মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি গবাদিপশুর খামারে বিষ প্রয়োগে মারা গেছে দেশীয় প্রজাতির ৮টি গরু (ষাড়)। গোখাদ্যের সাথে বিষ মিশিয়ে দেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ খামার মালিকের।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৬ নং আশিদ্রোন ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম রামনগর এলাকার সুলেমান মিয়ার ফার্মে এ ঘটনা ঘটেছে।
খামারের মালিক সুলেমান মিয়া (৩৮) জানান, বুধবার ভোর রাত থেকে হঠাৎ খামারের গরুগুলো একে একে অসুস্থ হতে থাকে। বৃহস্পতিবার প্রথমে সকালে দুইটি গরু মারা যায়। এরপর সন্ধা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মোট ৮টি গরু ছটফট করতে করতে মারা যায়। আরও কয়েকটি গরুর অবস্থা খুব আশঙ্কাজনক।
খামারের মালিক সুলেমানের বাবা মাসুক মিয়া দৈনিক খোলা কাগজকে জানান, আমাদের পরিবারের সাথে এলাকার রমজান মিয়ার সাথে বিবাহ ও ছাগল (খোয়াড়) সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। গত ৪ মার্চ (সোমবার) রমজান মিয়া আমাদের বাড়িতে এসে প্রকাশ্যে জানমালের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। আমাদের খামারে ছোট-বড় মিলে ২২টি গরু ছিল। বুধবার ভোর রাতে আমার ছেলে সুলেমান জানায়, দুইটি গরুর মুখ দিয়ে লালা বেরুতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরই মাটিতে ঢলে পড়ে। সাথে সাথে দুইটি গরুর মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে উপজেলা পশু কর্মকর্তা এবং থানায় বিষয়টি অবহিত করলে প্রাণি সম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা সরেজমিন আসেন।
কি কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে প্রশ্ন করলে খামার মালিক সুলেমান বলেন, গত পরশুদিন প্রতিবেশী রমজান মিয়ার ছাগলকে আমরা শংকরসেনা খোয়াড়ে দেওয়ার ঘটনার প্রতিশোধের জেরে রমজান মিয়া গোখাদ্যের বিষক্রিয়ায় এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে ধারণা করছি। এ ঘটনায় আমি শ্রীমঙ্গল প্রাণী সম্পদ অফিস ও ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি এবং থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
এ ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন খামারের মালিক সুলেমান ও তার পরিবারের সদস্যরা। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬-৭লাখ টাকা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুলোমান ও তার বাবা মাসুম মিয়া বলেন, যারা এই অবলা প্রাণিগুলোকে এভাবে বিষ প্রযোগে হত্যা করেছে, আমরা আল্লাহর কাছে তাদের বিচার চাই।
খামারের পরিচর্যাকারী শুক্কুর মিয়া বলেন, অন্যান্য দিনের মতো গরুগুলোকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হয়েছে। গরুগুলোকে রাতে খাবার দিয়ে ভোর রাতে উঠে দেখি দুইটি গরু মারা গেছে। পরে পর্যায়ক্রমে একে একে ঢলে পড়ে ৮টার মৃত্যু হয়। সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশি ও স্থানীয়রা দেখতে এসেছেন।
কৃষি উদ্যোক্তা সুলেমান আরো বলেন, প্রায় চার বছর ধরে এই খামারে দেশীয় জাতের গরু লালন-পালন করছি। গরুর মৃত্যুতে আমার ৬-৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই খামার ও কৃষিকাজের আয় দিয়ে আমি পরিবারের খরচ বহন করি। এখন আমি কীভাবে এত লোকসান পুষিয়ে পরিবারের খরচ বহন করেবো, তা নিয়ে বড় টেনশনে আছি। এ ঘটনায় আমি শ্রীমঙ্গল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। সরকার ও প্রশাসনের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক জড়িত ব্যক্তির উপযুক্ত বিচার ও সহযোগিতা চাই।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রমজান মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা অভিযোগ পেয়েছি, বিষ প্রয়োগ নাকি অন্য কোন কারণে মারা গেছে এটা ডাক্তারী রিপোর্ট ছাড়া বলা যাবে না। আমরা তদন্ত করছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সাবিনা ইয়াসমিন দৈনিক খোলা কাগজকে জানান, এমন দুঃখজনক ঘটনার খবর পেয়ে আমি রাত ১০টার দিকে ফিল্ড অফিসার (এলএফএ) মোজাহিদুল ইসলামকে ওই কৃষকের খামারে পাঠিয়েছি। আমার বাচ্চা অসুস্থ থাকায় আমি এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছি। তাই সরেজমিনে যেতে পারিনি। তবে ওই কৃষক থানায় মামলা করলে এর ভিত্তিতে আমরা ব্লাড স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে ফলাফল জানার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে প্রকৃত কারণ। এজন্য দুই মাসের মতো সময় লাগতে পারে।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে আমাকে জানানোর জন্য বলেছি। আগামীকাল প্রাণি সম্পদ অফিস সংশ্লিষ্টদের সাথে একটি মিটিং আছে। ওই মিটিংয়ে আলাপ করব কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়ানো যায়।
কেকে/এআর