নাটোরের বাগাতিপাড়ায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে গঠিত নতুন উপজেলা প্রেসক্লাবের কমিটি স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ কমিটির মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নাফ।
সোমবার (১০ মার্চ) সকালে ‘বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাব’ নামে এই কমিটি ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তালিকা প্রকাশ করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে এটি উপজেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে।
অভিযোগ উঠেছে, ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি’ এবং ‘সন্ত্রাসী’ চক্রকে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যেই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত এই নেতাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।
সূত্র জানায়, কমিটির সভাপতি করা হয়েছে হত্যা মামলার আসামি এবং আ’লীগের স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত মিজানুর রহমান ওরফে ‘ফিটিং মিজান’ কে। সহ-সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন বাগাতিপাড়া পৌর ৫নং ওয়ার্ড (সোনাপাতিল) আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম রুপক।
অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত কৃষকদলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মান্নাফ নিজেই। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পৌর শাখার সাবেক সেক্রেটারি ও ওএমএস ডিলারের ম্যানেজার ফজলে রাব্বিকে।
কোষাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ও সোনালী ব্যাংকের পিয়ন মেহেদী হাসান সুমন। দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে অস্ত্র মামলার আসামি তোসাদ্দেক সরকার ওরফে তিতাসকে। প্রচার সম্পাদক হিসেবে আছেন মাদক ব্যবসার অভিযোগে আলোচিত রাজিবুল ইসলাম ওরফে ইলেকট্রিশিয়ান বাবু।
নির্বাহী সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পৌর কমিটির সভাপতি ও টিসিবি ডিলার আসাদুজ্জামান মিতুসহ আরো ১২ জন বিতর্কিত ব্যক্তি। কমিটির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে গেজেট বাতিল হওয়া কথিত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ বিক্রির অভিযোগে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল নবী রেনুকে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে দমন এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের পুনর্বাসনই এ কমিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্য। অভিযোগ উঠেছে, এতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীরা জড়িত।
বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দায় দল নেবে না। এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাটোর জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মোনায়েম ইসলাম রুমি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। ছাত্র-জনতা একজোট হয়ে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।’
নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘ছদ্মবেশে কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি বিএনপির ছত্রছায়ায় ফিরতে পারবে না। দলের কেউ জড়িত থাকলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সাংবাদিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশাকে গোষ্ঠীগত স্বার্থে ব্যবহার করে রাজনৈতিক মাঠ কলুষিত করা হচ্ছে। এই ঘটনা মুক্ত সাংবাদিকতার আদর্শে আঘাত করেছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
কেকে/ এমএস