প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এটি শুধু একটি দিন নয়, এটি নারীদের প্রতি সম্মান, সমতা ও অধিকারের দাবিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। যুগে যুগে নারীরা লড়াই করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, সমাজে তাদের অবস্থান দৃঢ় করেছেন এবং নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পরিবর্তনের সূচনা করেছেন। তবে এখনো নারীদের সমানাধিকারের জন্য লড়াই শেষ হয়নি।
নারীর ক্ষমতায়ন, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাঃ নারীর ক্ষমতায়ন কোনো একদিনের আলোচনার বিষয় নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি থেকে শুরু করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও নারীরা তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে নিজেদের অবস্থান প্রমাণ করছেন। আজ নারীরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা ও শীর্ষস্থানীয় পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু এখনো কর্মক্ষেত্রে নারীদের বিভিন্ন বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়। বেতন বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, নেতৃত্বের সুযোগের অভাব—এসব সমস্যা আজও বিদ্যমান।
বিশ্বের অনেক দেশ নারীদের উন্নয়নের জন্য নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এই উন্নয়নের পথ এখনো অসম্পূর্ণ।
সমাজে নারীর ভূমিকাঃ নারী শুধু ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পরিবার পরিচালনার পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একজন মা যেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলেন, তেমনি একজন কর্মজীবী নারী সমাজের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেন। নারীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পারলে সমাজের সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব নয়।
শিক্ষার প্রসার নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। একটি শিক্ষিত নারী শুধু নিজের জীবন পরিবর্তন করে না, বরং সে তার পরিবার ও সমাজকেও এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে হবে।
নারী নির্যাতন ও প্রতিরোধঃ নারী নির্যাতন ও সহিংসতা আজও একটি বড় সামাজিক সমস্যা। পারিবারিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, বাল্যবিবাহ, পাচার—এসব সমস্যা এখনও নারীদের পথচলায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা সমাধানে সরকার, সমাজ এবং পরিবার—সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
আইন ও নীতির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় কঠোর আইন থাকা প্রয়োজন, তবে শুধু আইন করলেই হবে না, তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাও জরুরি। পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমাজ একত্রিত হয়।
নারীর অগ্রযাত্রায় আমাদের করণীয়ঃ এই দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা করা উচিত, আমরা যেন কেবল মুখে নয়, বাস্তব কর্মের মাধ্যমে নারীদের প্রতি সমান সুযোগ নিশ্চিত করি। কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা ও সমান মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা ও নেতৃত্বের সুযোগ নারীদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক গণ্ডিতে নারীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, নারী দিবস উদযাপন মানে শুধু ফুল দেওয়া বা শুভেচ্ছা জানানো নয়, বরং এটি একটি প্রতিশ্রুতি যে আমরা সবাই মিলে এমন এক সমাজ গড়ে তুলব যেখানে লিঙ্গ কোনো বাধা হবে না, নারীরা তাদের স্বপ্ন পূরণে বাধাহীন পথ পাবে।
এই নারী দিবসে আমাদের চাওয়া-একটি বৈষম্যহীন সমাজ, যেখানে নারীর সম্ভাবনা ও সাফল্যকে বাধাহীনভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে সেই সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করি।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
কেকে/এজে