সাদা আঁশ, কালো চোখ, আর লম্বাটে গড়ন। দেখতে অনেকটা মৃগেল মাছের মতো হলেও এটি আসলে দেশীয় প্রজাতির গোটালি মাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Crossocheilus latius। অনেকের কাছে এটি ‘কালাবাটা’ নামেও পরিচিত।
একসময় সুস্বাদু এই মাছ দেশের বিভিন্ন নদী, পাহাড়ি ঝর্ণা ও মিঠাপানির জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। এছাড়াও তিস্তা, আত্রাই, সোমেশ্বরী, কংস, পিয়াইন, পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে এ মাছ সহজলভ্য ছিল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তন, নদী দূষণ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, খরার মৌসুমে জলাশয় শুকিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত মাছ শিকার এবং নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যবহারের কারণে অন্যান্য দেশীয় ছোট মাছের মতো গোটালি মাছের সংখ্যাও দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) মাছটিকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
তবে এই সুস্বাদু মাছকে বাংলার ভোজন রসিকদের পাতেও ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর গবেষকরা। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো তারা গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএফআরআইয়ের পাবলিকেশন কর্মকর্তা এস. এম. শরীফুল ইসলাম।
জানা গেছে, গোটালি মাছ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০২৩ সালে বিএফআরআইয়ের স্বাদুপানি উপকেন্দ্র, সৈয়দপুরের বিজ্ঞানীরা তিস্তা নদীর ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকা থেকে মাছটি সংগ্রহ করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন। দীর্ঘ গবেষণার পর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়।
এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন বিএফআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আজহার আলী। সহকারী গবেষক হিসেবে ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সোনিয়া শারমীন, মালিহা হোসেন মৌ এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্রীবাস কুমার সাহা।
গবেষকরা জানিয়েছেন, গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে এই মাছের চাষ সম্প্রসারিত করা সম্ভব হবে, যা দেশের মৎস্য খাতে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মৎস্যচাষিদের জন্য এটি একটি আশার বার্তা। এই উদ্যোগ গোটালি মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করবে এবং বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে মৎস্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
কেকে/ এমএস