রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের মুখোমুখি অবস্থান। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী, যাদের অনেকেই একসময় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং পরবর্তীতে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এছাড়া ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ডাকসু নির্বাচনেও তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এক কথায়, এনসিপির নেতৃত্বে থাকা অনেকেরই রাজনৈতিক দীক্ষা নুরের হাত ধরে। তবে এনসিপির আত্মপ্রকাশের পর থেকেই দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে নুরুল হক নুরের প্রকাশ্য বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছে, হচ্ছে কাদা ছোঁড়াছুঁড়িও। বিষয়টি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে। অনেকেই একে ‘গুরু-শিষ্যের বাহাস’ হিসেবে দেখছেন।
জানা গেছে, গণঅধিকার পরিষদের বেশ কয়েক নেতা এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। তবে নুরুল হক নুর দাবি করেছেন, তাদের দলে নেওয়ার জন্য ‘ ১০ কোটি টাকা’ ও সংসদ সদস্য (এমপি) করার লোভ দেখানো হয়েছে। তবে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন এই অভিযোগকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। নুরুল হকের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদও এক বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে বলেছেন, ‘নুরুল হক নুর নিজেই তার দল বিলুপ্ত করে আমাদের (এনসিপি) সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আদর্শগতভাবে আমাদের মধ্যে অনেক মিল আছে। তবে আমরা কোনো দল বিলুপ্ত করে আনতে চাই না। ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
অন্যদিকে নুরুল হক নুর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তিনি এনসিপিতে যোগ দিতে চাননি; বরং এনসিপির নেতাদের গণঅধিকার পরিষদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
নুরুল হক বর্তমানে ইউরোপ সফরে। তবে অতিসম্প্রতি ফোনে একটি গণমাধ্যমওে সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নতুন দলের উদ্যোক্তাদের অনেকেই তার দল (গণঅধিকার পরিষদ) ও সংগঠনের কর্মী বা দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতা ছিলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর একটি বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম করার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে তার (নুরুলের) সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু কারো কারো দূরদর্শিতার অভাব থাকায় সেটি আর এগোয়নি। নুরুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘নতুন দলের উদ্যোক্তারা আমাদের দলের অনেককে তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা ও এমপি বানানোর অফার দিয়েছেন। এনসিপির নেতাদের পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কোনো উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রলোভন দেখিয়েছেন। এর কারণে আমাদের কয়েকজনের মধ্যে দ্বিধা ছিল।’
নুরুল দাবি করেন, তার দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফসহ কয়েকজনকে এভাবে বিভ্রান্ত ও ‘ব্ল্যাকমেল’ করে এনসিপিতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা ভুল বুঝতে পেরে গণঅধিকার পরিষদে ফিরে এসেছেন।
এ বিষয়ে আবু হানিফ গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের কাউকে কোনো টাকার প্রলোভন দেখানো হয়নি। তবে তিনি বলেন, ‘এনসিপি বেটার কিছু হবে মনে করে আমি এই দলে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে গণঅধিকার পরিষদে থেকেই ভালো কাজ করতে পারব। তাই আমি গণঅধিকারে ফিরে যাচ্ছি। শিগগির আমি এনসিপি থেকে পদত্যাগ করব। তবে গণঅধিকার থেকে এনসিপিতে যাওয়া অন্যদের কথা আমি বলতে পারছি না।’
অপরদিকে দলে নিতে ১০ কোটি টাকা ও এমপি পদের প্রলোভন দেখানোর যে অভিযোগ নুরুল হক করছেন, সে বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা সর্বৈব মিথ্যা একটা অভিযোগ। এর কোনো ধরনের ভিত্তি নেই। এ ধরনের কথা বলার আগে প্রমাণ সাপেক্ষে বলা উচিত। প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের মন্তব্য করা পুরোনো সংস্কৃতির অংশ। এটা যেকোনো রকমের একটা বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক ধোঁয়াশা তৈরি করে বেনিফিট নেওয়ার চেষ্টা।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ থেকে আমাদের দলে যারা এসেছেন, তাদের বেশির ভাগই বহু আগে ওই দল ছেড়েছেন। নুরুল হকের ব্যক্তিগত অনেকগুলো কর্মকাণ্ড ও ভুল রাজনীতির কারণে তাদের অনেকেই একটা নতুন রাজনীতি চাইছিলেন। সেই রাজনীতির কথা যখন এনসিপি প্রস্তাব করেছেন, তখন তারা এই দলে এসেছেন। নুরুল হক যেসব কথা বলছেন, সেগুলো তিনি প্রমাণ করতে পারবেন না। এগুলো খুব দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা।’
কেকে/এআর