ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুদ্বীপে গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রীন ক্যাম্পাস’।
রোববার (৯ মার্চ) সকালে নজরুল ভাস্কর্যের সামনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা দফতরের সিদ্ধান্তে চারুদ্বীপ এলাকায় ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী বরই, কাঁঠাল ও তালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এমনকি কিছু গাছের গোড়ায় এস্কেভেটর দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, যার ফলে সেগুলো মরে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, চারুদ্বীপ ক্যাম্পাসের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান। এখানে অপ্রয়োজনীয় রাস্তা নির্মাণের নামে সরকারি অর্থ অপচয় করা হচ্ছে এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
গ্রীন ক্যাম্পাসের সভাপতি সাজন চন্দ্র বলেন, একটি গাছের পরিপূর্ণ বিকাশে ২০-২৫ বছর সময় লাগে। অথচ প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা চাই, পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দ্রুত নতুন গাছ লাগানো হোক।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বৃক্ষনিধন ও সরকারি অর্থের অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবিলম্বে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতে আরো বড় কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন। স্মারকলিপিতে তারা পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন—
১. চারুদ্বীপে বৃক্ষনিধনের কারণ, কর্তনকৃত গাছের কাঠ কোথায় নেওয়া হয়েছে, এবং আলামত লোপাটের চেষ্টা কেন করা হলো—এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
২. ক্যাম্পাসে ভবিষ্যতে কোনো অযৌক্তিক বৃক্ষনিধন করা যাবে না এবং ইতোমধ্যে যেসব গাছ কাটা হয়েছে, তার জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
৩. পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস গড়তে রাস্তা নির্মাণের সময় ধূলাবালি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং যেখানে আরসিসি নির্মাণ হয়েছে, সেখানে দ্রুত বিটুমিনের আস্তরণ দিতে হবে।
৪. ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় পর্যাপ্ত ডাস্টবিন স্থাপন করতে হবে এবং মশার উপদ্রব কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দফতরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে, কারণ তার কাজ পরিচালনার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই প্রকল্পের কাজ আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই শুরু হয়েছিল। অনেক সময় লেবারদের অসচেতনতার কারণে এমন ভুল হয়ে যায়। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে।
ডিপিডি হাফিজুর রহমানের নিয়োগ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, নতুন ডিপিডি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। যোগ্য কাউকে পাওয়া গেলে তাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে আপাতত ক্যাম্পাসের চলমান প্রকল্পগুলোর বিষয়ে একমাত্র তিনিই ভালোভাবে জানেন।
কেকে/এজে