রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫,
৭ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English

রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: গণতন্ত্রের কোনও বিকল্প নাই: মির্জা ফখরুল      উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস-প্রেস সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ      প্রতীক্ষা শেষে বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ      রাত ১টার মধ্যে ৮ অঞ্চলে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে      বাজে হারে অনিশ্চয়তায় টাইগ্রেসদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন       আগামী নির্বাচন ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন হবে: প্রধান উপদেষ্টা       ফ্যাসিবাদীদের বিদায় হয়েছে, ফ্যাসিবাদ এখনো যায়নি: জামায়াত আমির      
গ্রামবাংলা
রাজারহাটে সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ
সরকার অরুণ যদু, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫, ৭:০০ পিএম আপডেট: ০৬.০৩.২০২৫ ৭:২৫ পিএম  (ভিজিটর : ৩০১)

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সাব-রেজিস্ট্রার নাবিব আফতাবের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রির অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, তিনি নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি টাকা আদায় করেছেন এবং জমি রেজিস্ট্রির নামে নানা অনিয়মে লিপ্ত রয়েছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ভুক্তভোগীরা জেলা রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সাব-রেজিস্ট্রার নাবিব আফতাব মূলত কুড়িগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার হলেও তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাধিক উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নিয়ম অনুযায়ী, একটি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অন্য উপজেলায় দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। তবে তিনি ছাত্রলীগের সাবেক নেতার পরিচয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চিলমারী, কুড়িগ্রাম সদর এবং রাজারহাট উপজেলায় একাধিকবার অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০২৪ সালে চিলমারী উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে তিনি ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দলিল লেখকদের সহযোগিতায় সাধারণ জনগণের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতেন এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন। তার বিরুদ্ধে অসন্তোষের কারণে দলিল লেখকরাও তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।

পরে তাকে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাশাপাশি রাজারহাট উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অভিযোগ রয়েছে, ভ্রম সংশোধনী, চুক্তিপত্র, দানপত্র ও বণ্টন নামার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি টাকা আদায় করেছেন।

সাংবাদিকরা যেন তার দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান করতে না পারেন, সেজন্য তিনি সরকারি তথ্য বাতায়নে নিজের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেননি। এমনকি তার মোবাইল নম্বর কর্মচারীদের মাধ্যমে গোপন রাখা হয় এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়।

রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার তালুক গ্রামের আবুল কাশেম জানান, তার সমন্ধি হারুন-অর-রশিদ গত ২২ জানুয়ারি সকালে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে তার কাছে আসেন। তারা দুইটি সংশোধনী দলিল করাতে চান। এরপর তিনি তাদের নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যান।

এ সময় দলিল লেখক মোজাম্মেল হক তাদের সাব-রেজিস্ট্রারের কক্ষে নিয়ে যান। সাব-রেজিস্ট্রার নাবিব আফতাব তাদের বলেন, আপনারা দলিল লেখক মোজাম্মেলের সঙ্গে কথা বলে কাজ করুন। এরপর তারা কক্ষ থেকে বের হয়ে যান।

কিছুক্ষণ পর মোজাম্মেল হক কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার সংশোধনী দলিল অনুমোদন করবেন না, নতুন করে কবলা দলিল করতে হবে। নতুন কবলা দলিলের খরচ হবে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

তারা জানান, সংশোধনী দলিলের জন্য সরকার নির্ধারিত খরচ মাত্র ২ হাজার টাকা। তখন দলিল লেখক মোজাম্মেল হক জানান, কাজটি করা যাবে তবে সাব-রেজিস্ট্রারকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে। এ ছাড়া স্ট্যাম্প, ব্যাংক ড্রাফট ও দলিল লেখক ফি বাবদ আরও ২০ হাজার টাকা দিতে হবে।

ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করে সংশোধনী দলিল করিয়ে নেন। পরে তারা জানতে পারেন, সংশোধনী দলিলে নতুন ব্যাংক ড্রাফটের প্রয়োজন হয় না এবং মোট খরচ সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা হওয়া উচিত ছিল। অতিরিক্ত ৬৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে জানতে পেরে তিনি জেলা রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দায়ের করেন।

রাজারহাট সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক স্বপন কুমার জানান, ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর তার গ্রামের সুবোধ চন্দ্র ও সুধাংশু চন্দ্র ভুয়া বি.আর.এস. খতিয়ান তৈরি করে তার ১২ শতক জমি বিক্রি করে দেন। এই জমি ৩০৭৯ নম্বর কবলা দলিলের মাধ্যমে গ্রামের আলম মিয়ার নামে রেজিস্ট্রি করা হয়।

পরবর্তীতে তিনি বিষয়টি জানতে পেরে ২ নভেম্বর জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তের পর ভূরুঙ্গামারী সাব-রেজিস্ট্রার মাহফুজুর রহমানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়।

১৫ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে, জেলা রেজিস্ট্রার দলিল লেখক সামিদুল হক দুলুর সনদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেন এবং ৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ পাঠান। তবে সাব-রেজিস্ট্রার নাবিব আফতাবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্বপন কুমার বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখক সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আমি তাদের বিচার চাই।

দলিল লেখক মোজাম্মেল হক দুটি সংশোধনী দলিলে ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি সাব-রেজিস্ট্রারকে কত টাকা দিয়েছেন, তা বলতে রাজি হননি।

সাব-রেজিস্ট্রার নাবিব আফতাব বলেন, আমার নাম ব্যবহার করে কেউ টাকা নিয়েছে। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই।

নবনিযুক্ত জেলা রেজিস্ট্রার মো. রুহুল কুদ্দুছ বলেন, আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেকে/এএম
আরও সংবাদ   বিষয়:  ভুয়া কাগজ   জমি রেজিষ্ট্রি   ঘুষ বাণিজ্য   রাজারহাট   কুড়িগ্রাম   
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

‘অবশেষে নীলফামারীতে হবে চীন সরকারের হাসপাতাল’
সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া লেমুরের মধ্যে পুরুষ লেমুর উদ্ধার
মনোহরগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ আটক আটক ৩
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনের ধাক্কায় তরুণের মৃত্যু
ইমারত নির্মাণে ব্যত্যয় হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন

সর্বাধিক পঠিত

ভাতিজার সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত চাচী, হাতেনাতে ধরলো স্বামী
টঙ্গীতে দুই শিশু হত্যায় গ্রেফতার মা
মদনে ১২ বছরের মেয়ে ২ মাসের অন্ত:সত্ত্বা
চীনের অর্থায়নে হাসপাতাল গঙ্গাচড়ায় নির্মাণের দাবীতে মানববন্ধন
সালথায় যুবকের লাশ উদ্ধার

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close