কক্সবাজারের রামু উপজেলাতে মিয়ানমার সিমান্ত থেকে গরু আনতে শিশুদের ব্যবহার করছে বলে খবর রয়েছে। কচ্ছপিয়া হাজিরপাড়া এলাকার নুরুল আলম ও মো. আলমের সিন্ডিকেট যেসব গরু আনছে তারা টাকা কম দিতে স্থানীয় কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার করছে। সীমান্ত থেকে ঝুঁকি নিয়ে গরু আনার জন্য শিশুদের বাধ্য করছে বলে জানা গেছে।
এদিকে এই মো. আলম ও নুরুল আলম অবৈধ গরু ব্যবসা করে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। স্থানীয় লোকের মুখে শোনা যায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করেছে নুরুল আলম। এসব বিষয়ে নিয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার নুরুল আলমের সঙ্গে মোবাইলে ফোন করা হলে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এদিকে সীমান্ত দিয়ে আসছে প্রচুর বার্মিজ গরু, আর এ গরু সিমান্ত পার করতে কাজ করছে আন্তর্জাতিক মাফিয়াসহ দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। এ গরু পাচারে মাফিয়ারা তাদের কৌশল হিসাবে স্থানীয় শিশুদের ব্যবহার করে দ্রুত গতিতে সীমান্ত থেকে গরু লোকালয়ে নিয়ে আসছে। আর এসব যারা করছে সবাই দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত বলে জানা গেছে। বেশিভাগ কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের হাজিরপাড়া এলাকার মো. আলম ও নুরুল আলমের কথা উঠে এসেছে।
অন্যদিকে তাদের সঙ্গে গরু যেন অন্যরা নিয়ে যেতে না পারে গরু পাচার করতে ব্যবহার করছে ভারি অস্ত্র। কক্সবাজারের কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়া এলাকা ও সীমান্তবর্তী উপজেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত থাকায় মিয়ানমার থেকে আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দিয়ে প্রতিদিন প্রবেশ করছে শত শত গরু-মহিষ। দুই উপজেলায় এ পাচারচক্র গড়ে গত এক বছরে অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন অনেকে। এ চক্র এতটাই শক্তিশালী যে, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরও হামলা চালাতে পিছপা হয় না।
এদিকে অপরাধমূলক কাজে শিশুদের ব্যবহার নতুন কিছু না হলেও সিমান্ত এলাকায় শিশুদের ব্যবহারের ফলে তাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে শিশু-কিশোরদের দিয়ে নানা অপরাধ করানোর অভিযোগ রয়েছে। এবার ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত থেকে চোরাই গরু আনতে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু-কিশোরদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কচ্ছপিয়ার এক শিক্ষক জানান, এই এলাকায় ১০ বছরের বাচ্চাদেরও গরু পাচারের জন্য ব্যবহার করছে। গরু পাচারে জড়িয়ে যাওয়ার ফলে বাচ্চাদের হাতে টাকা আসার কারণে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে এবং স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে। যার ফলে স্কুলে ছাত্র সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
কক্সবাজারের রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রভাবশালী গরু চোরাকারবারি চক্র টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাঠে নামিয়েছে শিশুদের। এতে করে শিশু-কিশোররা স্কুলগামী না হয়ে ঝরে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সরেজমিন রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিশেষ ইনজেকশনের প্রভাবে দ্রুতগতিতে দৌড়াচ্ছে গরু। আর পেছনে রশি ধরে দৌড়াচ্ছে শিশু-কিশোররা। যাদের অধিকাংশের বয়স ১৮ বছরের মধ্যে। এ চিত্রগুলো বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার। প্রতিটি গরু গন্তব্যে পৌঁছে দিলে ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা কামাই। মাত্র ১-২ ঘণ্টার শ্রম। এমন প্রলোভন দেখিয়ে শিশু-কিশোরদের জড়ানো হচ্ছে চোরাই গরু পাচারে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বয়স্ক শ্রমিকদের চেয়েও শিশু-কিশোরদের কম টাকা, সময় ও নিরাপদ মনে করছেন চোরাকারবারিরা। শিশু-কিশোরদের ব্যবহারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়ানো সহজ। এ অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পেছনে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি স্থানীয়দের।
সচেতন নাগরিকদের মতে, সীমান্তের শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া না গেলে অল্প বয়সে অর্থের লোভ পেয়ে আরো বড় ধরনের চোরাচালানের নেশায় আসক্ত হয়ে নষ্ট হবে শিশুর ভবিষ্যৎ।
অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে শত শত দরিদ্র পরিবারের শিশু-কিশোরদের জড়ানো হচ্ছে গরু পাচারে। এসব শিশুর মধ্যে কেউ মিয়ানমার সীমান্তে যাচ্ছে গরু আনতে, আবার কেউ রামুর হাজিরপাড়া, মৌলভীরকাটা, চাকমারকাটা, ডাক্তারকাটা, ফাক্রিকাটা, ঢাকভাঙা ও নাইক্ষ্যংছড়ির রূপনগর সড়ক ব্যবহার করে চোরাই গরু পৌঁছে দিচ্ছে গন্তব্যে। সরেজমিন অনুসন্ধানকালে এসব শিশু ক্যামেরা দেখলেই দৌঁড়ে পালিয়ে যায়, কেউ মুখ ঢেকে সটকে পড়ে। তবে শিশুরা গরু পাচারে সম্পৃক্ত এমন তথ্য জানা নেই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, দিন দিন শিশুরা এমনকাজে জড়িয়ে পড়ছে তা অবগত আছি। উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজে সচেতনতামূলক সভা করা হচ্ছে। মাসিক সভায় তা নিয়ে আরোচনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ি থানা গরুসহকারে কিছু শিশু ধরা পড়েছে। আমরা কাজ করছি, আশা করছি শিশুদের এই কাজ থেকে দূরে আনতে পারব।
কেকে/এআর