মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫,
৯ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: বেনজীরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি      আমরা এমন পৃথিবী গড়ি, যেখানে কেউ এতটা দরিদ্র থাকবে না: ড. ইউনূস      দেশের ভূখণ্ডে আরকান আর্মি, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন      শীর্ষ পর্যায়ে পদ পাচ্ছে স্বৈরাচারের দোসররা       পলাতক নেতাদের বিলাসী জীবন, অস্তিত্ব সংকটে তৃণমূল আ.লীগ      আন্দোলনে যাবে না বিএনপি      অটোচালকদের আড়ালে ছাত্রলীগ-যুবলীগের তাণ্ডব       
খোলাকাগজ স্পেশাল
ঈদের আগে পোশাক কারখানায় অস্থিরতা
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫, ৯:০৮ এএম  (ভিজিটর : ২০৪)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

ঈদের আগে অস্থিরতা বাড়ছে পোশাক শিল্পে। গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের টঙ্গী ও মৌচাক এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনায় ১০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিগত সাত মাসে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ৯৫টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এর বাইরে কয়েকটি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৬২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ হারিয়েছেন। এতে বাড়ছে শ্রমিক অসন্তোষ।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ব্যারিকেড তৈরি করে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেন শ্রমিকরা। পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এখন শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই সমস্যা সমাধান করতে পারব। 

তিনি বলেন, যেসব শ্রমিকরা আন্দোলন না করে কাজে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটি পক্ষ তাদের মারধর করেছেন বলে শুনেছি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গাজীপুরে ১০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। 

এর আগে গাজীপুরের টঙ্গীতে বকেয়া বেতন, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাসের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএসআইএস কারখানার শ্রমিকরা। এ ছাড়া শ্রমিক মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে গ্লোবাস কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এতে দুই মাহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। 

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তাদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া ওভার টাইম ও ঈদ বোনাসের টাকাও তারা পাননি। শ্রমিকরা বলেন, এ বিষয়ে আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছি, কিন্তু তারা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
এ ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গ্লোবাস কারখানার শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে আসলে শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে আশপাশে অবস্থান নেন। 

শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার মৌচাকের গ্লোবাস কারখানায় কয়েকজন শ্রমিককে ডেকে নিয়ে মারধর করে স্টাফরা। এরপর শ্রমিকরা কারখানার ভেতর আন্দোলন শুরু করেন। পরে ঝামেলা মিটে গেলেও কারখানা বন্ধ রয়েছে। এ কারণেই গতকাল বিক্ষোভ শেষে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।

গ্লোবাস কারখানার শ্রমিকরা বলেন, আমাদের কারখানার শ্রমিককে অফিসে ডেকে নিয়ে স্টাফরা মারধর করেন। সেদিন আমাদের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি ও কয়েকটি দাবি জানাই। দাবিগুলো মানলেও এরপর থেকে আর কারখানা খুলছে না এবং শ্রমিক মারধরের বিচারও করছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ।

সাত মাসে ৯৫ কারখানা বন্ধ

বিগত সাত মাসে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ৯৫টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এর বাইরে কয়েকটি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৬২ হাজার-কর্মচারী শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অধিকাংশ শ্রমিক এখনো তাদের বকেয়া মজুরি এবং সার্ভিস বেনিফিট (চাকরির অবসায়নের পর প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধা) বুঝে পাননি।

জানা গেছে, বেশির ভাগ মালিক আর্থিক সংকট ও ক্রয়াদেশ না থাকায় কারখানা বন্ধ করেছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মালিকদের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। সেগুলো বন্ধ হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী আত্মগোপনে থাকায় তাদের কারখানা রুগ্ন হয়ে পড়েছে। 

শিল্প পুলিশ জানায়, বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে গাজীপুরে রয়েছে ৫৪টি, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদীতে ২৩টি ও সাভার-আশুলিয়ায় ১৮টি। এসব কারখানায় ৬১ হাজার ৮৮১ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। বেকার শ্রমিকেরা প্রায়ই কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া পাওনার দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। 

নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গণমাধ্যমকে বলেন, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা জোগাড় করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। প্রায় সব কটি কারখানার শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বাকি আছে। বেকার হওয়া শ্রমিকদের কেউ কেউ চাকরি পাচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রামে চলে যাচ্ছেন। অনেকে বেকার থাকছেন।

