গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ ও সদস্যসচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিকের বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় এক নেতার বাসায় বসে একসঙ্গে ১৫টি ইউনিয়ন কমিটি অনুমোদনের অভিযোগ উঠেছে। এতে দীর্ঘদিন দলের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করা ত্যাগী নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
রোববার (৯ মার্চ) বিকালে উপজেলার ধুমাইটারী ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা মাঠে এ সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির বঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, কোনো ধরনের কর্মীসভা ছাড়াই তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে সুবিধাভোগীদের পদে বসিয়ে কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। এতে প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন এবং দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপির দুর্দিনে যারা রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, তাদের অনেককে কমিটিতে রাখা হয়নি। বরং যারা কখনো রাজপথের রাজনীতি করেননি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে সুবিধা নিয়েছেন, তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।
নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তোলেন, ‘কীভাবে ঢাকায় বসে, কোনো কর্মীসভা ছাড়াই একসঙ্গে ১৫টি ইউনিয়নের কমিটি অনুমোদন করা হলো? এটি কি বিএনপির গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?’
বক্তারা জানান, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটি গঠনের আগে কর্মী সমাবেশ করে তৃণমূলের মতামত নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ ও বিক্ষুব্ধ হয়েছেন।
তারা অভিযোগ করেন, ‘উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ তিন মাস থাকার কথা থাকলেও, সেটি তিন বছর ধরে চলছে। একই আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেছেন, যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক। বিএনপির ইতিহাসে কখনো ঢাকায় বসে ইউনিয়ন কমিটি অনুমোদন করার নজির নেই। এটি চরম অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতির উদাহরণ।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘২০২২ সালে জেলা বিএনপি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছিল। তারা ইউনিয়ন কমিটিগুলো করতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২৩ সালে আরেকটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ২০২২ সালের আহ্বায়ক কমিটি গোপনে ২০২৩ সালের কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ইউনিয়ন কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং জেলা বিএনপিও এ নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো অবস্থান নেয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের আগে পদ-পদবি বাণিজ্য হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তি ও সুবিধাভোগীদের পদ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে। আমরা রাজপথে লড়েছি, নির্যাতন সহ্য করেছি, জেল খেটেছি। অথচ আমাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির সুবিধাভোগীদের নেতৃত্বে বসানো হয়েছে। এটা কি বিএনপির জন্য কল্যাণকর?
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা স্পষ্ট দাবি জানিয়ে বলেন, ‘বিতর্কিত কমিটি বাতিল কর প্রকৃত ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে এবং জেলা বিএনপিকে দ্রুত এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। যদি এই কমিটি বাতিল না করা হয়, তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।’
তারা আরো বলেন, ‘বিএনপিকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। অন্যথায় দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়তেই থাকবে, যা ভবিষ্যতে দলের জন্য ক্ষতিকর হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজমুল হুদা, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাজেদুর রহমান প্রামাণিক রুনু, শান্তিরাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন মিলন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জামিউল ইসলাম জমু, রামজীবন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আল আজাদ, বেলকা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন সরকার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য শামসুজ্জামান প্রামাণিক তনু, সাবকে ছাত্র নেতা মাইদুল ইসলাম বাবু, দহবন্দ ইউনিয়নের বিএনপি নেতা আসহান হাবীব ডলার, যুবদলের সাবেক সদস্য মোস্তাইন বিল্লাহ প্রমুখ।
কেকে/এএম