মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়নের নাশুরপুর গ্রামে অনুমোদনহীন কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এখানে বিশেষ চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, বনজ ও ফলদ গাছ কেটে এনে প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ পোড়ানো হয় এসব চুল্লিতে। ফলে কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে ফসল এবং জনস্বাস্থ্যও ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
তারা আরো বলেন, এসব চুল্লি প্রশাসনের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ফসলি জমিতে বসানো হয়েছে। ইট ও মাটির তৈরি চুল্লিগুলো রাস্তার পাশে অবস্থিত, ফলে পথচারীদের চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিনটি চুল্লিতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। শ্রমিকদের ভাষ্য, প্রতি চুল্লিতে ৮-১০ দিন ধরে কাঠ পোড়ানো হয় এবং প্রতি মণ কাঠ ১৫০ টাকায় কিনে, তা পুড়িয়ে ১১০০ টাকায় কয়লা বিক্রি করা হয়। উৎপাদিত কয়লা হোটেল, নান রুটির দোকান, কামারশালা ও স্বর্ণকারের দোকানে সরবরাহ করা হয়।
নাশুরপুর গ্রামের আবুল হোসেন তার এক বিঘা ফসলি জমির ওপর তৈরি করেছেন এই কারখানা।
কারখানার কোনো অনুমোদন আছে কি না তা জানতে চাইলে কারখানার মালিক আবুল হোসেন বলেন, তার কারখানার পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র বা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অনুমতি পত্র নেই। তিনি তিন বছর ধরে এ ব্যবসা করেছেন বলেও জানান।
এলাকার স্থানীয় কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, এই কালো ধোঁয়ার ফলে গাছের পাতা চিটচিটে হয়ে যায়। গাছের পাতায় হাত দিয়ে ঘষা দিলে কালো ধোয়ার আস্তরণে হাত কালো হয়ে যায়। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, কয়লা তৈরির এসব কারখানার কালো ধোঁয়ার ফলে ধানসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এ ছাড়াও এসব কয়লা কারখানায় ধোঁয়া নির্গমনের জন্য উঁচু চিমনি না থাকায় তা সরাসরি পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লা তৈরির সময় নির্গত ধোঁয়া শিশু ও বয়স্কদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মামুনুর-উর-রশিদ বলেন, এই ধোঁয়ার ফলে ফুসফুসের সংক্রমণজনিত নানা রোগের ঝুঁকি রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, এসব কারখানার কোনো অনুমোদন নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এএম