গত
২০ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ীরা নিজেরাই লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে সয়াবিন তেলের নতুন
মূল্য ঘোষণা দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তখন তারা নতুন এই দাম কার্যকর করতে
সরকারের কাছে ১০ দিন সময় চায় এবং গত ১ মার্চ থেকে এই মূল্য কার্যকর করার
ঘোষণা দেয়। ১ মার্চ থেকে ব্যবসায়ীরা নতুন দাম কার্যকর করেননি।
হ্রাসকৃত
মূল্যের সয়াবিন তেল বাজারে না আসায় শনিবার (২ মার্চ) বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
আহসানুল ইসলাম টিটু এক অনুষ্ঠানে জানান, মিল পর্যায়ে কমেছে রোববার (৩
মার্চ) থেকেই খুচরা পর্যায়েও মিলবে কম দামের সয়াবিন তেল। বাণিজ্য
প্রতিমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরও রোববার থেকেও খুচা পর্যায়ে কম দামের সয়াবিন
তেল পাওয়া যায়নি। কোথাও কোথাও সয়াবিনের দাম কিছুটা কম রাখা হচ্ছে। বাজারে
নতুন মোড়কের বোতলজাত সয়াবিন আসেনি, এমন অজুহাত দেখিয়ে অনেক বিক্রেতাই
সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে আগের দামই নিচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে
বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে খোলা সয়াবিন কিনতেও। অন্যদিকে কোম্পানিগুলো নতুন দরের
সয়াবিন বাজারে ছেড়েছে বলে দাবি করেছে।
সরকার
সম্প্রতি বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমিয়ে নতুন
দাম নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী এখন প্রতি লিটার নতুন বোতলজাত সয়াবিন তেল
১৬৩ টাকা টাকায় ও খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।
কিন্তু
শনিবার ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্রেতাদের
বাধ্য হয়ে ১৭৩ টাকা লিটার দামেই বোতলজাত সয়াবিন কিনতে হচ্ছে। ৫ লিটারের
বোতলজাত সয়াবিনের দামও ৮০০ টাকায় নামেনি। সে জন্য ৮৪৫ টাকায় তা কিনতে হচ্ছে
ক্রেতাদের। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বিক্রেতাকে অবশ্য গায়ের দামের চেয়ে কিছুটা
কম রাখতে দেখা যায়। খোলা সয়াবিন তেল এখন ১৪৯ টাকা লিটার দরে বিক্রি হওয়ার
কথা। কিন্তু বাজারে খোলা সয়াবিনের দাম ১৫০ টাকার ওপরে।
কারওয়ান
বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, নতুন দরের সয়াবিন এখনো বাজারে আসেনি। তাই নতুন
দাম কার্যকর হচ্ছে না। ডিলাররা এখনো পুরোনো দামের সয়াবিনই দিচ্ছে। দাম
সামান্য করে কমাচ্ছে। তাতে আমরা আগের থেকে কিছুটা কম দামে ক্রেতাদের সয়াবিন
দিতে পারছি।
সরকারি
সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের রোববারের বাজারদরের প্রতিবেদনও
বলছে, ভোক্তা পর্যায়ে এখনো সয়াবিন তেলের দাম কমেনি। এদিন ঢাকার বাজারে
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৫ থেকে ১৭২ টাকায় এবং ৫ লিটারের বোতল ৮৩০
টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। টিসিবির হিসাবে, লিটারপ্রতি খোলা সয়াবিন তেল
বিক্রি হচ্ছে ১৫২ থেকে ১৫৫ টাকায়। খোলা তেলের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে,
বাজার এখন তার নিচে আছে। বাজারে সরবরাহেরও সংকট নেই। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে
খোলা তেলের সরকারি দাম কার্যকর হবে।
খুচরা
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে বাড়তি দামের
মোড়ক লাগিয়ে সব সময় প্রস্তুত থাকে। কিন্তু কমানোর সময় ধীরগতিতে কমায়। এবার
নতুন দাম কার্যকরের ঘোষণা বেশ আগেভাগে দেওয়া হলেও মিল থেকে ডিলার হয়ে এখনো
নতুন দামের পণ্য আসেনি। সে জন্য ভোক্তা পর্যায়ে এখনো ভোজ্যতেলের দাম কমানোর
সুবিধা পুরোটা মিলছে না।
এদিকে
কোম্পানিগুলো আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ায় বাজারে ইতিমধ্যে সয়াবিনের দাম
কমতে শুরু করেছে বলে দাবি শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল বিপণনকারী কোম্পানি টি কে
গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহারের। তিনি বলেন, নতুন দামের সয়াবিন বাজারে ১
মার্চ থেকে ছাড়া হয়েছে। তবে শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে নতুন
দামের পণ্য সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে বাজারে নতুন
দামের সয়াবিন পৌঁছে যাবে।
রোজার
মাসে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর
কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি)
একটি বিশ্লেষণ বলছে, শুল্ক-কর কমানোর কারণে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের আমদানি
ব্যয় লিটারে ৫ টাকার মতো কমার কথা। পাম তেলে প্রভাব পড়বে প্রায় সাড়ে ৪
টাকা। তবে সরকার শুধু সয়াবিন তেলের দাম লিটার ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত
দিয়েছে। এ দফায় বাজারে পাম তেলের দাম কমেনি।