বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময়ে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ ও চাটুকার চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. তারিক মাহমুদ হোসেন বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময় দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠলেও স্থানীয় এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের সহযোগিতায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তৎকালীন সময়ে ভুক্তভোগীরা তার বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের জন্য চিঠি দেওয়া হলেও তা ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তিনি মাঠ পর্যায় ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারিক মাহমুদ হোসেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবি সিদ্দিকের ভাতিজা। তার স্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী মাইরিন সুলতানা। তিনি মতলব পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র। তার স্ত্রীর সাথে রয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পর্ক। ওই সম্পর্কের প্রভাবের কারণে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তারেক মাহমুদ এখনও চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছে।
সূত্র থেকে জানা যায়, মো. তারিক মাহমুদ হোসেন প্রায় ৮ বছর যাবত মতলব উত্তর উপজেলায় যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। যোগদানের পর থেকেই তিনি ব্যাপক দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তার বেতন প্রায় ৪০-৫০ হাজার হলেও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় বেকারত্ব দূরিকরণ প্রকল্পের ন্যাশনাল সার্ভিস এর অনেক প্রশিক্ষনার্থীদের প্রশিক্ষণ ভাতা এবং চাকরির টাকা আত্মসাতে রয়েছে অভিযোগ। এছাড়াও ইচ্ছামতো অফিস করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি সপ্তাহে এক দিন বা দুদিন মোটরসাইকেল নিয়ে এসে কিছুক্ষণ অফিস করে চলে যান নিজ বাড়িতে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ধারিত সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দিলেও তা মানতে নারাজ এই কর্মকর্তা। নিজের ইচ্ছেমতো কার্য পরিচালনা করেন তারিক মাহমুদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারি প্রশ্ন তুলে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরও তার দোসর ও দুর্নীতিবাজ তারেক মাহমুদ হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও কীভাবে নির্বিঘ্নে রয়ে গেছেন? কোন খুঁটির জোরে বহাল তবিয়তে আছেন? তারা বলেন, উপজেলায় যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উচিৎ, তার দুর্নীতির অভিযোগ ও বিপুল সম্পদের হিসাব তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ছেংগারচর পৌরসভার আদুরভিটি গ্রামের নুর মোহাম্মদ জানান, আমি প্রবাসে ছিলাম, ঐখানে চাকরি না পেয়ে চলে এসেছি দেশে। কোন উপায় না পেয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছি। পরিকল্পনা করেছি যুব উন্নয়ন অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে লোন নিয়ে একটি মুরগির খামার করবো। সেইজন্য গতকাল সোমবার (১০ মার্চ) ১১টার দিকে উপজেলায় আসি, এসে দেখি যুব উন্নয়ন অফিসারের অফিসকক্ষ তালা দেওয়া। পাশের রুমে জিজ্ঞেস করলে আরা জানান স্যার আসতে দেরি হবে। তারপর আমি ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করে চলে এসেছি।
উপজেলার তালতলী গ্রামের জুম্মান হোসেন জানান, ন্যাশনাল সার্ভিসের প্রশিক্ষণ নিয়ে দুই বছরের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখানে নিয়মিত আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে তিনি বলেছেন আমি বিএনপি জামায়াতের লোক, এই কারণে তিনি আমাকে বেতন উত্তোলন করতে দেননি। তখন আমি তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করলেও কোন কাজে আসেনি।
ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের শহিদ ইমরান জানান, ন্যাশনাল সার্ভিসের উপজেলায় তিন মাস নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রশিক্ষণের শেষে তারেক মাহমুদ আমার কাছে প্রশিক্ষণের অর্ধেক টাকা চেয়েছিল। আমি রাজি না হওয়ায় প্রশিক্ষণের ভাতা দেয় নাই। তিনি ওই টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তারিক মাহমুদ হোসেন জানান, আপনারা সাংবাদিকরা আমাকে ডিস্টার্ব করছেন কেন? আমি আপনাদের কাছে আমার দপ্তরের বিষয়ে কোন কথা বলতে পারব না। আপনাদের নিউজে আমার কিছুই হবে না। আমার বিষয়ে দেখবে আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা।
চাঁদপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইব্রাহিম মিয়া জানান, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ধারিত সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা মেনে চাকরি করতে হয়। কেউ না মানলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার নামে যেসব অভিযোগ শুনেছি, এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।
কেকে/এজে