এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের কারণে অনেকই হিমশিম খাচ্ছেন ফরম ফিলাপ করতে। কলেজ নির্ধারিত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ফরম ফিলাপ বাবদ অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ধারদেনা করে ফরম ফিলাপের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের জন্য শিক্ষা বোর্ড ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের জন্য ২ হাজার ২২৫ টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ৭৮৫ টাকা নির্ধারণ করলেও সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার ফি গ্রহণ করা হয় অগ্রণী ব্যাংকের সাটুরিয়া শাখায়। চলতি এইসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে সাটুরিয়া কলেজে টেষ্ট পরীক্ষায় সকল বিষয়ে কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৫ হাজার ৪ শত ১৫ টাকা এবং মানবিক ও ব্যাবসা শিক্ষা বিভাগে ৫ হাজার ১৫ টাকা নির্ধারণ করেছেন। আর প্রতি বিষয়ে ফেল করলে আর ২০০ টাকা বেশি জমা দিতে হবে। সেই হিসেব করেই শিক্ষার্থীরা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রশিদ দেখিয়ে কলেজে গিয়ে ফরম পূরন করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী এক বিষয়ে অকৃতকার্য কলেজ থেকে সরবরাহকৃত জমা রশিদের (রশিদের সিরিয়াল নম্বর ৫৫৬৫২) মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক সাটুরিয়া শাখায় ৬ মার্চ ২০২৫ জমা দিয়েছেন, ৫ হাজার ৬ শত ১৫ টাকা, ৩৫৩৪২ নম্বর রশিদের মাধ্যমে একই দিনে ব্যাবশায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ৫ হাজার ১৫ টাকা এবং মানবিক শাখা থেকে ৩৫৫২১ নম্বর রশিদ দিয়ে ৭ হাজার ১৫ টাকা জমা দিয়েছেন।
সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজের অধ্যক্ষ জানান, গত ১০ মার্চ ছিল নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের নির্ধারিত শেষ দিন। ১০ মার্চ পর্যন্ত মানবিক বিভাগে ২৯৭, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৬৭ এবং বিজ্ঞান বিভাগে ৫৮ জনসহ ৪ শত ২২ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছেন। যারা গত বছর বোর্ড পরীক্ষায় দুই এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন, তাদের ফরম পূরণ বিলম্ব ফি দিয়ে ১২ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
একই উপজেলার দরগ্রাম ভেকু মেমুরিয়াল কলেজের ফরম পূরণে বোর্ড নিধারিত টাকায় ফরম পূরণ করতে পারলেও সাটুরিয় কলেজ বোর্ড ফি’র চাইতেও ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি নেওয়াতে অবিভাবকরা ফুসে উঠেছেন।
১০ মার্চ পর্যন্ত ৪২২ জন ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে সর্বনিম্ন ৫ হাজার ১৫ টাকা নিয়েছেন। সেই হিসেবে বিজ্ঞান বিভাগে ৫৮ জন শিক্ষার্থীদের বোর্ড নির্ধারিত ২ হাজার ২ শত ৩০ টাকা বেশি নিয়েছেন। সে হিসেবে শুধু বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অতিরিক্ত ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৩ শত ৪০ টাকা নিয়েছেন। আর মানবিক ও ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগে মোট শিক্ষার্থী ৩ শত ৬৪ জনের নিকট থেকে বোর্ড নির্ধারিত থেকেও ২ হাজার ৭ শত ৯০ টাকা বেশি নিয়েছেন। এ দুই বিভাগ থেকে ১০ লক্ষ ১৫ হাজার ৫ শত ৬০ টাকা বেশি নিয়েছেন।
এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেকে অতিরিক্ত ফি দিয়েই ফরম পূরণ করেছেন।
একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানায়, সরকার নির্ধারিত ফি জোগাড় করতেই রীতিমতো তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে অতিরিক্ত ফি আদায় করাটা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা কোচিং ফিসহ পাচ হাজার টাকা আদায় করেছি। শিক্ষার্থীরা কোচিং অংশ নিলে পরে তাদের এক হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হবে। ৫ হাজার টাকা করে নিলেও এতে কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের কোনো ধরনের কষ্ট হয়নি।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, এইচএসি ফরম পূরণের জন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছেন বলে আমার জানা নেই। কেউ যদি অতিরিক্ত ফি আদায় করে থাকে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়ে অধ্যক্ষকে আমার দফতরে ডেকে পাঠিয়েছি। সে কী বলে শুনি, আর লিখিত অভিযোগ পেলে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এএম