জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশে তাদের জরুরি সহায়তা কার্যক্রম তহবিলের গুরুতর সংকটের ব্যাপারে সতর্ক করেছে। তহবিল সংকটের কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর খাদ্য সহায়তা হুমকির মুখে পড়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, জরুরি নতুন তহবিল না পাওয়া গেলে মাসিক রেশন অর্ধেক কমিয়ে প্রতিজনের জন্য ৬ মার্কিন ডলারে নামিয়ে আনতে হবে; যা বর্তমানে ১২.৫০ মার্কিন ডলার। অথচ, এখন শরণার্থীরা রমজানের শেষে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সব রোহিঙ্গা নির্ধারিত দোকানগুলো থেকে তাদের পছন্দের খাবার কেনার জন্য ভাউচার পান। পূর্ণ রেশন চালিয়ে যেতে ডব্লিউএফপির এপ্রিলে জরুরিভাবে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত মোট ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্ক্যালপেলি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট হিসেবে রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সম্পূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য সহায়তা কমানো হলে তারা আরো গভীর খাদ্য সংকটে পড়বে এবং বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রতিবেশী মায়ানমারের সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা এসব মানুষ নিরাপত্তার আশ্রয় খুঁজছে, যা ইতোমধ্যে চাপে থাকা সম্পদের ওপর আরো বড় চাপ সৃষ্টি করছে।
ডব্লিউএফপি ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্ভাব্য রেশন কমানোর বিষয়ে যোগাযোগ শুরু করেছে। এটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য পবিত্র রমজান মাস চলছে—একটি পবিত্র সময়, যা সংহতি ও পারস্পরিক সহায়তার প্রতীক, এবং যা রোহিঙ্গাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের জন্যও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্ক্যালপেলি বলেন, এখন আগের চেয়ে আরো বেশি রোহিঙ্গাদের আমাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এই পরিবারগুলোর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ডব্লিউএফপির খাদ্য সাহায্যই তাদের বাঁচার আর হতাশার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে। এই সংকট আরো বাড়তে না যাওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তা জরুরি।
২০২৩ সালে তীব্র অর্থায়ন সংকটের কারণে ডব্লিউএফপি ব্যক্তিপ্রতি মাসে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলার রেশন দিতে বাধ্য হয়, যা খাদ্যভোগের ব্যাপক হ্রাস এবং ২০১৭ সালের পর শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অপুষ্টির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে অর্থায়ন পাওয়ার পর রেশন বাড়ানো হয়।
ডব্লিউএফপি বলছে, যেহেতু এই জনগোষ্ঠীর কোনো আইনগত অবস্থান নেই, ক্যাম্পের বাইরে চলাফেরার স্বাধীনতা নেই এবং টেকসই জীবিকার সুযোগও নেই, ফলে রেশন আরো কমানো তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে তুলবে।
২০২৩ সালের মতো বিশেষ করে নারী ও মেয়েরা শোষণ, পাচার, পতিতাবৃত্তি, এবং গার্হস্থ্য সহিংসতার উচ্চতর ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। শিশুরা স্কুল থেকে বের হয়ে শিশুশ্রমে বাধ্য হতে পারে, এবং মেয়েরা অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যেতে পারে, কারণ পরিবারগুলো বাঁচতে তখন বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
কেকে/এএম