বন্ধ কারখানার সংখ্যা বাড়ছে

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় প্রায় ২ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে ২৩ প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এসব শিল্পকারখানার প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। 

শিল্প পুলিশ-৪-এর কর্মকর্তারা জানান, গত সাত মাসে গ্রিন বাংলা হোম টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, এশিয়ান ফ্যালকন গার্মেন্টস, জিএল ফ্যাশন, মাস্টার টেক্সটাইল, ওয়েস্ট বেস্ট অ্যাটায়ার্স, স্টার কাটিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ২১টি কারখানা বন্ধ হয়। এসব কারখানা ছোট ও মাঝারি। আর্থিক সংকট ও পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশের অভাবে কারখানা বন্ধ হয়েছে।

এর বাইরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী গ্রুপের দুই কারখানার কয়েকটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত কারাখানা দুটিতে কাজ করতেন চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক দফা ও গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেফতারের পর আরেক দফায় দুষ্কৃতকারীদের লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে কারখানা দুটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। 

গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট নিবন্ধিত কারখানা ২ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি তৈরি পোশাক কারখানা, সংখ্যা ১ হাজার ১৫৪টি। গত আগস্টের পর জেলার ৫৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হওয়া কারখানার প্রায় সব কটিই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের। 

গাজীপুরে বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টিএমএস অ্যাপারেলস, নায়াগ্রা টেক্সটাইল, মাহমুদ জিন্স, হার্ডি টু এক্সেল, পলিকন লিমিটেড, অ্যাপারেল প্লাস, মাহমুদ জিন্স অ্যাপারেলস, টিআরজেড ও দি ডেল্টা নিট। 

গাজীপুরে বন্ধ হওয়া ৫৪ কারখানার ৪৫ হাজার ৭৩২ শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে বেক্সিমকোর ৩৩ হাজার ২৪৪ জন শ্রমিক রয়েছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের সারাবো ও কাশিমপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৪ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকার ৯ মার্চ থেকে বেক্সিমকোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু করবে। পাওনার পরিমাণ ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। 

অন্যদিকে ঢাকার নিকটবর্তী সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে শিল্পকারখানা রয়েছে ১ হাজার ৮৬৩টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা ৭৪৫টি। গত সাত মাসে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে ১৮টি তৈরি পোশাক কারখানা। এতে বেকার হয়েছেন ১০ হাজার ১২৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী।

শিল্প পুলিশ-১-এর কর্মকর্তারা জানান, গত সাত মাসে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই অঞ্চলের জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, বেস্ট ওয়ান সোয়েটার, এমএস সোয়েটার, সাভার স্পোর্টসওয়্যার, বার্ডা গ্রুপ, র‌্যামস ফ্যাশন অ্যান্ড এমব্রয়ডারি, প্রিয়াঙ্কা ফ্যাশন, জাভান টেক্স নিটওয়্যার ইত্যাদি কারখানা বন্ধ হয়।

আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ধনাইদ এলাকার জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন গত আগস্টে বন্ধ হয়। কারখানাটিতে কাজ করতেন সাড়ে চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। গত বৃহস্পতিবার কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, তালাবদ্ধ ফটকে নোটিস ঝুলছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ছয় কিস্তিতে শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্ভিস বেনিফিট দেওয়া হবে। ২০ মার্চ প্রথম কিস্তিতে সার্ভিস বেনিফিট বাবদ ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করবে কারখানা কর্তৃপক্ষ। 

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নিজেই দোসর হয়ে এসিল্যান্ডকে বলেন ফ্যাসিবাদের দোসর
খাদ্যে বিষক্রিয়ায় পাঁচ বছরের শিশু অসুস্থ, আটক ১
শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যার বিচারের দাবিতে নিজ গ্রামে বিক্ষোভ
বেনজীরের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি
গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে নিখোঁজ নৌযান শ্রমিকের লাশ উদ্ধার

সর্বাধিক পঠিত

কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সাবেক মেয়র তফাজ্জলের বিরুদ্ধে
খোলা কাগজে সংবাদ প্রকাশের ৫ ঘণ্টার মধ্যে কোটি টাকা ফেরত দিলেন মেয়র
মতলব উত্তরে আ. লীগের কার্যালয় দখল, সংবাদ সম্মেলন করে সরে দাঁড়ালেন বিএনপি
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ, গ্রেফতার অভিযুক্ত
বড় ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে হার্ট অ্যাটাকে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close