রাজধানীর আদাবর যেনো অপরাধের স্বর্গরাজ্য। গত ৩ মাসে গ্রেফতার হয়েছে ২৪৩ জন। এখনো আতঙ্কিত এলাকাবাসী। এ থানাটি একটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি থানা (৩০ নম্বর ওয়ার্ড)। সে হিসেবে আদাবরে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। তিন মাসে অপরাধ বিষয় ৩৮টি মামলা হলেও বেশিরভাগ মামলার বাদি পুলিশ। অপরাধের শিকার হয়ে মামলা করতে ভয় পায় সেখানকার নাগরিকরা। বাধ্য হয়ে নিজেদের বাদি হয়ে মামলা দিতে হয় বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ বলছে আদাবরে এখনো ৩-৪টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে, এর মধ্যে ডিবি সুমন গ্রুপ, মাউড়া সোহেল গ্রুপ, কব্জি কাটা আনোয়ার গ্রুপ। আদাবর থানার একটি মামলায় আনোয়ার জেল হাজতে রয়েছে, তাকে র্যাব গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে, তার গ্রুপের একাধিক সদস্য গ্রেফতারও হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। মাউড়া গ্রুপের প্রধান সোহেলও গ্রেফতার হয়েছে র্যাবের হাতে, কিন্তু তার সদস্যরা সক্রিয়।
এদিকে ডিবি সুমন নামে তার গ্রুপও সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্রুপগুলো চুরি ছিনতাই ডাকাতি ও মাদকের সাথে জড়িত বলে খোলা কাগজকে জানায় পুলিশ ও স্থানীয়রা। অনেক সময় তথ্য দিতেও ভয় পায় বলে তারা জানান।
ভয়ংকর অপরাধীর তালিকায় রয়েছে জনি। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৩টা। টুন্ডা বাবু একাধিক মামলার আসামি। সালমান আরেক ভয়ংকর কিশোর, তার বিরুদ্ধেও আদাবর থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। আনোয়ারের সহযোগী টুন্ডা বাবু, তার সহযোগী হৃদয়। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। এসব সদস্য আদাবর এলাকায় ছিনতাই চক্রের হোতা। তাদের সাথে রয়েছে- রাহিম, হোসাইন, ইমন, তফেল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। দিন হলে যাই করে, রাতে নামে ছিনতাই করতে। পুলিশ বলছে এদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
অপরাধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে শ্যামলী, মনসুরাবাদ, শেখেরটেক, মোহনপুর, স্লুইজগেট, সুনিবিড় হাউজিং, শ্যামলী দ্বতীয় প্রকল্প হাউজিং আদাবর ১০, বালুর মাঠ ও বেড়িবাঁধ এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর অপরাধ সংঘটিত হয়। এই এলাকাগুলো কয়েকটি গ্রুপ মিলে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর মধ্যে ডিবি সুমন গ্রুপ, মাওরা গ্রুপ, কব্জি কাটা আনোয়ার গ্রুপ।
পুলিশের ভাষ্যমতে অপরাধীদের ধরতে প্রতিদিন অভিযান হচ্ছে। অনেকেই জামিনে বেড়িয়ে আবার অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। গত তিন মাসে ২৪৩ জন গ্রেফতার। এর মধ্যে কিছু ভয়ংকর অপরাধীও রয়েছে। অনেকে আবার রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে অপরাধ করছে। অনেকেই আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আবারও অপরাধের সাথে সংঘটিত হয়ে থাকে বলে জানায় পুলিশ।
গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে এক ভুক্তভোগী পরিবার কাজ শেষে নিজ বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন মোহাম্মদীয় হাউজিং এলাকায়। এর পর তাদের জিম্মি করে টাকা দাবি করে ছিনতাইকারী চক্র। জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন পুলিশ। তখন ওই ভুক্তভোগীও মামলা করতে চায়নি। এরপর মামলা করলে সেই মামলায় চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ভুক্তভোগী জানান, আসামিরা জামিনে এসেই আমাদের ক্ষতি করবে সেই ভয়ে এখন ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। বর্তমানে ওই ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগী খোলা কাগজকে জানিয়েছে তারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় রয়েছেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদাবর শেখেরটেক এলাকায় রাত ১০ টার দিকে রিকশা থামিয়ে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে এক পরিবারকে ছিনতাই করে। ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মুহূর্তে ছড়িয়ে পরে।
অপরাধ দমনে কাজ করছে যৌথবাহিনী। র্যাব ২-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ কর্মকর্তা খান আসিফ তপু খোলা কাগজকে বলেন, গত কয়েক সপ্তাহের চেয়ে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা ভালো, যে গ্রুপগুলোর কথা এসেছে, শুধু এই গ্রুপই নয়, যেকোনো অপরাধীর গ্রুপ হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। গ্রুপগুলোকে র্যাব নজরদারিতে রেখেছে। আদাবর মোহাম্মদপুর এলাকায় নিয়মিত ১৬টি র্যাবের টহল টিম থাকছে এবং গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, যেখানেই অপরাধ সংঘটিত হবে সেখানেই র্যাব প্রতিরোধ করবে, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। কারো তদবির ও রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও সে যদি, অপরাধী হয়, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
কেকে/এজে