মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫,
৯ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: নির্বাচনে জনআস্থা ফিরিয়ে আনাই ইসির বড় চ্যালেঞ্জ: সাইফুল হক      বাজারে বাণিজ্য উপদেষ্টার মনোযোগ বাড়াতে হবে: ইসলামী আন্দোলন      কোনো অভ্যুত্থান বা বিপ্লব ৩৬ দিনে হয় না: রুমিন ফারহানা      সিভিল ড্রেসে আসামি ধরতে পারবে না পুলিশ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      বেনজীরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি      আমরা এমন পৃথিবী গড়ি, যেখানে কেউ দরিদ্র থাকবে না: ড. ইউনূস      দেশের ভূখণ্ডে আরকান আর্মি, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন      
খোলাকাগজ স্পেশাল
অপারেশন ডেভিল হান্টের এক মাস
অস্বস্তি নিয়েই বসবাস
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: রোববার, ৯ মার্চ, ২০২৫, ৯:৫৭ এএম আপডেট: ০৯.০৩.২০২৫ ১২:৩১ পিএম  (ভিজিটর : ১৬৪)
ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে

ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতির মুখে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের সেনা-পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছিল এক মাস আগে। গতকাল শনিবার এই অভিযানের এক মাস পুরো হয়েছে। তবে যে কারণে এই অভিযান, সেই লক্ষ্য কতটুকু পূরণ হয়েছে তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।

জেলায় জেলায় অভিযান চলানোর পরও দেশের আইনশ্ঙ্খৃলা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি বলে জানাচ্ছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। বরং অভিযান চলার মধ্যেই একের পর এক ডাকাতি, প্রকাশ্যে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই, গণপিটুনি দিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাধা, মব সৃষ্টি করে বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট, এমনকি পুলিশের ওপর হামলার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। এর মধ্যেই আবার ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া অঞ্চলে চরমপন্থিদের তৎপরতা বাড়তে শুরু করেছে।

সার্বিক বিবেচনায় প্রথম মাসে অপারেশন ডেভিল হান্টে আশানুরূপ সফলতা দেখা যায়নি বলে মনে করছেন মানাবাধিকার কর্মীদের অনেকে। তারা মনে করছেন- ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের এই অভিযান অব্যাহত রাখা হলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না; বরং মানুষের মাঝে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, ‘সার্বিক মূল্যায়নে অভিযানটিকে এখন পর্যন্ত খুব একটা সফল বলা যাচ্ছে না। সফলতা যেভাবে আশা করা হয়েছিল, সেভাবে হচ্ছে না।’ 

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করার পরেও গত একমাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। উপরন্তু অভিযানের মধ্যেই ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ এবং গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে, ফ্রেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর আগের মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে দেশে যেখানে ৪২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, ফেব্রুয়ারিতে সেটি বেড়ে ৫৭-তে এসে ঠেকেছে। এর মধ্যে অন্তত দুই জন নারী ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। বেড়েছে দলবেধে ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার সংখ্যাও। জানুয়ারিতে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ১৫টি, যা ফেব্রুয়ারিতে এসে ১৭ হয়েছে। একই সময়ে, ধর্ষণ চেষ্টার সংখ্যা ১৬ থেকে বেড়ে ১৯ হয়েছে। এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে নারী ও শিশুদের অপহরণ ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছিল ১৫টি। ফেব্রুয়ারিতে সংখ্যাটি বেড়ে ১৮ তে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, গণপিটুনির সংখ্যা কিছুটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এরকম ঘটনায় জানুয়ারিতে ১২ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়েছিল। সেখানে ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনির ঘটনায় প্রাণ গেছে আটজনের, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৯ জন। আর মার্চের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাত সন্দেহে আরো দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বেশ কিছু ঘটনার পর অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হতে দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীদের অনেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন। 

পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত করতে দেখা গেছে। সেখানে দ্রুতই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তেমনটি লক্ষ্য করা যায়নি বলে জানাচ্ছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন- উল্টো একের পর এক অপরাধের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক অনেকক্ষেত্রে আরো বেড়ে গেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, অপরাধ দমনের যে কোনো অভিযানের সফলতা বা ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে পদক্ষেপটি সাধারণ মানুষের মনে কতটুকু স্বস্তি ফেরাতে পেরেছে বা পারছে, সেটার ওপর। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘কেবল পরিসংখ্যান দিয়ে এটা বোঝা যায় না। কারণ রিপোর্টেড ক্রাইম ও অ্যাকচুয়াল ক্রাইমের সংখ্যার মধ্যে সব সময় পার্থক্য থাকে। সেজন্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি আছে কি-না, বা তারা কতটুকু নিরাপদবোধ করছে, সেটা জানা জরুরি।’

উল্লেখ্য যে, গত কয়েক সপ্তাহে ছিনতাই ও ডাকাতির বেশ কিছু ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। এর মধ্যে ঢাকার বনশ্রী এলাকার একটি ভিডিওতে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণালংকার লুট করতে দেখা গেছে। ছিনতাইকারীরা সেদিন প্রায় দুইশ ভরির মতো স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়েছে বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। আরো কয়েকটি ছিনতাইয়ের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে, যেখানে ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মালামাল লুট করতে দেখা যায়।

৫ আগস্টের পর ঢাকার যেসব এলাকায় ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটতে দেখা গেছে, সেগুলোর মধ্যে মোহাম্মদপুর একটি। অপারেশন ডেভিল হান্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই এলাকায় অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী, যেখানে গুলিতে দুইজন নিহতও হয়। নিহতরা ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছিল বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। আটক করা হয় আরো অন্তত পাঁচজনকে। মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘটনার পর চুরি-ছিনতাই কিছুটা কমেছে বলেই মনে হচ্ছে। তারপরও মানুষের মনে আতঙ্ক। বিশেষ করে ঈদের আগে পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটা নিয়ে সবাই চিন্তিত।’

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত ছয় মাসে বাংলাদেশে ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির ঘটনায় অন্তত সাড়ে ১১৪৫টি মামলা হয়েছে, যার সংখ্যা একবছর আগে ছিল ৭৬৩টি। এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ অনেক এলাকায় রাতে দলবেধে পাহারা দিতে দেখা যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এছাড়া নিরাপত্তা শঙ্কা থেকে অনেকে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্লোজড-সার্কিট, তথা সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করছেন। সেই সঙ্গে, আত্মরক্ষায় কেউ কেউ স্টিল, রড ও কাঠের লাঠি, এমনকি টেজার গানও কিনছেন বলে জানা যাচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেভাবে উন্নতি হয়নি’ বলা হলেও ভিন্ন কথা বলছে সরকার। অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করার পর দেশে অপরাধ কমেছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অবশ্য স্বীকার করছেন যে, পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলায়নি। 

তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কিছু কিছু জায়গায় উন্নতি হয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় অবনতি হয়েছে। হত্যার মতো বড় ধরনের অপরাধ কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বেড়েছে। তবে অপরাধের ঘটনা যতটা ঘটছে, তার চেয়েও বেশি প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে।’

কেকে/এজে


আরও সংবাদ   বিষয়:  অপারেশন ডেভিল হান্ট  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

‘আগামীতে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গঠন হবে’
কুয়েটে অনশনরত চার শিক্ষার্থী অসুস্থ
নির্বাচনে জনআস্থা ফিরিয়ে আনাই ইসির বড় চ্যালেঞ্জ: সাইফুল হক
সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মাঝে বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ
বাজারে বাণিজ্য উপদেষ্টার মনোযোগ বাড়াতে হবে: ইসলামী আন্দোলন

সর্বাধিক পঠিত

খোলা কাগজে সংবাদ প্রকাশের ৫ ঘণ্টার মধ্যে কোটি টাকা ফেরত দিলেন মেয়র
বড় ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে হার্ট অ্যাটাকে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু
ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়াতে থানা ঘেরাও, বিক্ষোভকারীদের ওপর বিএনপির হামলা
অটোচালকদের আড়ালে ছাত্রলীগ-যুবলীগের তাণ্ডব
‘আমার লজ্জা নেই’ পোশাক-চেহারা বিতর্কে যা বললেন বিদ্যা

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close