চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্বের দেখায় নিউজিল্যান্ডকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। ফাইনালে সেই প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ ছিল কিউইদের সামনে। তবে ব্যাটে সুবিধা করতে পারেননি কিউই ব্যাটাররা। মিডল অর্ডার ব্যর্থতায় বড় সংগ্রহ গড়া হয়নি। ড্যারিল মিচেল ও মাইকেল ব্রেসওয়েলের ফিফটিতে কোনোরকমে আড়াইশ ছুঁয়েছে নিউজিল্যান্ড। দুবাইয়ে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। ২৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৯ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। আইসিসির এ ইভেন্টের সিংহাসনের আরো চূড়ায় পৌঁছে যায় তারা। ওয়ানডে সংস্করণের এ টুর্নামেন্টে এটি তাদের ৩য় শিরোপা। একমাত্র অস্ট্রেলিয়া ছাড়া বাকিদের কারও ১টির বেশি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের কৃর্তি নেই।
রোববার (৯ মার্চ) দুবাইয়ে ফাইনালের এ মহারণে আগে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনারের ব্যাটে ভালো শুরু পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়াং বেশ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। বিশেষ করে রাচিন। এ ইনফর্ম ব্যাটার পেসারদের বেশ স্বাছন্দ্যেই খেলছিলেন। যদিও সপ্তম ওভারে মোহাম্মদ শামিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েও জীবন পেয়েছিলেন।
তবে ভারত স্পিন আক্রমণে যাওয়ার পর বেশ ভুগেছেন রাচিন। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে বরুণকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছিলেন রাচিন। এবারও বল হাতে পেয়ে জমাতে পারেননি ফিল্ডার। তাতে আরো একবার জীবন পান এই ওপেনার। রাচিন জীবন পেলেও একই ওভারের পঞ্চম বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন উইল ইয়াং। এই ওপেনার সাজঘরে ফেরার আগে ২৩ বলে করেছেন ১৫ রান।
ফাইনালের মতো বড় ম্যাচে দুইবার জীবন পেয়েও বেশি দূর এগোতে পারলেন না রাচিন। এগারোতম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই রাচিনকে ফিরিয়েছেন কুলদীপ যাদব। এ চায়নাম্যানের গুগলিতে বোকা বনে যান রাচিন। বোল্ড হওয়ার আগে ২৯ বলে করেছেন ৩৭ রান।
বড় ম্যাচে বেশিরভাগ সময়ই রান পান উইলিয়ামসন। তবে গতকাল সেই রীতি ভাঙলেন তিনি নিজেই। বাজে এক শটে রীতিমতো আত্মহত্যা করেছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার! রাচিন ফেরার পর বড় দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কুলদীপকে ফ্লিক করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। তার আগে ১৪ বলে করেছেন ১১ রান।
এরপর টম ল্যাথামও উইকেটে থিতু হয়ে ফিরেছেন। কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ৩০ বলে করেছেন ১৪ রান। ১০৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর গ্লেন ফিলিপসকে সঙ্গে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন ড্যারিল মিচেল। ভালো শুরু পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি ফিলিপস। ৫২ বলে করেছেন ৩৪ রান।
বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মিচেল। দেখে-শুনে খেলায় প্রচুর ডট বল খেলেছেন। তাই ব্যক্তিগত ফিফটির পর গিয়ার পরিবর্তন করেন। তাতেই বাড়ে বিপদ। ৬৩ রান করে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
মিচেল ফিরলে দলের হাল ধরেন ব্রেসওয়েল। তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই লড়াই করার পুঁজি পায় দল। ৪০ বলে অপরাজিত ৫৩ রান করেছেন এই ব্যাটার।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দুর্দন্ত শুরু করেছিলেন বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামা রোহিত শর্মা এবং শুবমান গিল। কাইল জেমিসনের করা ইনিংসের দ্বিতীয় বলটিই অনসাইড দিয়ে তুলে মারলেন রোহিত। বিশাল এক ছক্কায় শুরু হয় ভারতের ইনিংস। রোহিত-গিলের উদ্বোধনী জুটিতে শতকের দেখা পায় ভারত। পরিসংখ্যান বলছে, তাদের উদ্বোধনী জুটি শতক ছাড়িয়েছে, এমন ম্যাচে কখনোই হারেনি ভারত। এখন পর্যন্ত যে ৬ ম্যাচে রোহিত-গিলের উদ্বোধনী জুটি তিন অঙ্কের ঘর ছুঁয়েছে, তার সবকটি ম্যাচেই ফল এসেছে ভারতের পক্ষে।
এর ব্যতিক্রম হয়নি আজকেও। শতক জুটির একটু পরই সুপারম্যান গ্লেন ফিলিপসের দেখা মিলেছে। রোহিত-গিলের জুটি ভাঙতে বিশেষ কিছুর প্রয়োজন ছিল নিউজিল্যান্ডের। এক্সট্রা কাভার দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে শট খেলেছিলেন গিল, শূন্যে লাফিয়ে এক হাতে অতিমানবীয় এক ক্যাচ লুফে নিয়ে তাকে সাজঘরের পথ দেখান ফিলিপস। ৩১ রানে আউট হন গিল। তিনে মেমে দুই বলের বেশি টিকেননি বিরাট কোহলি। বিগ গেম প্লেয়ার হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে তাকে ১ রানেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। এর ৭ ওভার পর ফিরে যান রোহিত শর্মাও। ভারতের এ অধিনায়ককে ৭৬ রানে থামান রাচিন রবীন্দ্র। গিল এবং কোহলি ফিরে যাওয়ার পরে রোহিতের ওপর চাপ বাড়ছিল। সে চাপেই যেন ভেঙে পড়লেন রোহিত। রবীন্দ্রকে এগিয়ে এসে তুলে মারতে চেয়েছিলেন, উল্টো বলের লাইন মিস করে স্টাম্পড হলেন তিনি। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার সাজঘরের পথ ধরার পর ভারতের ত্রাতা হিসেবে ব্যাট ধরেন শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। এ দুজনের ব্যাটে জয়ের গন্ধ পাচ্ছিল ভারত। তবে ৩৯তম ওভারে ফিরতে হয় আইয়াকে। মিচেল স্যান্টনারের মিডল স্টাম্প লাইনের বল পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ের গরমিলে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন। ফাইন লেগ থেকে দৌড়ে সামনে ঝাপিয়ে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নেন রবীন্দ্র। তাতে ৪৮ রানে থামতে হয়েছে শ্রেয়াস আইয়ারকে। তার ক্ষাণিক পরেই ২৯ রান করে শ্রেয়াসের পথ ধরেন অক্ষর। মাইকেল ব্রেসওয়েলের ওপর চড়াও হতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দেন অক্ষর প্যাটেল।
৫ উইকেট হারানোর পরও লম্বা ব্যাটিং লাইনআপের সুফল পাচ্ছিল ভারত। দলটির হয়ে হাল ধরেন লোকেশ রাহুল এবং হার্দিক পান্ডিয়া। তাদের ব্যাটেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় নিশ্চিত করে ভারত। লোকেশ রাহুল ৩৩ বলে ৩৪ এবং হার্দিক পান্ডিয়া ৬ বলে অপরাজিত ৯ রান করে ৪ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
কেকে/ এমএস