জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে খবরের কাগজ বিক্রি করে চলছেন আশরাফ আলী (৬৭)। টানা তিন যুগ ধরে রংপুর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জলঢাকায় রোদ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে পাঠকের কাছে নিয়মিত খবরের কাগজ পৌঁছে দেন তিনি। আবার খবরের কাগজ বিলি করে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। রংপুর বিভাগীয় শহরের আরাজি গুলাল গুদাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর। অভাবের সংসারে তিন ভাই বোনের সংসারে বাবাকে নিদারুণ কষ্ট করতে দেখছেন আশরাফ। বাবা আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পর সেসময় এলোমেলো হয়ে যায় তাদের সংসার।
বড় ছেলে হিসেবে দায়িত্ব বর্তায় তার উপর। তাই সংসার চালানোর কথা চিন্তা করে ১৯৮৭ সালে প্রবেশ করেন এই সংবাদপত্রে। শুরু করেন খবরের কাজ বিক্রির কাজ। তার এলাকা হিসেবে বেছে নেন জলঢাকাকে। এই দীর্ঘ সময় সংবাদপত্র বিক্রির জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই পাড় করতে হয়েছে তাকে।
কখনো প্রচন্ড খরা রোদে কখনো বা ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে এক লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে পথে-প্রান্তরে পাঠকদের কাছে সংবাদপত্র পৌঁছে দেওয়াই যেন তার কাজ।
হরতাল, অসহযোগ আন্দোলনেও থেমে যাননি তিনি। এমন কি করোনাকালীন সময় লকডাউন চলাকালেও বাইসাইকেলের প্যাডেল মেরে ৬০ কিলোমিটার পারি দিয়ে জলঢাকার মানুষের কাছে খবরের কাগজ পৌঁছে দিয়েছেন আশরাফ আলী।
শত বাধাকে উপেক্ষা করে যে মানুষটি নিয়মিত প্রতিদিন খবরের কাগজ পৌঁছে দেন, আজ তিন যুগ অতিবাহিত হলেও তার খবর কজনই বা রেখেছে!
আশরাফ আলীর বাড়ি থেকে ৬০ কিলোমিটারের পথ জলঢাকায় এসে সংবাদপত্র মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে হয় তাকে। খবরের কাগজ বিক্রি করে চার মেয়ে এক ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন আশরাফ আলী। এরই মধ্যে ৩ মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন। ফারহানা নামের এক মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে ছোট মেয়ে আমেনা এখনো কলেজে পড়ে তাকে নিয়ে আছে তার চোখেমুখে অনেক স্বপ্ন। ছেলে হাসানুর করোনাকালীন কলেজ বন্ধ থাকায় সেই থেকে সংসারের দেখভাল করেন। কথা হয় আশরাফ আলীর সাথে। তিনি জানান, আমি দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে জলঢাকায় পাঠকের কাছে নিয়মিত খবরের কাগজ পৌছে দেই। এখানকার মানুষের সাথে আমার একটা আত্বার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আশরাফ আলী বলেন আমার বাড়িতে বলে দেওয়া আছে জন্ম যখন হয়েছে কোনো একদিন মৃত্যুও হবে। তাই পৃথীবি থেকে বিদায়ের খবর টা যেনো আমার প্রিয় জলঢাকাবাসি জানতে পারেন। তার এ কথা গুলো শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিল পাশে দাড়িয়ে থাকা কিছু মানুষ।
কেকে/এআর