মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল ৫০ শয্যা বিশিষ্ট শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট, মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), সহকারী সার্জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফী), স্বাস্থ্য সহকারী, ওয়ার্ড বয়, আয়া, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ মোট ৩৭টি পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে শতাধিক রোগীদের লাইন। অনেকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কেউ চর্ম, কেউ মেডিসিন, কেউ গাইনি, কেউ চক্ষু, কেউ নাক-কান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু চর্ম, মেডিসিন, গাইনিসহ অন্যান্য বিষয়ে চিকিৎসক (কনসালটেন্ট) না থাকায় তারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ হাসপাতালে কনসালটেন্ট পদে ৬টি পদ শূন্য থাকার কারণে উপজেলোর ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বাসিন্দাদেরঅনেকেই প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীসহ আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষেরা ছুটছেন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে বা সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০-৪০০ রোগী সেবা নিচ্ছেন, অন্তঃবিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ জনের অধিক রোগী ভর্তি হচ্ছেন এবং জরুরি বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে শতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসক সংকট থাকায় সেবা দিতে ডাক্তার ও নার্সরা যেভাবে হিমশিম খাচ্ছেন তেমনি সাধারণ রোগীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছয়টি কনসালটেন্ট পদ এখনও শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলোজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক-কান), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), মেডিকেল অফিসার পদে শূন্য রয়েছে ৫টি, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদে শূন্য রয়েছে ১টি, সহকারী সার্জন পদে শূন্য রয়েছে ৪টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে শূন্য রয়েছে ৭টি, ফার্মাসিস্ট পদে শূন্য রয়েছে ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই) পদে শূন্য রয়েছে ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফী) পদে শূন্য রয়েছে ১টি, পরিসংখ্যানবিদ পদে শূন্য রয়েছে ১টি, কার্ডিওগ্রাফার পদে শূন্য রয়েছে ১টি, কম্পিউটার অপারেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, স্বাস্থ্য সহকারী পদে শূন্য রয়েছে ৪টি, হেলথ এডুকেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, অফিস সহায়ক পদে শূন্য রয়েছে ২টি, ওয়ার্ড বয় পদে শূন্য রয়েছে ২টি, আয়া পদে শূন্য রয়েছে ১টি, বাবুর্চি পদে শূন্য রয়েছে ১টি এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। যার কারণে গত ১৮ বছর ধরে এক্সরে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং ইসিজি মেশিনটি অকেজো পড়ে আছে।
এ ছাড়া চিকিৎসক সংকটের কারণে উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ৪জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে দিয়ে ইমার্জেন্সি ডিউটি করানো হয়। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে তৃণমূলে স্বাস্থ্য সেবা।
বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রেগীদের অভিযোগ, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা ও সবধরণের সরকারি ওষুধ পাওয়া যায় না। রোগীকে ভালো করে দেখার আগেই সদর হাসপাতালে রেফার্ড করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন জানান, বিভিন্ন পদে প্রচুর জনবল সংকটের মধ্যে আমরা রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনবল চেয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছি। জনবল নিয়োগ হলে রোগীদের আরও ভালো সেবা দেওয়া যাবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, আসলে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে জনবল সংকট থাকায় যথাযথ সেবা নিশ্চিত করাটা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। আশা করছি জনবল নিয়োগের মাধ্যমে দ্রুতই কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করা হবে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান জানান, ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন পদে জনবল সংকটের বিষয়টি আমার জানা আছে। এ বিষয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠিয়ে শূন্য পদের চাহিদা জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি মন্ত্রণালয় দ্রুতই শূন্য পদ পূরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে সম্প্রতি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন সারা দেশে দ্রুত চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ প্রদান করা হবে। আমরা আশাবাদি ডাক্তার, নার্স, টেকনেশিয়ান, সানোলজিস্ট, আয়া, ওয়ার্ডবয়সহ শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল শূন্য পদইআগামী তিন-চার মাসের মধ্যে পূরণ করা সম্ভব হবে।
কেকে/এএম