গর্ভাবস্থার লক্ষণ দেখে তা নিশ্চিত হতে এক নারীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাফির জন্য পাঠান চিকিৎসক। পরীক্ষায় রিপোর্ট আসে তিনি গর্ভবতীই হননি। এরপর ১২ দিনের ব্যবধানে ফের আরেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টে আসে তিনি সাড়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ডা. জেরিন নামে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। তিনি ‘টপ কেয়ার ডায়াগনস্টিক’ সেন্টার নামক একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আলট্রাসনোগ্রাফি করান। ভুক্তভোগী নারীর নাম পারভীন। তিনি গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের বর্ধনপাড়া গ্রামের আব্দুল হোসেনের স্ত্রী।
ভুক্তভোগী নারীর দেওয়া আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই নারী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে উপসহকারী মেডিকেল অফিসার মিতিলা তাকে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষার জন্য টপ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠায়। পরীক্ষার পর ডা. জেরিন নামে একজন তাকে নিশ্চিত করে- তিনি গর্ভবতীই হননি। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে গত ১১ মার্চ ‘নিউ প্রান্ত ডিজিটাল ল্যাব’ নামে আরেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাফি করান ওই নারী। এতে ধরা পড়ে সাড়ে চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি। এদিকে আগের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট ভুয়া শুনেই ক্ষিপ্ত হন ওই নারী।
ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে যেই অন্যায় হয়েছে আমি এর সঠিক বিচার চাই। কারণ, আজকে আমার সাথে হয়েছে, আরেকদিন আরেকজনের সাথে হবে। এদের উপযুক্ত শাস্তি না হলে এরা পার পেয়ে যাবে।’ তবে আইনি জটিলতার ভয়ে তিনি কোন লিখিত অভিযোগ দিতে রাজি হননি।
এদিকে কথা হয় ওই নারীকে আলট্রাসনোগ্রাফির জন্য পাঠানো ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর উপসহকারী মেডিকেল অফিসার সেই মিতিলার সঙ্গে। মিতিলা বলেন, ‘অনেকদিন হয়ে গেছে তো আমার ঠিক মনে নাই। সম্ভবত লক্ষণ দেখেই পাঠানো হয়েছিল। তাছাড়া কোন মহিলার দুই মাস পিরিয়ড বন্ধ থাকলে আমরা সাধারণত আলট্রাসনোগ্রাফির জন্য পাঠাই।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. জেরিন বলেন, ‘আপনাদের কাজ হচ্ছে মানুষকে খোঁচানো। আপনি টপ কেয়ারে গিয়ে কথা বলেন। আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না।’
এদিকে রিপোর্ট দেখানোর পর টপ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মো. ওয়াজিন ভুল স্বীকার করে বলেন, এটা তো মারাত্মক ভুল করেছে চিকিৎসক। একটা রিপোর্ট আকাশপাতাল ব্যবধান কীভাবে হয়। ভুল তো মানুষের-ই হয়, এইবারের মতো ক্ষমা করে দেন। আমি চিকিৎসককে কড়া ভাষায় সতর্ক করছি।’
তিনি আরো বলেন, তিনি কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক নয়। তবে এমবিবিএস এই বিষয়ে পারদর্শী। হাসপাতালের সামনে আরো কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওনি আলট্রাসনোগ্রাফি করান। আমার এখানে দীর্ঘদিন ধরে এই দায়িত্বে আছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া তাসনিম মুনমুনের নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ দেখায়। পরে এ প্রসঙ্গে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. লিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, যদি এমনটি হয়ে থাকে ওই চিকিৎসক অনেক বড় অপরাধ করেছে । কেননা, গর্ভাবস্থায় একটু এদিক-সেদিক হলেই বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। আমি বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলছি।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, আমি টিএইচওর সাথে কথা বলছি বিষয়টি নিয়ে। এরপর যে ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা-ই নিব।
কেকে/এজ