বোস-আইনাইস্টাইন তত্ত্বের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ এবং বোস সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড স্টাডি এন্ড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল সাইন্সেস-এর যৌথ উদ্যোগে ৭-১০ নভেম্বর 'Centennial Celebration of Bose-Einstein Statistics: A Legacy of Dhaka' শীর্ষক ৪-দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজিত হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসসহ অন্তত ৩০ জন বিদেশি স্কলার।
আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আয়োজনের কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশা।
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, বোস-আইনাইস্টাইন তত্ত্বের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ৪দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আগামী ০৭ নভেম্বর মিন্টু রোডস্থ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উদ্ভোদনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। উদ্বোধনী পর্ব শেষে আগামী ৮-১০ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সায়েন্টিফিক সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশবরেণ্য স্কলাররা ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, হংকং, জাপান, জার্মান, ব্রাজিল, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩০ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্কলার সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।
এই আয়োজনের তাৎপর্য সম্পর্কে অধ্যাপক ড কামরুল হাসান মামুন বলেন, বিজ্ঞানী সত্যেন বোসের অবিস্মরণীয় কৃতিত্ব বোস-আইন্সটাইন তত্ত্বের আবিষ্কার, যা পরবর্তীতে কোয়ান্টাম স্ট্যাটিস্টিক্সের জন্ম দেয়। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এই তত্ত্বের জন্ম কার্জন হলে হয়েছে। এই ঐতিহাসিক তথ্য আমাদের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে। এই মাটিতে বসেও বিশ্ববরেণ্য কাজ করা সম্ভব, আসন্ন আয়োজন শিক্ষার্থীদেরকে এমন শিক্ষাই দিবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিজ্ঞানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানী সত্যেনদ্রনাথ বসু। তিনিই বিশ্ব দরবারে সত্যেন বোস নামে পরিচিত।
১৯২১ সালের ১৫ই জুন নিয়োগ পাওয়ার ৩ বছরের মধ্যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের কার্জন হলে বসে পৃথিবীর অন্যতম যুগান্তকারী কাজটি করে ফেলেন।
এই কাজের শুরু ১৮৫৯ সালে Gustav Kirchhoff এর ব্ল্যাকবডি আইডিয়ার প্রস্তাবের মাধ্যমে। ঠিক তখন থেকে বিশ্বের বরেণ্য পদার্থবিদদের গবেষণা লব্ধ নানা তত্ত্বীয় মডেলের মাধ্যমে পরিমার্জিত হতে ১৯০০ সালে ম্যাক্স প্ল্যাংক একটি ফর্মুলা প্রস্তাব করেন যার মাধ্যমে ৪০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা যা খুজতেছিল সেইরকম একটি ফর্মুলা পেয়ে যান। কিন্তু সমস্যা থেকে যায় এই ফর্মুলার কোন যুৎসই তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা অধরাই থেকে যায়। সেই সময় ইউরোপ বিশেষ করে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার সেরা সব বিজ্ঞানী যেমন আইনস্টাইন, দেবাই, এহরেনফেস্ট, রেলেই, প্ল্যাংক নিজেসহ আরো অনেকেই চেষ্টা করছিলেন।
তারা যখন চেষ্টা করছিল ঠিক তখন সত্যেন বোস ঢাকার কার্জন হলে বসে একা একা একই কাজ করছিলেন। তিনি তখন এই বিষয়টিই ক্লাসে পড়াচ্ছিলেন। শ্রেণী কক্ষে পড়াতে গিয়ে সত্যেন বোস সেই ফর্মুলার মধ্যে সমস্যা খুঁজে পান এবং সেটির সমাধানে লেগে পড়েন এবং সফল হন। সেই কাজটির উপর গবেষণা প্রবন্ধটি প্রথমে তিনি ফিলোসোফিক্যাল ম্যাগাজিন জার্নালে প্রকাশের জন্য পাঠান যা রিভিউয়ারের কাছে না পাঠিয়ে এডিটোরিয়াল ডেস্ক থেকেই আউটরাইট রিজেক্টেড হয়। সংক্ষুব্ধ বোস অনন্যোপায় হয়ে প্রবন্ধটি মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাছে পাঠান। আইনস্টাইনতো তার প্রবন্ধটি দেখে চমৎকৃত হন এবং এহরেনফেস্টকে জানান আমরা যা পারিনি তা ভারতীয় পদার্থবিদ ঢাকায় বসে করে ফেলছেন।
আইনাস্টাইন সেই কাজটি সত্যেন বোসের অনুরোধে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে জার্মান জার্নালে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। সেই আর্টিকেলের শেষে একটা নোটও লিখে দিয়েছিলেন যে কাজটি গুরুত্বপূর্ণ এবং খুব শিঘ্রই আইনস্টাইন নিজে এর ওপর কাজ করবেন। সেই কাজটিই জুলাই মাসের ২ তারিখ প্রকাশিত হয়। আর এর মাধ্যমেই সত্যেন বোসের নাম আজীবনের জন্য বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে জড়িয়ে যায়। আর এই কাজটির মাধ্যমেই কোয়ান্টাম স্টাটিস্টিক্সের জন্মস্থান হিসাবে কার্জন হল তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের নাম জড়িয়ে যায়।
কেকে/এজে