সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চয়রা গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা ঝর্ণা খাতুন। এক সময় ক্ষুধার তাড়নায় মানুষের দ্বারে দ্বারে কাজের সন্ধান করতেন। বর্তমানে তার মাংস ও ডিম উৎপাদনশীল বাউ-ডাক জাতের হাঁস পালন করে ভাগ্য বদলে গেছে। শুরুর দিকে তিনি স্থানীয় অলাভজনক সংস্থার সহায়তায় ৫০টি বাউ-ডাক হাঁস দিয়ে খামার শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে তা বড় করেন। এখন তার খামারেই কাজ করছে কয়েকজন শ্রমিক।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল আলম ভূঁঞা নতুন এই বাউ-ডাক হাঁসের জাতটি উদ্ভাবন করেছেন, যা তরুণ উদ্যোক্তাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। দেশি ও বিদেশি হাঁসের সংকরায়নের মাধ্যমে এই হাঁস তৈরি করা হয়েছে। যা দেশের আবহাওয়ার জন্য উপযোগী এবং রোগবালাইয়ের প্রতি বেশ সহনশীল।
এই হাঁস মাত্র ৩ মাস বয়সে স্ত্রী ও পুরুষ হাঁস ভেদে ২ থেকে ২.৫ কেজি ওজনের হয় এবং বছরে ২২০ থেকে ২৩০টি ডিম দেয়। যেখানে দেশি হাঁস ৭০ থেকে ৮০টি ডিম দেয়। দ্রুত মাংস উৎপাদন ক্ষমতা, কম মৃত্যুহার এবং বাজারে ভালো দামের কারণে এটি খামারিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ওই উপজেলার বাঙ্গালা গ্রামের আরেক খামারি শাহিনুর। তিনি দীর্ঘ সময় বেকার থাকার পর স্থানীয় আরেক ঋণদাতা সংস্থার সহযোগিতায় ১০০টি বাউ হাঁস পালন শুরু করেন। হাঁসের উচ্চ বৃদ্ধির হার এবং মৃত্যুহার কম হওয়ায় পালন করে আজ স্বাবলম্বী।
শুধুমাত্র ঝর্ণা এবং শাহিনুরই নয়, সিরাজগঞ্জের প্রায় শতাধিক খামারি বাউ-ডাক হাঁস পালন করে লাভবান হয়েছেন। বিশেষ করে উল্লাপাড়ার চয়রা গ্রামে ইতোমধ্যে ২০টিরও বেশি বাউ হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে।
উল্লাপাড়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শেখ এম এ মতিন জানান, বাকৃবির উদ্ভাবিত নতুন জাতের বাউ-ডাক হাঁস অধিক মাংস ও ডিম উৎপাদনশীল এবং রোগপ্রতিরোধী। খামারিরা যাতে আরও লাভবান হতে পারেন, সেই জন্য জৈব নিরাপত্তা, নিয়মিত টিকা প্রদানসহ বিশদ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে, হাঁসটি প্রান্তিক খামারিদের মাঝে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আশা করি, এই জাতের হাঁস দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কেকে/এএম