বৃক্ষে ফুল আসলেই ফুলের রঙ এবং ঘ্রাণে মুখরিত থাকে চারপাশ। তবে ফুলের এই সৌন্দর্য ও ঘ্রাণে ফলের মাছি বা কোয়ারেন্টাইন পেস্টের আকর্ষণও বেড়ে যায়। যা ফলের উৎপাদন এবং গুণগত মান কমিয়ে দেয়। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে চাষিরা ঘনঘন কীটনাশক ব্যবহার করেন। যা একদিকে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক মূল্যের অভাবে লোকসান গুনতে হয় চাষিদের।
চাষিদের এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর খান ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’ নামে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।
তিনি ২০১৭ সালে এই গবেষণা শুরু করেন এবং ২০২০ সালে এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করেন। এই উদ্ভাবিত ট্র্যাপ ব্যবহার করে নিরাপদ আম উৎপাদন এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য অধিকতর গবেষণা চলমান রয়েছে।
অধ্যাপক আবুল মঞ্জুর খান জানান, এই ট্র্যাপে লিউর নামক এক ধরনের পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যা বিভিন্ন প্রজাতির মাছিকে আকৃষ্ট করে ট্র্যাপের ভেতর প্রবেশ করতে প্রলুব্ধ করে। কিন্তু ট্র্যাপের বিশেষ গঠনশৈলীর কারণে পোকাগুলো একবার ট্র্যাপে প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না, ফলে তারা ট্র্যাপের ভেতরে আটকে পড়ে এবং পরিশেষে মারা যায়। এই ধরনের একটি ট্র্যাপ বানাতে সর্বমোট ৫০ টাকা খরচ হয়, যা খুবই সাশ্রয়ী। ট্র্যাপটি এতটাই টেকসই যে একবার কিনে কৃষক এটি জমিতে কমপক্ষে পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। তবে শুধু ট্র্যাপের ভেতরের লিউর আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে মাসে মাসে পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি আরো জানান, কীটপতঙ্গ দমনে দেশে নানান ধরনের প্রচলিত পদ্ধতি ব্যবহৃত হলেও তা ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকারিতার অভাব রয়েছে। আমাদের এই প্রযুক্তি যেমন সহজলভ্য, তেমনি ব্যবহার সহজ। এটি ফসল উৎপাদনে ব্যয় কমাবে এবং গুণগত মান বজায় রাখবে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, এটি কুমড়া, লাউ, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, আম, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফসলে সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব।
তিনি আরো জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাছি পোকা দমনে নানান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় মাছি পোকা দমনের জন্য ‘মাস ট্র্যাপিং পদ্ধতি’ ব্যবহৃত হয়, যেখানে বিশেষ ধরনের ট্র্যাপে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট করে ধ্বংস করা হয়। ফলে স্ত্রী পোকাগুলো প্রজনন করতে পারে না এবং ধীরে ধীরে এদের সংখ্যা হ্রাস পায়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর দাবি করেন, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) একটি সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিশেষজ্ঞদের সামনে এই ট্র্যাপের কার্যকারিতা তুলে ধরা হয় এবং তারা এই উদ্ভাবনের প্রশংসা করেন। এই ট্র্যাপের বিশেষত্ব হলো—এর ভেতরে থাকা লিউর দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর থাকে এবং প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় বেশি সুবিধাজনক।
কেকে/এএম