেও, সিলেটে অপুষ্টির সমস্যা সে হারে কমছে না। শিশুদের পুষ্টির পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি হলেও, কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে অপুষ্টি এখনো একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান। বিশেষ করে সিলেট বিভাগে শিশুদের পুষ্টিহীনতার হার এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে।
বুধবার (৫ মার্চ) সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সেমিনারে গবেষকরা এসব কথা বলেন। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন সি-এর সেমিনার কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন শাবিপ্রবির পরিসংখ্যান বিভাগ। এতে ‘শৈশবের অপুষ্টির জন্য সিলেট বিভাগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মূল্যায়ন’ প্রকল্পের গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, সিলেট বিভাগের শিশুদের পুষ্টির সার্বিক অবস্থার মধ্যে ৩২.৭ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম, ১২.৭ শতাংশ শিশু উচ্চতার তুলনায় ওজনে কম এবং ২৫.৫ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় ওজনে কম সমস্যায় ভূগছে যা সারাদেশের গড় শতাংশ থেকে বেশি।
সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় শিশুদের "বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম" (Stunting-৪১.২%) ও "কম ওজন" (underweight-২৯.৭%) এর সমস্যা সব চেয়ে বেশি; সিলেট জেলায় শিশুদের "উচ্চতার তুলনায় ওজন কম" (Wasting-১৪.৫%) এই সমস্যা তুলনামূলক বেশি। অন্যদিকে মৌলভীবাজার জেলায় অপুষ্টির সমস্যা তুলনামূলক কম (স্টান্টিং-Stunting, ২৫%; ওয়াস্টিং-Wasting, ৬.৫%; কম ওজন- underweight, ১৭.৬%) ।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আরও জানা যায় শিশুদের বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম (Stunting) সমস্যায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শীর্ষ উপজেলা গুলো হলো বিশ্বনাথ (৩৬.২%), জকিগঞ্জ (৩৫.৫%), জগন্নাথপুর (৩৫.৫%), ছাতক (৩৪.২%), দক্ষিণ সুরমা (৩৪.২%), ধর্মপাশা (৩৪.০%), সিলেট সদর (৩৩.৯%), মাধবপুর (৩৩.৮%), লাখাই (৩৩.৪%) এবং গোলাপগঞ্জ (৩৩.৪%)।
কম ওজন (Underweight) সমস্যায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা গুলো হলো কুলাউড়া (৩২.৭%), বিশ্বনাথ (৩১.৭%), দক্ষিণ সুরমা (২৯.০%), জকিগঞ্জ (২৮.৭%) এবং জগন্নাথপুর (২৬.৬%)।
উচ্চতার তুলনায় ওজন কম (Wasting) সমস্যায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলো হলো কুলাউড়া (১৪.৫%), জকিগঞ্জ (১২.৫%), বিশ্বনাথ (১২.৩%), জগন্নাথপুর (১২.০%), দক্ষিণ সুরমা (১২.০%), ছাতক (১১.৮%), তাহিরপুর (১১.৪২%), সুনামগঞ্জ (১১.২৮%), আজমেরীগঞ্জ (১১.২০%) এবং জুড়ী (১১.১৮%)।
গবেষকেরা বলেন, ‘সিলেট বিভাগের শিশুদের অপুষ্টির হার কমাতে উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা, এনজিও এবং কমিউনিটি নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত পুষ্টি সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা জরুরি। বিশেষ করে, পুষ্টি বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধি, শিশুদের জন্য সুষম খাদ্য নিশ্চিতকরণ, মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্য সেবার সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, এবং নিয়মিত পুষ্টি মূল্যায়ন ক্যাম্প পরিচালনা করা প্রয়োজন।’
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল বাতেন, বিভাগীয় পরিচালক ড. মো. আনিসুর রহমান এবং মূল বক্তা অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল হোসেন। সেমিনারটির সভাপতিত্ব করেন গবেষণার প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক ড. মোসাম্মৎ কামরুন নেছা এবং সঞ্চালনা করেন সহ-প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন। গবেষণায় সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার ৪১টি উপজেলার শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা নীতিনির্ধারকদের জন্য অপুষ্টি নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে এই গবেষণার তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং নীতিনির্ধারকদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে।’
কেকে/ এমএস