সাতক্ষীরায় লবণ পানির বাগদা ও গলদা চিংড়ি ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এসব মাছের মধ্যে মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয় বছরে দেড় লক্ষাধিক টন। যার ৮০ শতাংশই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
চার থেকে পাঁচ বছর যাবত সাতক্ষীরাতে পুটি শুটকি করে তা ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে। জেলার বিনেরপোতা এলাকার বেতনা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে পুটি মাছ শুটকি পল্লী। প্রতিদিন প্রচুর পরিমান পুটি মাছ সংগ্রহ করার পর তা বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুটকি করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ও চট্টগ্রামে সরবরাহের পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে ভারতের বাজারে।
অন্যদিকে সাতক্ষীরার পুটি ও অন্যান্য মিঠাপানির মাছ শুটকি উৎপাদন বাড়াতে জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শুটকি ব্যবসায়ীদের সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। এদিকে সাতক্ষীরার পুটি মাছ শুটকি ঘিরে অনেক নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার বেতনা নদীর পাড়ে শুটকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স প্রান্বিত ন্টাপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী প্রশান্ত কুমার জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিঠাপানির পুটি মাছ সংগ্রহ করার পর তাতে লবণ মিশিয়ে শুটকি করেন। এরপর বিভিন্ন ভাবে বাচাই করে তা উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুর, রংপুর ও নীলফামারি এবং চট্টগ্রামের রপ্তানিজাত ব্যবসায়ীদের নিকট সরবরাহ করেন। প্রতি কেজি পুটি মাছ শুটকি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে এসব পুটি শুটকি ভারতের বাজারে রপ্তানি হয় বলে জানান শুটকি উৎপাদনকারী প্রশান্ত কুমার। বছরে ৪০০ থেকে ৪৫০ মণ শুটকি উৎপাদন করেন বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরার বল্লী গ্রামের মিঠাপানির মাছ শুটকি ব্যবসায়ী সাধন কুমার জানান, পুটি মাছের পাশাপাশি সিলভারকার্প, মৃগেল ও তেলাপোয়া মাছ শুটকি করে বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কম মুল্যে এসব মাছ ক্রয় করার পর তা শুকিয়ে শুটকি তৈরী করেন। প্রতি বছর ৩০০ থেকে ৩৫০ মণ শুটকি উৎপাদন করেন। এর পর এসব শুটকি চট্রোগ্রামের বিভিন্ন শুটকি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। প্রভার ভেদে প্রতি মন শুটকি ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন।
তিনি আরো বলেন, তার শুটকি ব্যবসাকে কেন্দ্র এলাকার দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। একেকজন নারী ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন শুটকি উৎপাদনের সাথে জড়িয়ে।
সৈয়দপুর শুটকি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাহরিয়ার এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. সাহাবুদ্দিন জানান, ভারতের বাজারে পুটি মাছ শুটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে ৪৫০ থেকে ৫০০ টন পুটি শুটকি সংগ্রহ করেন। এর পর তা ভারতের বাজারে সরবরাহ করেন।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব জানান, শুটকি উৎপাদনে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে সাতক্ষীরাতে। এখানে বিপুল পরিমান মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয়। কিন্তু ভরা উৎপাদন মৌসুমে অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্বত এসব মাছের দাম থাকে তুলনামুলক অনেক কম থাকে। ফলে বছরের এ সময় এসব মাছ যদি শুটকি করে বাজারজাত করা হয় তাহলে অনেক লাভবান হতে পারবে চাষী ও ব্যবসায়ী। তিবি বলেন, জেলার কিছু এলাকাতে পুটি মাছ শুটকি করে তা দেশের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। যা এ জেলার জন্য খুবই সম্ভাবনাময় বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জি.ম সেলিম জানান, মাছ চাষে খুবই সমৃদ্ধ জেলা সাতক্ষীরা। রপ্তানিজাত বাগদা ও গলদার পাশাপাশি বছরে বিপুল পরিমান মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হচ্ছে এখানে। পুটি মাছ শুটকির বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, গেল ৪/৫ বছর যাবত জেলায় কিছু ব্যবসায়ী বিচ্ছিন্নভাবে পুটিসহ মিঠাপানির মাছ শুটকি করে তা দেশের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি ভারতে রপ্তানিও করছেন। তিনি বলেন, শুধু পুটি নয় অন্যান্য মিঠাপানির মাছও শুটকির জন্য খুবই সম্ভাবনা এখানে। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত প্রচুর পরিমান মিঠাপানির মাছ বাজারে উঠে। যা বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক সাশ্রয় মুলে বিক্রি হয়। কিন্তু ওই সময় এসব মাছ শুটকি করে বিক্রি করতে পারলে ব্যবসায়ীরা অনেক লাভবান হতে পারে। তিনি আরো বলেন, শুটকি উৎপাদনে এগিয়ে আসার জন্য মাছ ব্যবসায়ীদের নানাভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের সরকারী ভাবে অন্যান্য সহযোগিতাও করা হবে।
ইব্রাহিম খলিল
কেকে/এআর