ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাগুরায় ধর্ষণের শিকার ৮ বছর বয়সি সেই শিশুটি মারা গেছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
আইএসপিআর জানিয়েছে, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
আরো জানানো হয়, শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে।
এর আগে মাগুরা পৌর এলাকায় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত বুধবার (৫ মার্চ) দিবাগত রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। বৃহস্পতিবার অচেতন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এখন সে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় গতকাল শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় শিশুর বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়। চার আসামিকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আসামিদের আদালতে নেওয়া যায়নি, শিশুধর্ষণের ঘটনায় মানুষের বিক্ষোভের কারণে গতকাল বন্ধ হয়ে যায় আদালতের কার্যক্রম। ফলে গ্রেফতার চার আসামিকে আদালতে নেওয়া সম্ভব হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করতে চাইলেও আদালত বন্ধ থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘চার আসামিকেই আদালতে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আন্দোলন চলায় আদালতে নিয়মিত কার্যক্রম চলেনি। সাত দিনের রিমান্ড আবেদন লিখে রেখেছিলাম। আদালত বসেনি বলে তা আর তোলা সম্ভব হয়নি।’
গতকাল সকালে মাগুরা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও নারীরা অংশ নেন। বেলা ১১টা থেকে মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা অপরাধীদের বিচারের দাবি জানান।
বিক্ষোভকারীদের অন্যতম সংগঠক সাদিয়া ইয়াসমিন জানান, ধর্ষকদের বিচার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করতে হবে। বিলম্ব করলে তাদের কোনো শাস্তি নাও হতে পারে।’
বেলা ১টার পর থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর একটি দল আদালত প্রাঙ্গণে ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলার পর ৩টায় বিক্ষোভকারীরা আদালত প্রাঙ্গণ ছেড়ে শহরের ভায়নার মোড়ে অবস্থান নেন। তাঁরা বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভায়না মোড় অবরোধ করে রাখায় মাগুরা ঢাকা-খুলনা-ঝিনাইদহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কেকে/এআর