মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫,
২৭ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
শিরোনাম: শেখ মুজিবের ছবি থাকায় ঈদে ব্যাংকে মিলবে না নতুন নোট      ছেলের সেমিস্টার ফি ৪০০ কোটি পাঠালেন বাংলাদেশি বাবা      রাখাল রাহাকে ভণ্ড বুদ্ধিজীবী বললেন সারজিস আলম      পরিবারসহ সালমান এফ রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা      রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান      ভলকার তুর্কের মন্তব্যে যা জানালো সেনাবাহিনী      পদত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম      
গ্রামবাংলা
শরীয়তপুরে চাঁদনী হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর: আজও বিচার পায়নি পরিবার
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫, ৮:৩৬ পিএম  (ভিজিটর : ৮৬)
চাঁদনী আক্তার হেনা

চাঁদনী আক্তার হেনা

২০১৫ সালের মার্চে শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনী আক্তার হেনার (১৩) ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে পারেনি প্রশাসন। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে চাপা ক্ষোভ।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলাধীন ছোট মুলনা গ্রামের আজগর খানের মেয়ে ও জাজিরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনী আক্তার হেনা ২০১৫ সালের ১১ মার্চ একই গ্রামের সহপাঠী পাখি আক্তারের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। সহপাঠী বাড়ি ফিরলেও চাঁদনী আর ফিরে আসেনি।

নিখোঁজের তিন দিন পর চাঁদনীর লাশ বাড়ির কাছেই একটি পরিত্যক্ত খালে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় চাঁদনীর বাবা প্রথমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এর তিন মাস পর তিনি পুনরায় শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আসামিরা ছিলেন—মোসা. পাখি আক্তার, মিলন ওরফে দুলাল মাদবর, জুয়েল ঢালী, মাসুদ বেপারী, ওয়াসিম তালুকদার, সোহেল ঢালী, রাজন, রুবেল তালুকদার, তোতা বেপারী।

এরপর ২০১৭ সালের ১৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে প্রধান আসামি মোসা. পাখি আক্তার ও মিলন ওরফে দুলাল মাদবরসহ ৪ জনকে বাদ দিয়ে মাসুদ বেপারী, ওয়াসিম তালুকদার, জুয়েল ঢালী, রুবেল তালুকদার ও রাজন পাঠান নামের ৫ জনকে আসামি করা হয়। 

তখন মামলার বাদী হত্যাকাণ্ডের শিকার শিক্ষার্থীর বাবা আজগর খান আদালতে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করার কথা জানালেও তিনি ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তা আর করতে পারেননি।

এরপর ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুস সালাম এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। সেখানে আসামিদের বেকসুর খালাস দিয়ে রায়ে উল্লেখ করা হয়কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

চাঁদনীর মা শরীফা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, আমার মেয়েটাকে কুকুর-শিয়ালের দল চিরে খেয়েছে, ওরা আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। আমার ছোট মেয়েটাকে ভয়ে ঠিকমতো স্কুলে পাঠাতে পারিনি, ভয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। আমার বড় ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী, আরেক ছেলে ঢাকা থাকে। ঢাকায় থাকা ছেলে ঠিকমতো বাড়িতে এসে থাকতে পারেনি। বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওরা এমপির দল করত, তাই এগুলো করার সাহস পেত। এই সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি—আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে মরতে চাই।

বাদীপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, মামলাটির রায়ের পূর্বে সিআইডির যে কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, তার সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি এবং আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও নেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে বিচারিক পর্যায়ে এসে মামলাটি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে সব আসামি খালাস পেয়েছে।

চাঁদনীর বড়ভাই ইকবাল খান মালয়েশিয়া থেকে মুঠোফোনে বলেন, আমার বোনকে যারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আমি প্রবাসে থাকার কারণে মামলার বিষয়টি নিয়ে কারো সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমি শিগগিরই প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আইনি লড়াই শুরু করব। এ লড়াইয়ে আমি সকলের সহযোগিতা চাই।

এদিকে ২০১৫ সালে চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংস ঘটনায় হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার বাস্তবায়নের দাবিতে গঠিত সামাজিক সংগঠন ‘নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ’ ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চাঁদনীর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চের আহ্বায়ক জামাল মাদবর বলেন, ২০১৫ সালের ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির মেধাবি ছাত্রী চাঁদনীকে কতিপয় নরপিশাচরা ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর চাঁদনীর বাবা ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইনে মামলা দায়ের করলেও দীর্ঘ চার বছর চলে তদন্তের নামে প্রহসন। প্রকৃত আসামিদের আড়াল করে মামলাটি মিটিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টাও চলে। ১০ বছর পার হলেও ভুক্তভুগীর পরিবারসহ আমরা সচেতন নাগরিক সমাজ বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। নামকাওয়াস্তা একটি চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, যেখানে বাদ দেওয়া হয়েছে প্রধান আসামিদের নাম। এরপর ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

তিনি আরো বলেন, যে রায়ে ওই চার্জশিটের আসামিদেরও বেকসুর খালাস দেওয়া হয় আর রায়ে উল্লেখ করা হয়কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে প্রশাসন কী বলতে চায়? চাঁদনীকে ভূতে মেরেছে? আমরা জানতে চাই এমন নৃশংস হত্যাকারীদের বিচার কেন আজও কার্যকর করতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো চাঁদনীর এমন ভয়ংকর পরিণতি আমরা দেখতে চাই না। অনতিবিলম্বে এই শিশু শিক্ষার্থী চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার চাই। নয়তো নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, মামলার বাদী, চাঁদনীর হতভাগা বাবা, সন্তানের হত্যাকাণ্ডের বিচার না পেয়ে আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কতটা লজ্জার বিষয়। স্বাধীন দেশের একজন পিতা সন্তানের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আমরা এই সংস্কৃতির অবসান চাই। আমরা চাই চাঁদনীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে মূল হোতাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি কার্যকর করা হোক।

কেকে/এএম

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

কৃষকদল নেতা মান্নাফের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের অভিযোগ
বাঞ্ছারামপুরে বিএনপি ও যুবদলের ঈদ সামগ্রী বিতরণ
মশাল মিছিলের পর গ্রাফিতি আন্দোলনের ঘোষণা বাকৃবি নারী শিক্ষার্থীদের
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
সালথা-ফরিদপুর সড়কে মাহিন্দ্র উল্টে প্রাণ গেলো কৃষকের

সর্বাধিক পঠিত

সালথা-ফরিদপুর সড়কে মাহিন্দ্র উল্টে প্রাণ গেলো কৃষকের
মাধবপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
এবার গাজীপুরে ৯ বছরের শিশুকে কাজের কথা বলে ধর্ষণের অভিযোগ
ছেলের সেমিস্টার ফি ৪০০ কোটি পাঠালেন বাংলাদেশি বাবা
টঙ্গী সরকারি ক‌লেজ ছাত্রদ‌লের উদ্যোগে মানববন্ধন

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close